খৎনা: এ পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকা এক ঐতিহাসিক অভিশাপ
Odd বাংলা ডেস্ক: জাতিসংঘের হিসাবে, বিশ্বের প্রতিটি ২০জন মেয়ে শিশু বা নারীর মধ্যে একজনের খৎনা করা হয়ে থাকে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় এফিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। বর্তমান বিশ্বে এরকম বিশ কোটি নারী রয়েছেন, যাদের আংশিক অথবা পুরো খৎনা অর্থাৎ যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে।
নারীদের এরকম যৌনাঙ্গ কর্তন বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিবছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দিবস হিসাবে পালন করে জাতিসংঘ।
অনেক নারী ও মেয়ের শিশু অবস্থাতেই এরকম খৎনা করা হয়, এমনকি শিশুদেরও। অনেক সময় বয়ঃসন্ধির সময় এটি করা হয়। কিন্তু এর ফলে নারীদের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে তাদের সারাজীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয়।
নারীদের খৎনা আসলে কী?
নারীদের খৎনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা। অনেক সময় ভগাঙ্কুর এর পাশের চামড়া কেটে ফেলা হয়। এ ধরণের কাজে নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে থাকে, যার স্বাস্থ্যগত কোন উপকারিতা নেই। নারীদের জন্য উদ্বেগ এবং তাদের পরবর্তী সম্পর্কের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে এই বিষয়টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা জোর করে এটি করা হয়ে থাকে।
নারীদের খৎনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা। অনেক সময় ভগাঙ্কুর এর পাশের চামড়া কেটে ফেলা হয়। এ ধরণের কাজে নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে থাকে, যার স্বাস্থ্যগত কোন উপকারিতা নেই। নারীদের জন্য উদ্বেগ এবং তাদের পরবর্তী সম্পর্কের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে এই বিষয়টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা জোর করে এটি করা হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, ‘চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতীত এমন যেকোনো প্রক্রিয়া, যা নারীদের যৌনাঙ্গের ক্ষতি করে থাকে।’
এরকম খৎনার শিকার একজন নারী বিশারা বলছেন, আরো চারটি মেয়ের সঙ্গে খৎনা করা হয়েছিল। প্রথমে আমার চোখ বেধে ফেলা হয়। এরপর আমার দুই হাত পেছনে শক্ত করে বাধা হয়। আমার দুই পা দুইদিকে মেলে ধরে যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া দুইটি শক্ত করে পিন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, কয়েক মিনিট পর আমি তীক্ষ্ণ একটি ব্যথা অনুভব করলাম। আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর্তনাদ করলাম, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না। আমি লাথি মেরে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দানবের মতো কেউ আমার পা চেপে ধরে রাখল।
তিনি বলছেন, এটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। পরে অন্য সব মেয়েদেরও একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ছিল শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি ভেষজ ওষুধ। একটা ছাগলের মতো করে তারা আমার দুই পা টেনে ধরে ক্ষত স্থানে সেই ভেজষ ওষুধ মাখিয়ে দিল। এরপর বলতে লাগলো, পরের মেয়েটিকে নিয়ে আসো।
যদিও মেয়েদের এরকম খৎনা অনেক দেশেই বেআইনি, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশি এটি করা হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যেও এটি প্রচলিত আছে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে চার ধরণের খৎনা
১. ভগাঙ্কুর এবং আশেপাশের চামড়ার পুরোটাই বা আংশিক কেটে ফেলা
২. ভগাঙ্কুর, যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের চামড়া অপসারণ করে ফেলা
৩. যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের অংশের চামড়ার অংশটি কেটে ফেলে পুন:স্থাপন করা।
৪. ওপরের তিনটির বাইরে ভগাঙ্কুরের বা যৌনাঙ্গের সবরকম কাটা ছেড়া বা ক্ষত তৈরি করা
১. ভগাঙ্কুর এবং আশেপাশের চামড়ার পুরোটাই বা আংশিক কেটে ফেলা
২. ভগাঙ্কুর, যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের চামড়া অপসারণ করে ফেলা
৩. যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের অংশের চামড়ার অংশটি কেটে ফেলে পুন:স্থাপন করা।
৪. ওপরের তিনটির বাইরে ভগাঙ্কুরের বা যৌনাঙ্গের সবরকম কাটা ছেড়া বা ক্ষত তৈরি করা
যৌনাঙ্গের বাইরের এবং ভেতরের চামড়া কেটে এমনভাবে পুনঃ স্থাপন করা হয়, যাতে শুধুমাত্র মূত্র ত্যাগের জন্য ছোট একটি ফাঁকা থাকে। এতে অনেক সময় নারীদের নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় এই ফাঁকা জায়গাটি এতো ছোট হয়ে থাকে যে, যৌন মিলনের জন্য পরবর্তীতে আবার কেটে বড় করতে হয়। অনেক সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কেন এটি করা হয়?
নারীদের খৎনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।
নারীদের খৎনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।
অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খৎনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়। যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খৎনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।
কোথায় এ ধরণের রীতি চালু আছে?
বর্তমানে আফ্রিকার অনেক এলাকায়, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে এই রীতি চালু আছে। তবে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অভিবাসী সমাজে, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন গোষ্ঠীর ভিতর এই প্রবণতা রয়েছে।
বর্তমানে আফ্রিকার অনেক এলাকায়, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে এই রীতি চালু আছে। তবে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু অভিবাসী সমাজে, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার কোন কোন গোষ্ঠীর ভিতর এই প্রবণতা রয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এই রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এটি নিষিদ্ধ। এমনটি যুক্তরাজ্যে নারীদের খৎনা বেআইনি, তবে মেয়ে শিশুদের ওপর এরকম খৎনা করার প্রবণতা বাড়ছে। এসব শিশুরা স্কুলে না পড়ায় বা যথেষ্ট বড় না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সহজে সনাক্ত করতে পারেন না।
অনেকে দেশে বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাজা হতে পারে, এরকম আশঙ্কা থেকে ভুক্তভোগীরা আর অভিযোগ সামনে আনেন না। কিছুদিন আগে উগান্ডা থেকে আসা একজন মা প্রথম ব্যক্তি হিসাবে এ ধরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
Post a Comment