হিজড়ে বা বৃহন্নলা কত রকমের হয়? কীভাবে তার প্রকৃতি নির্ধারন করা হয় জানেন?


Odd বাংলা ডেস্ক: বার্থোলিনের গ্রন্থি (Bartholin’s glands)। একে অনেক সময় বৃহৎ ভেসটিবিউলার গ্রন্থি (greater vestibular glands) বলা হয়। দুটি গ্রন্থি নারীর যোনির প্রবেশদ্বারের কাছে একটু নীচে ডানে ও বামে থাকে। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে এই গ্রন্থি দুটি সম্পর্কে প্রথম ড্যানিশ শরীরবিদ ক্যাসপার বার্থোলিন দ্য ইয়াঙ্গার (১৬৫৫-১৭৩৮) এদের বর্ণনা দেন। এই বিজ্ঞানীর নামে এই গ্রন্থদ্বয়ের নামকরণ করা হয়। গ্রাফেনবার্গ স্পট বা জি-স্পট : হচ্ছে যোনিপথের একটি ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। এই অংশটি মূত্রথলির নীচে অবস্থিত। এর নামকরণ করা হয়েছে জার্মান স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আর্নেস্ট গ্রাফেনবার্গের নামানুসারে। যোনিপথের শুরু হতে ১-৩ ইঞ্চির মাঝেই এর অবস্থান। সঙ্গমকালে যোনিমুখের ১-৩ ইঞ্চির ভিতরে নারী সবচেয়ে বেশি পুলক অনুভব করে। এই অধিক সংবেদনশীল অংশকেই জি-স্পট বলা হয়।
এ তো গেল নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের বিবরণ। কিন্তু যাঁরা নারী-পুরুষ কোনোটাই নয়, তাঁদের যৌনাঙ্গের পরিচয় কী ? হিজড়ে বা হিজড়া ? যৌনাঙ্গের গঠন-বিচারে কারা হিজড়ে ? হিজড়ে সাধারণত তিনরকম – (১) প্রকৃত হিজড়ে ( True Hermaphrodite), (২) অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়ে (Male Pseudo Hermaphrodite), এবং (৩) অপ্রকৃত নারী হিজড়ে (Female Pseudo Hermaphrodite)।
(১) অপ্রকৃত হিজড়ে (Pseudo Hermaphrodite) : গর্ভে থাকাকালীন সময়ে অন্যান্য শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতোই শিশুর যৌনাঙ্গ গঠিত হয়। যৌনাঙ্গ গঠনে ক্রোমোজোমের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ক্রোমোজোমের ত্রুটিবিচ্যুতির ফলেই জন্ম নেয় যৌন প্রতিবন্ধী শিশু। ক্রোমোজোমের ভিত্তিতে লিঙ্গ নির্ধারণের ব্যবস্থায় এই যৌন বিকলাঙ্গরা তাই হয়ে উঠে অপ্রকৃত।সাধারণত পাঁচ ধরনের অপ্রকৃত হিজড়ে দেখা যায় –(ক) ক্লাইনেফেলটার সিনড্রোম (Klinefelter syndrome) : ১৯৪২ সালে এইচ.এফ. ক্লাইনেফেলটার (H.F Klinefelter) নামে একজন আমেরিকান চিকিৎসক এই রোগ আবিষ্কার করেন। এই শারীরিক ত্রুটি শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে দেখা দেয় ।প্রতি ১০০০ জন পুরুষের ভিতর ১ জনের এই ত্রুটি দেখা দিতে পারে। টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোনের অভাবে এদের শারীরিক গঠনে পুরুষালি পেশির ঘাটতি দেখা দেয়। মুখে দাড়ি-গোঁফ (Facial Hair), যৌনাঙ্গে চুল (Pubic Hair) কম দেখা দেয়। বক্ষ কিছুটা উন্নত হয় ও স্ফীত স্তন দেখা দেয়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে গাইনিকোমাস্টিয়া (Gynecomastia) বলে। তবে মাত্র ১০% পুরুষের গাইনিকোমাস্টিয়া লক্ষণযোগ্য হয়। বাকিদের গঠন স্বাভাবিক পুরুষের মতোই। এদের শুক্রাশয় স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো থাকে। সেখানে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় না। এরা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলেও স্বাভাবিক যৌন জীবন পালন করতে পারে। এরা মানসিক জড়তায় ভোগে। (খ) XXY পুরুষ (XXY Male) : আপাত গঠন পুরুষের মতো। এদের যৌনাঙ্গের অস্বাভাবিকতা বয়ঃসন্ধিকালের ভিতর প্রকাশ পায়। শিশ্ন আছে। তবে মূত্রছিদ্রটি (Urethral Orifice) শিশ্নের স্বাভাবিক স্থানে থাকে না। ডাক্তারি ভাষায় একে হাইপোস্পেডিয়াস (Hypospadias) বলে। এদের অণ্ডকোশ শরীরের অভ্যন্তরে থাকে । একে বলে গুপ্ত শুক্রাশয় (Cryptorchidism)। (গ) XX পুরুষ (XX) : XX পুরুষের সঙ্গে ক্লাইনেফেলটার সিনড্রোমের অনেক মিল আছে। প্রতি ১০,০০০০ জনের ভিতর ৪ অথবা ৫ জনের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদের স্তন থাকে। তবে সুডৌল, স্ফীত স্তন নয়। এদের অত্যন্ত ক্ষুদ্র, ২ সেন্টিমিটারেরও ছোটো শুক্রাশয় থাকে। সেখানে শুক্রাণু (Spermatozoa) উৎপন্ন হয় না। এদের হাইপোস্পেডিয়াসের সমস্যা থাকে। এরা বেঁটে হয়। (ঘ) টার্নার সিনড্রোম (Turner Syndrome) : ১৯৩৮ সালে হেনরি টার্নার ডাক্তারি অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে এই ধরনের রোগের কারণ নির্ণয় করেন। প্রতি ২৫০০ মহিলাদের ভিতর একজনের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত একটি X ক্রোমোজোমের অনুপস্থিতি এই রোগের কারণ। আপাতদৃষ্ট মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সিনড্রোম দেখা দেয়। জন্মের প্রথম তিন বছর এদের উচ্চতা স্বাভাবিক দেখা দিলেও এরপর থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির হার কমে যায়। যোনিকেশ (Pubic Hair) খুব কম দেখা দেয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে সেক্স-হরমোন ইস্ট্রোজেন (Estrogen) ও প্রোজেস্টেরন (Progesterone) নির্গত হওয়া শুরু করে। কিন্তু টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সেক্স-হরমোনের প্রকাশ ঘটে না। ফলে রজঃচক্র বা মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রশস্ত বুকে স্তন গ্রন্থির উদ্ভব হয়। গলার দু-দিকের পুরু মাংসল কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এদের বধির হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। এরা অস্থি সংক্রান্ত বিভিন্ন অসুবিধা ও অস্বাভাবিকতায় ভোগে।অনুন্নত ডিম্বাশয় ও গর্ভধারণে অক্ষম হলেও টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত কারও কারও স্বাভাবিক যোনিপথ ও জরায়ু থাকে।কারও কারও ক্ষেত্রে গণিত শিক্ষা অথবা স্মৃতি ধারণ ক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে।(ঙ) মিশ্র যৌন গ্রন্থির বিকৃতি (Mixed Gonadal Dysgebesis-MGD) : গোনাড হল দেহের সেক্স অর্গান। পুরুষের থাকে শুক্রাশয় আর নারীর থাকে ডিম্বাশয়। MGD সিনড্রোম-ধারীদের আপাতদৃষ্টিতে পুরুষ বলে মনে হয়। শুক্রাশয় থাকে তবে একটি। এর গঠন জটিল আকারের। প্রতিটা শুক্রাশয়ে ৪০০-৬০০টির মতো শুক্রোৎপাদক নালিকা (Seminiferous Tube) থাকে। এর ৫টি স্তর- স্পার্টাগোনিয়া (Spermatogonia), প্রাথমিক স্পার্টোসাইট (Primary Spermatocyte), গৌণ স্পার্মাটোসাইট (Secondary Spermatocyte), স্পার্মাটিড (Spernatid) ও স্পার্মাটোজোয়া (Sprematozoa)। এই পাঁচটি পর্যায়ের মধ্য দিয়েই শুক্রাণু তৈরি হয়। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উল্লিখিত ৫টি পর্যায়ে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে শুক্রাণু গঠন হয় না। শিশ্ন থাকা সত্ত্বেও এদের শরীরে যোনি (Vagina), জরায়ু (Uterus) ও দুটি ফেলোপিয়ান নালির (Fallopian Tube) অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বিকৃত যৌনগ্রন্থির উপস্থিতির ফলে এদের জননকোশের উৎপত্তি স্থানে গোনাডাল টিউমার (Gonadoblastoma) দেখা দিতে পারে। ২৫% MGD আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(২) প্রকৃত হিজড়ে (True Hermaphroditism) : এদের শরীরে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় উভয়ই অবস্থান নেয়।এরা অধিকাংশই পেশীবহুল শরীরের অধিকারী থাকে। শিশ্ন থাকে।অল্প হলেও কারও কারও শিশ্নের বদলে যোনি থাকে। এবং ভগাঙ্কুর (Clitoris) স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো থাকে অনেক সময় তা পুরুষ শিশ্নের মতো হয়ে থাকে। এদের মূত্রনালি ও যোনিপথ একসঙ্গে থাকে। একে বলে ইউরোজেনিটাল সাইনাস (Urogenital Sinus)। ফেলোপিয়ান নালি (Fallopian Tube) ও জরায়ু (Uterus) থাকে। জরায়ু অত্যন্ত ছোটো হয়। চিকিৎসার ভাষায় একে বলে হাইপোপ্লাস্টিক বা ইউনিকরনেট্ (Hypoplastic or Unicornuate)। কৈশোরে স্তন গ্রন্থির প্রকাশ ঘটে ও রজঃচক্র (Menstruation Cycle) শুরু হয়। যাদের বাহ্যিক জননাঙ্গ পুরুষের মতো অর্থাৎ শিশ্ন আছে তাদেরও রজঃচক্র হয়ে থাকে। একে বলে সাইক্লিক হেমাচুরিয়া (Cyckic Hematuria)। এ ধরনের রজঃচক্রের সময় শুক্রাশয়ে ব্যথা হয়।
কৃত্রিম হিজড়ে বা খোঁজাকরণ হিজড়ে : খোঁজাকরণ বা লিঙ্গ কর্তনের মতো ভয়ংকর আইন-বিরুদ্ধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড হিজড়ে সম্প্রদায়ের সঙ্গী। অনেকেই হিজড়ে কমিউনিটিতে যোগদানকালে নিজের শিশ্ন স্বেচ্ছায় কর্তন করে। কেউ করতে না-চাইলে তাকে জোর করা হয়। এছাড়া সুশ্রী দেখতে বালকদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে এনে এদের শিশ্ন ও অণ্ডকোশ কেটে এদের খোঁজা করে দেওয়া হয়। এরপর হিজড়ে বানিয়ে যৌন-ব্যবসায় নামানো হয়। লিঙ্গ অপসারণ ব্যয়বহুল ও অনৈতিক হওয়ার কারণে হাতুড়ে ডাক্তারের সাহায্যে এই কর্তনকর্ম সম্পন্ন করে লিঙ্গকবন্ধ হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর রক্তপাতও ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায় সবার অলক্ষ্যেই।
বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন খতনা হল ইসলাম ধর্মসম্প্রদায়ের মুসলমানি একটি অনুষ্ঠান । কিন্তু এই অনুষ্ঠান শুধু মুসলিম ধর্মেই নয়, অন্য বেশকিছু প্রধান ধর্মেও করা হয়। যেসব সম্প্রদায়ের মানুষরা মনে করেন শুধুমাত্র মুসলমানদেরই লিঙ্গ কাটা বা লিঙ্গের অগ্রত্বক কাটা, তাদের বলি অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর ভিতর দাঁড়ান। শুধু মুসলমান নয়, সমগ্র খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে গুলিয়ে ফেলবেন না, এই লিঙ্গকর্তন কিন্তু খোঁজাকরণ নয় -- লিঙ্গের অগ্রত্বক ছেদন। লিঙ্গের অগ্রত্বক কর্তন করে বা সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করাকে খতনা বলা হয় । নানা কারণে ভিতর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এই খতনা করা হয়ে থাকে । আর-একটু গুছিয়ে বললে যা দাঁড়ায় তা হল, পুরুষদের খতনা বলতে পুরুষাঙ্গের বাড়তি ত্বক কেটে ফেলাকে বোঝায়। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.