ইরাবতী নদীর সঙ্গে ২৬ জানুয়ারির কী সম্পর্ক জানেন?


Odd বাংলা ডেস্ক: ২৬ জানুয়ারি তারিখটি আমার এবং আমার সমকালীন সকলের স্মৃতিতে গাঁথা হয়ে আছে অত্যন্ত গাম্ভীর্যপূর্ণ এক পুণ্যতিথি হিসেবে। পরাধীন ভারতের দেশবাসী সেই দিনটিকে নিজেদের ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করেছিল। ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশন চলছে, তরুণ নেতা সুভাষচন্দ্র মিলিটারি ইউনিফর্ম পরে ঘোড়ায় চড়ে ভলান্টিয়ার বাহিনী পরিচালনা করছেন, সেই অধিবেশনে সভাপতি মোতিলাল নেহরু। মহাত্মা গাঁধী প্রস্তাব এনেছেন, ব্রিটিশ সরকারের কাছে কংগ্রেসের দাবি ডোমিনিয়ন স্টেটাস। তরুণ সুভাষচন্দ্র— এ কালের ভাষায় যুবনেতা— প্রস্তাবের সংশোধনী আনলেন, ডোমিনিয়ন স্টেটাস নয়, চাই পূর্ণ স্বরাজ। গাঁধীজি বুঝিয়ে বললেন, তিনি ব্রিটিশ সরকারকে এক বছর সময় দেবেন। এক বছরের মধ্যে ডোমিনিয়ন স্টেটাস না দিলে তিনি নিজেই পূর্ণ স্বরাজ দাবি করবেন। সুভাষচন্দ্রের সংশোধনী খারিজ হল।
গাঁধীজি কথা রেখেছিলেন, তবে সুভাষচন্দ্র ততক্ষণে এক ধাপ অগ্রসর হয়ে গিয়েছেন। ১৯২৯-এর ডিসেম্বরে লাহৌরে ইরাবতী নদীর তীরে কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতি জওহরলাল নেহরু। মহাত্মা গাঁধী পূর্ণ স্বরাজ দাবি করে প্রস্তাব আনলেন। সুভাষচন্দ্র প্রস্তাব করলেন, শুধু পূর্ণ স্বরাজ নয়, আমরা নিজেদের প্যারালাল গভর্নমেন্ট, সমান্তরাল সরকার ঘোষণা করব। সুভাষচন্দ্রের অতি বৈপ্লবিক প্রস্তাব পাশ হল না। সে যা-ই হোক, লাহৌর কংগ্রেসে ঘোষণা হল, ১৯৩০-এর ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস প্রতিপালিত হবে, দেশ জুড়ে আনন্দ উৎসব উদ্‌যাপিত হবে। সুভাষচন্দ্রের এমনই ভাগ্য, সেই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে দেশের আনন্দ উৎসবে যোগ দেওয়া থেকে বঞ্চিত হলেন। লাহৌর থেকে কলকাতা ফেরার পর ২৩ জানুয়ারি নিজের জন্মদিনে তিনি গ্রেফতার হলেন। সেই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে অবশ্য আমি জন্মগ্রহণ করিনি, কিন্তু যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে, চারিদিকে কী ঘটছে বুঝবার মতো বোধবুদ্ধি হয়েছে, পরাধীন দেশে স্বাধীনতা দিবস গর্বের সঙ্গে পালিত হতে দেখেছি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.