নারী শক্তির মূর্ত প্রতীক, চলে গেলেন চিনের প্রথম মহিলা ট্রাক্টর চালক


Odd বাংলা ডেস্ক:  ১৯৪৮ সালে লিয়াংই ছিলেন চিনের প্রথম নারী, যিনি ট্রাক্টর চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এর দেড় দশকের মাথায় তার ট্রাক্টর চালানোর গর্বিত মুহুর্তের ছবি স্থান পায় চীনের এক ইউয়ানের ব্যাঙ্ক নোটে। সোমবার ৯০ বছর বয়সী ইনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে।

“কেউই আমার মতো ভালো (ট্রাক্টর) চালাতে পারে না; জীবন নিয়ে আমার কোনো খেদ নেই,” আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন এ নারী।

১৯৩০ সালে চিনের দুর্গম হেইলংজিয়াং প্রদেশের দরিদ্র পরিবারে জন্মান লিয়াং জুন; স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ক্ষেতখামারের কাজে সহযোগিতা করে।

১৯৪৮ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ট্রাক্টর চালানোর প্রশিক্ষণ চালু হলে লিয়াং সেই সুযোগ কাজে লাগান। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৭০ শিক্ষার্থীর মধ্যে লিয়াং-ই ছিলেন একমাত্র নারী।প্রশিক্ষণ শেষে হেইলংজিয়াংয়ের এ নারীই হয়ে যান চীনের প্রথম নারী ট্রাক্টরচালক।

কিংবদন্তি কমিউনিস্ট বিপ্লবী মাও জেদং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সৃষ্টির ঘোষণা দেয়ার পর লিয়াং কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সদস্য হন; এরপর কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে তাকে পাঠানো হয় বেইজিংয়ের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে পড়াশোনা শেষে লিয়াং হেইলংজিয়াংয়ে ফিরে যোগ দেন এগ্রিকালচারাল মেশিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে।
চীন ১৯৬২ সালে লিয়াংয়ের ছবি সম্বলিত নোট ছাপানো শুরু করে

নারীদের কর্মক্ষেত্রে বিচরণে উৎসাহ যোগাতে, বিশেষ করে শ্রমশক্তিতে গ্রামীণ নারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে চীন ১৯৬২ সালে লিয়াংয়ের ছবি সম্বলিত নোট ছাপানো শুরু করে। তার জীবনের গল্প যুক্ত হয় পাঠ্যক্রমে। লিয়াং চীনের বহু নারীকে ট্রাক্টর চালানোয় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বলেও কথিত আছে।

কয়েক দশকের চাকরি শেষে ১৯৯০ সালে লিয়াং হারবিন মিউনিসিপাল ব্যুরো অব এগ্রিকালচারাল মেশিনসের প্রধান প্রকৌশলীর পদে থাকা অবস্থায় অবসর নেন।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে অনেকগুলো রোগের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

অসুস্থ থাকায় তিনি মাঝে মাঝেই অচেতন হয়ে পড়তেন; পরের দিকে লিয়াংকে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়তে হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।সোমবার ‘শান্তিতেই’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে ছেলে ওয়াং ইয়ানবিং জানিয়েছেন।

“তিনি একটি চমৎকার লড়াই করেছিলেন। মানুষজন যখনই তার চীনের প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক হওয়ার কথা বলতো, তিনি সবসময়ই খুশি হয়ে উঠতেন,” বলেছেন ওয়াং।চীনের এ ‘আইকনের’ মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবু ভেসে যাচ্ছে একের পর এক শোকবার্তায়।

“পুরুষরা যা করতে পারে, নারীরাও যে তা-ই করতে পারে, তিনি তা দেখিয়েছেন,” বলেছেন এক ব্যবহারকারী।কিংবদন্তি বিপ্লবী মাও জে দংয়ের উক্তিকে ইঙ্গিত করে আরেকজন বলেছেন, “বিদায় এই নারীকে, যিনি অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছিলেন।”“তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, হয়ে উঠেছিলেন তার প্রজন্মের নায়িকা। বিদায় লিয়াং জুন, আমরা আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি,” বলেছেন অন্য এক ব্যবহারকারী।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.