রামপ্রসাদের শ্যামাসংগীত শুনেছিলেন নবাব সিরাজ, তারপর একদিন...


Odd বাংলা ডেস্ক: সাধক কবি রামপ্রসাদের গুণমুগ্ধ ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তিনি প্রকৃত জহুরিও বটে। প্রসাদের প্রকৃত মূল্য বুঝতে তাঁর এতটুকুও দেরি হয়নি। একদিন প্রসাদকে নিয়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলেন মহারাজা। আর নৌকাতেই ছিলেন রামপ্রসাদ। নৌকাতেই তাঁর দেহমন ভরে থাকত সুধামাখা কণ্ঠে মাতৃনামের অমৃতধারায়। একদিন প্রায় সন্ধ্যায় বায়ুসেবনে নৌকায় বেরিয়েছিলেন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এক সময় মহারাজার নৌকার কাছাকাছি আসতেই প্রসাদের পাগলপারা মাতৃসংগীতের সুরলহরি পৌঁছল নবাবের কানে। বিমুগ্ধ নবাব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ওই নৌকা কার, নৌকায় কে গান গায়, কী তাঁর নাম?’ নবাব সমস্ত পরিচয় পেলেন প্রসাদের। নিজের নৌকায় আহ্বান করে অনুরোধ করলেন গান গাইতে। তাঁর গান যেন জাদুতে ভরা। টেনে এনেছেন স্বয়ং নবাবকে। এবার জগজ্জননী ব্রহ্মময়ীর উদ্দেশে প্রাণের আকুতির অর্ঘ্য ঢেলে একটি গজল আর একটি খেয়াল গাইলেন ফারসি ও হিন্দিতে। এই গান দুটি গাইলেন নবাবের রুচি অনুমান করে, তাঁর কোনও ইচ্ছা বা অনুরোধে নয়।

মন দিয়েই গান শুনলেন। কিন্তু এতটুকুও মন ভরল না। বিরক্তি প্রকাশ করলেন নবাব। বললেন, ‘তোমার নিজস্ব সুর ও ভাব নিয়ে যে শ্যামাসংগীত গাইছিলে, যা স্পর্শ করেছে হৃদয় মনকে, তুমি তোমার সেই আবেগভরা নিজের গানই গাও প্রসাদ, সেই অন্তরস্পর্শী গানই আজ শুনতে চাই আমি।’ ভাবতন্ময় মাতৃসাধক রামপ্রসাদ। এবার আপন ভাষায় গাইলেন শ্যামাসংগীত। ভক্তিরসের ভরা জোয়ারে ভাসিয়ে দিলেন নবাব সিরাজের অন্তর, মন। প্রসাদের সুধাধারায় নবাবের মন ভরে উঠল এক অনাস্বাদিত পরিতৃপ্তিতে, দু-চোখ বেয়ে নেমে এল পারমার্থিক প্রেমের অশ্রুধারা। পরিতৃপ্ত নবাব আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সাধুবাদ জানালেন প্রসাদকে। এতেই তৃপ্ত হলেন না তিনি। প্রস্তাব দিলেন, উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত করবেন তাঁকে। বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তাঁর এ প্রস্তাব মুহুর্তে হেলায় প্রত্যাখ্যান করলেন শ্যামাবলে বলীয়ান সাধক রামপ্রসাদ সেন। মাতৃসাধক রামপ্রসাদ তাঁর জীবনে প্রথম প্রার্থনা সংগীত রচনে করেন, ‘আমায় দেও মা তবিলদারী।’ ভক্তের আকুল আকুতিভরা সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন ব্রহ্মময়ী, আর এই বিপুল বিশাল ঐশ্বর্য অকৃপণ করে প্রসাদ বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলার ঘরে ঘরে। একই সঙ্গে শক্তিসাধনার ঊষর পথকে তিনি সিঞ্চিত করেছেন সুধামাখা করুণাময়ী কালীনামের অমৃতধারায়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.