ঘুম গ্রাম: রাস্তা দিয়ে চলতে চলতেই লোকে ঘুমিয়ে পড়ে


Odd বাংলা ডেস্ক: আমাদের পৃথিবীতে এমন প্রচুর ঘটনা ঘটে থাকে যেগুলি এমনই রহস্যময় যার রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞানীরাও নাজেহাল হয়ে যান এবং সেই সমস্ত প্রশ্নের কোন সমাধান হয় না। অতি অত্যাশ্চর্য সেই সকল ঘটনার সমস্যার সমাধান করতে আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও কোন যুক্তি খুঁজে পায় না ।

আজ আমরা এমন একটি জায়গার কথা আপনাদের এখানে জানাতে চলেছি যে জায়গার লোকজন যে কোনো জায়গায় এবং যেকোনো অবস্থায় হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়েন। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ঘুমিয়ে পড়েন। শুনতে অতি অদ্ভুত হলেও এটাই কিন্তু সত্যি। হঠাৎ কর্মরত অবস্থার থেকে কেউ কিভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পরতে পারে। কিন্তু কেন এমনটা হয়, সেটা ভেবেও কোন উত্তর পাওয়া যায় নি।

সবথেকে বেশী রহস্যময় এবং হয়রানির বিষয় হলো এই যে, যারা এইভাবে ঘুমিয়ে পড়েন তারা সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে মাঝে মাঝে কয়েক মাস একটানা ঘুমিয়ে থাকেন। আমরা এখানে কথা বলতে চলেছি কাজাকিস্তানের একটি গ্রাম সম্পর্কে যার নাম কালাচি, যে জায়গাটি প্রায় বিগত চার বছর ধরে এই রহস্যময় ঘুম রোগে আক্রান্ত। এই রোগটির জন্যই এই জায়গাটিকে স্লিপি হলো (sleepy hollow) পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে।

সর্বপ্রথম এই রোগটির উপদ্রব শুরু হয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। এই গ্রামটির জনসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন যার মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ লোক এই ঘুম রোগে আক্রান্ত হয়ে এই রোগটির মারাত্মক শিকার হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র এইটুকু জানা গেছে যে, যে সকল লোক এই ঘুম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাদের মাথায় অর্থাৎ ব্রেনের তরল পদার্থের পরিমাণ আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের মাথায় এই তরল পদার্থ হঠাৎ করে কেনইবা বেড়ে যায় সেই প্রশ্নের সদুত্তর এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কাজাকিস্তানের এই গ্রামটি একটি ইউরেনিয়াম খনির কাছে অবস্থিত যেখান থেকে ক্ষতিকারক রেডিয়েশন হতেই থাকে। কিন্তু এই রেডিয়েশনের মাত্রা এই গ্রামে অতিরিক্ত বলে সেরকমভাবে কিছু পাওয়া যায়নি। ডাক্তারেরা বলেন যে ইউরেনিয়ামের রেডিয়েশন কোনোভাবেই এই রোগের জন্য দায়ী নয়। এই গ্রামে এইধরনের ঘুমরোগে পিড়িত লোকের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

প্রথমবার যে ব্যক্তি এই ঘুম রোগে আক্রান্ত হয়, সেই প্রথম ব্যক্তিটি এই পর্যন্ত প্রায় সাত বার এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এই অদ্ভূত রোগের শিকার হয়েছে এবং শুধুমাত্র তাই নয় লোকটি প্রায় কয়েক মাস পর্যন্ত একটানা ঘুমিয়ে থাকে। এই অদ্ভূত ঘটনাটি বেশ কিছু স্কুলের বাচ্চার সঙ্গেও ঘটে থাকে যারা অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে পরে যায় এবং প্রায় কয়েক মাস ধরে একটানা ঘুমিয়ে থাকে। শোবার সময় শরীরের সকল কার্যক্রম ঠিকঠাকভাবেই চলে এবং কোনো রকম কোনো বিকৃতি দেখা যায় না।

এই অদ্ভূত ঘুম রোগের কার্যকারণ যেমন খুঁজে পাওয়া যায়নি তেমনই বিজ্ঞান এই প্রশ্নের কাছে হার মেনেছে যে ঘুমন্ত অবস্থায় কেনইবা লোকগুলির মাথার জলীয় পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হঠাৎ করে তারা কেনই বা যেকোনো অবস্থায় অর্থাৎ যেকোনো রকম কাজ করার অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের পৃথিবীতে বহু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে এবং প্রতিনিয়ত সেইগুলি নতুন নতুন প্রশ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ অবধি মেলেনি। এটি হলো সেই ধরনেরই একটি প্রশ্ন যা মানব সভ্যতার বিজ্ঞানকে একটি নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.