'সুভাষ বসুর বিমান দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন প্রণব মুখার্জি!', রেডিও তেহরান যা সম্প্রচার করেছিল


Odd বাংলা ডেস্ক: ২৬শে জুন। রে়ডিও তেহরানে সম্প্রচারিত এই খবরটির একটি লিখিত রূপ দেওয়া হল। সেখানে বলা হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাবলী 'ধামাচাপা' দেওয়ার প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং ইউপিএ জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রণব মুখার্জি। গান্ধী-নেহেরুর কথিত অহিংস আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগকে গ্রহণ করে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' নামের একটি বাহিনী গঠন করেন সুভাষ বসু এবং তিনি ব্রিটিশবিরোধী প্রত্যক্ষ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ কারণে কংগ্রেসপন্থী নেতাদের কাছে সুভাস বসু কখনই গ্রহণীয় হয়ে ওঠেননি। ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানের কাছে এক রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ বোস নিহত হয়েছেন বলে ভারত সরকারিভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু, এ ধারণা নাকচ করে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত আলামত থাকা সত্ত্বেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় প্রণব মুখার্জি তা আর করেননি। বরং উল্টো তিনি এ কথা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছেন। 'ইন্ডিয়াজ বিগেস্ট কভার-আপ' নামের একটি বইয়ে এসব কথা তুলে ধরেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক অনুজ ধর। 
বিমান দুর্ঘটনার ৬৫ বছর পর গোপন নথি হিসেবে বিবেচিত কিছু রেকর্ডের ভিত্তিতে এ বই লেখা হয়েছে। আর ব্রিটিশ, আমেরিকা এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে। অনুজ ধর তার বইয়ে ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব সে সময় গোপন একটি নোট দেন। এ নোটে তিনি জানান, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি'র আর্কাইভে সুভাষ বসু সম্পর্কে কোনো কাগজপত্র আছে কিনা তা খুঁজে দেখার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে রাশিয়ান ফেডারেশনকে অনুরোধ জানাতে পারে ভারত। এ নোটটি দেখার পর ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দারকে ওই যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলাপ করার নির্দেশ দেন প্রণব। আলাপের পর ওই যুগ্ম সচিবের মনোভাব পুরোপুরি বদলে যায়। তিনি তখন নোট দেন যে, কেজিবি'র আর্কাইভ নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করা হলে তাতে হিতে বিপরীত হবে এবং রুশ-ভারত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনুজ ধর লিখেছেন, তাইওয়ানে সুভাষ বসু মারা গেছেন বলে যে কথা প্রচলিত ছিল ভারতে তা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসকারীদের দলে ছিলেন প্রণব মুখার্জি। 
১৯৯৪ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন চিঠিতে মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাপান সরকারের কাছ থেকে সুভাষ বসুর ডেথ সাটিফিকেট চাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু, জাপানি কাগজপত্র ভূয়া হয় বলে উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এ ঘটনার এক দশক পরে সুভাষ বসুর মৃত্যুর বিষয়ে বিচারপতি মুখার্জি কমিশনে যে সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ২০০৪ সালে মুখার্জি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তখন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নিয়ে ওই কমিশনের প্রতিবেদন যাচাই করতে বসেন তিনি। ওই কমিশন নেতাজি সুভাষ বোসের রহস্যজনক অন্তর্ধানের বিষয়ে প্রতিবেদনে যে উপসংহার দেন তা নাকচ করে দেয় ভারতের মন্ত্রিপরিষদ। লেখক অনুজ ধর আরও মনে করেন, "তাইওয়ানের রহস্যজনক বিমান দুঘর্টনার পর সুভাষ বসু হয়তো রাশিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার এ বিষয়ে রুশ সরকারকে কিছুই জিজ্ঞাসা করার সামান্য গরজ পর্যন্ত দেখায়নি।" বিমান দুঘর্টনায় মারা না গেলে সুভাষ বসুর ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অনুজ ধর লিখেছেন, সুভাষ বসু ফয়জাবাদে মারা গেছেন বলে কিছু কিছু আলামত থেকে মনে হয়। ভারত সরকার এ সংক্রান্ত সব গোপন কাগজপত্র বিশেষ করে গোয়েন্দা দফতরগুলো কাছে থাকা কাগজপত্র প্রকাশ না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। 

সূত্র: ইন্ডিয়াস বিগেস্ট কভার আপ (লেখিকা: অনুজ ধর)
Blogger দ্বারা পরিচালিত.