SARASWATI PUJA SPECIAL: বিদ্যার দেবীর জন্ম ও আরাধনার নেপথ্যের কাহিনি জানুন


পরেশ নাথ শাস্ত্রী: দেবী সরস্বতী বিদ্যা আবার সঙ্গীতেরও দেবী। নাগরাজ অশ্বতর দেবীর কৃপায় সঙ্গীতবিদ্যা লাভ করেছিলেন। মার্কণ্ডপুরাণে এই উপাখ্যান দেখা যায়। শোকে জর্জরিত হয়ে রাজা অশ্বতর হিমালয়ে গিয়ে দেবী সরস্বতীর স্তবস্তুতাদি করেন। যথা-
জগদ্ধাত্রীমহং দেবীমারিরাধয়িষুঃ শুভাম্‌ ।
স্তোষ্যে প্রণম্য শিরসা ব্রহ্মযোনিং সরস্বতীম্‌ ।।
সদসদ্দেবি যৎ কিঞ্চিন্মোক্ষবচ্চার্থং পদম্‌ ।
তৎ সর্ব্বং ত্বয্যসংযোগং সংস্থিতম্‌ ।।
ত্বমক্ষরং পরং দেবি যত্র সর্ব্বং প্রতিষ্ঠিতম্‌ ।
অক্ষরং পরমং দেবি সংস্থিতম পরমাণুবৎ ।।
অক্ষরং পরমং ব্রহ্ম বিশ্বঞ্চৈতৎ ক্ষরাত্মকম্‌ ।
দারুণ্যবস্থিতো বহ্নির্ভৌমাশ্চ পরমানবঃ ।।
তথা ত্বয়ি স্থিতং ব্রহ্ম জগচ্চেদমশেষতঃ ।
ওঁকারাক্ষরসংস্থানং যত্তু দেবি স্থিরাস্থিরম্‌ ।।
তত্র মাত্রাতয়ং সর্ব্বমস্তি যদ্দেবি নাস্তি চ ।
ত্রয়ো লোকস্ত্রয়ো দেবাস্ত্রৈবিদ্যং পাবকত্রয়ম্‌ ।।
ত্রীণি জ্যোতিংষি বর্ণাশ্চ ত্রয়ো ধর্ম্মাগমস্তথা ।
ত্রয়ো গুণস্ত্রয়ঃ শব্দাস্ত্রয়ো বেদাস্তথাশ্রমাঃ ।।
ত্রয়ঃ কালস্তথাবস্থাঃ পিতরোহহনিশাদয়ঃ ।
এতন্মাত্রাত্রয়ং দেবি তব রূপং সরস্বতি ।।
বিভিন্নদর্শিনামাদ্যা ব্রহ্মণো হি সনাতনাঃ ।
সোমসংস্থা হবিঃসংস্থাঃ পাকসংস্থাশ্চসপ্ত যাঃ ।।
তাস্তদুচ্চারণাদ্দেবি ক্রিয়ন্তে ব্রহ্মবাদিভিঃ ।
অনির্দ্দেশ্যং তথা চান্যদর্গ্ধমাত্রান্বিতং পরম্‌ ।।
অবিকার্য্যক্ষয়ং দিব্যং পরিণামবিবর্জ্জিতম্‌ ।
তবৈতৎ পরমং রূপং যন্ন শক্যং ময়োদিতুম ।।
ন চাস্যেন ন তজ্জিহ্বা – তাম্রোষ্ঠাদিভিরুচ্যতে ।
ইন্দ্রোহপি বসবো ব্রহ্মা চন্দ্রার্কৌ জ্যোতিরেব । ।
বিশ্বাবাসং বিশ্বরূপং বিশ্বেশ্বং পরমেশ্বরম্‌ ।
সাংখ্যবেদান্তবেদোক্তং বহুশাখাস্থিরীকৃতম্‌ ।।
অনাদিমধ্যনিধনং সহসন্ন সদেব যৎ ।।
একং ত্বনেকং নাপোকং ভবভেদসমাশ্রিতম্‌ ।
অন্যখ্যং ষড়্‌গুণাখ্যঞ্চ বর্গাখ্যং ত্রিগুণাশ্রয়ম্‌ ।।
নানাশক্তিমতামেকং শক্তিবৈভবিকং পরম্‌ ।
সুখাসুখং মহাসৌখ্য রূপং ত্বয়ি বিভাব্যতে ।।
এবং দেবি তয়া ব্যাপ্তং সকলং নিষ্কলঞ্চ যৎ ।
অদ্বৈতাবস্থিতং ব্রহ্ম যচ্চ দ্বৈতে ব্যবস্থিতম্‌ ।।
যেহর্থা নিত্যা যে বিনশ্যন্তি চান্যে
যে বা স্থূলা যে চ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মাঃ ।
যে বা ভূমৌ যেহন্তরীক্ষেহন্যতো বা
তেষাং তেষাং ত্বত্ত এবোপলব্ধিঃ ।।
যচ্চামূর্ত্তং যচ্চ মূর্ত্তং সমস্তং
যদ্বা ভ্যূতেম্বেকমেকঞ্চ কিঞ্চিৎ ।
যদ্দিব্যস্তি ক্ষ্মাতলে খেহন্যতো বা
ত্বৎসম্বন্ধং ত্বৎস্বরৈব্যঞ্জনৈশ্চ ।।

( মার্কণ্ড পুরাণ... ত্রয়োবিংশ অধ্যায়... ৩০-৪৮ )
অর্থাৎ- অশ্বতর বললেন, আমি শুভময়ী , জগদ্ধাত্রী , ব্রহ্মযোনি সরস্বতী দেবীর আরাধনেচ্ছু হইয়া তাঁহাকে মস্তক দ্বারা প্রনিপাত করিতেছি , হে দেবী! মোক্ষবিশিষ্ট সদসৎস্বরূপ যে সকল পদ আছে , সেই সমস্তই তোমাতে অসংযুক্ত হইয়াও সংযুক্তের ন্যায় সম্যক্‌রূপে অবস্থিত রহিয়াছে ; দেবী! যাবতীয় পদার্থ যথায় প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে , সেই তুমি পরম অক্ষর ( অবিনশ্বর ) । কিন্তু অক্ষর সকল পরমাণুর ন্যায় তোমাতেই সংস্থিত এবং অক্ষরস্বরূপ পরমব্রহ্ম ও ক্ষরাত্মক এই বিশ্বও তোমাতেই অবস্থিত । অনল ও ভৌম পরমাণু সকল যেমন কাষ্ঠমধ্যে অবস্থান করে, তেমনি পরমব্রহ্ম ও অশেষ জগত তোমাতেই বিদ্যমান । দেবি! ওঁকার , অক্ষরসংস্থান ও স্থিরাস্থির অর্থাৎ সদসৎ যাবতীয় পদার্থ সকল তোমাতে বর্তমান রহিয়াছে । মাতঃ! তিন লোক, তিন বেদ, তিন বিদ্যা, তিন অনল, তিন জ্যোতিঃ , তিন বর্ণ , তিন ধর্ম্মাগম , তিন গুন, তিন শব্দ, তিন দেব , তিন আশ্রম , তিন কাল, তিন অবস্থা এবং পিতৃ ও অহর্নিশ প্রভৃতি যাবতীয় বস্তুপুঞ্জ যে মাত্রাত্রয়ের স্বরূপ , হে সরস্বতী! সেই মাত্রাত্রয়ই তোমার রূপ । বিভিন্নদর্শী অর্থাৎ পৃথক পৃথক সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যাক্তিগণের নিমিত্ত সোমসংস্থ , হবিসংস্থ ও পাকসংস্থরূপে আদ্য ও সনাতন সপ্তবিধ ব্যাহ্রতি সকল বেদমধ্যে নিরূপিত হইয়াছে, ব্রহ্মবাদিগণ একমাত্র তোমারই কীর্তনে সেই সমস্তই সমাহিত করেন। মাতঃ ! উল্লিখিত রূপ ভিন্ন আপনার আর একটি যে অনির্দ্দেশ্য পরমরূপ আছে , যাহাকে অর্দ্ধমাত্রা কহে, তাহাও ঐরূপ অধিকারী , অক্ষয় ও অশেষ । মাতঃ আমার এরূপ শক্তি নাই, যাহা দ্বারা আপনার ঐ পরমরূপের নির্দ্দেশকরণের ক্ষমাবান্‌ হই ; কারণ বদন , জিহ্বা , তালু ও ওষ্ঠাদি দ্বারা তাহার উচ্চারন হয় না । ইন্দ্র, বসুগণ, ব্রহ্মা, চন্দ্র , সূর্য বা অন্যান্য জ্যোতির্ময় পদার্থ সকল , তাহার স্বরূপ । উহাই বিশ্বের আবাস , বিশ্বের স্বরূপ, বিশ্বের ঈশ্বর ও পরমেশ্বর । সাংখ্য, বেদান্ত ও তর্কশাস্ত্রে যাহা কথিত হইয়াছে , বেদের বহুতর শাখা দ্বারা যাহা স্থিরীকৃত হইয়াছে ; যাহার আদি নাই, মধ্য নাই , অন্ত নাই , যাহা সৎ ও অসৎ , সংসারের ভেদসমাশ্রয়ে যাহা এক ও অনেক ও নানা প্রকার ; যাহার আখ্যা নাই , অথচ গুণষটক ও বর্গ সকলই যাহার আখ্যা ; যাহা দ্বিগুণালম্বী , যাহা নানাপ্রকার শক্তিমানগণের শক্তির পরম বিভব সম্পন্ন এবং যাহা সুখ, অসুখ ও মহাসুখ স্বরূপ মাতঃ , তোমাতে তাহ বিভাবিত হইতেছে । দেবি এই প্রকারে সকল ও নিষ্কল সমস্তই তোমা দ্বারা বযাপ্ত হইয়াছে এবং যাহা অদ্বৈতাবস্থিত ও দ্বৈতাবস্থিত ব্রহ্ম , তাহাও তোমা দ্বারা ব্যাপ্ত হইয়াছে । যে অর্থ সকল নিত্য ও যাহা অনিত্য, যাহা স্থূল ও যাহা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এবং যাহা পৃথিবীতে বা অন্তরীক্ষে কিংবা অন্যত্র বিদ্যমান , হে দেবী! তোমা হইতেই সে পদার্থ সকলের উপলব্ধি হইয়া থাকে । মাতঃ ! যে সকল বস্তু মূর্তিবিশিষ্ট বা অমূর্ত ; যাহা সমস্ত প্রাণীতেই কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ বিদ্যমান ; যাহা স্বর্গে , পৃথিবীতলে , অন্তরীক্ষে বা অন্যান্য স্থানে বর্তমান থাকে, হে দেবী! তদীয় স্বর ও ব্যাঞ্জন দ্বারাই সেই পদার্থ সকলের জ্ঞান হইয়া থাকে ।
এভাবে স্তবস্তুতি করলে দেবী সরস্বতী তুষ্টা হয়ে রাজাকে দর্শন দান করে সঙ্গীতবিদ্যা সুর তাল সরগম ইত্যাদি প্রদান করলেন ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.