যে বাড়িতে নেতাজির জন্মদিনে আজও সিঙারা ভোগ দেওয়া হয়
Odd বাংলা ডেস্ক: কাঁচের দেওয়াল আলমারিতে চকচকে খয়েরি বার্নিশ করা হাতলওলা কাঠের চেয়ার৷ চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে রাখা ঝাপসা হয়ে আসা নেতাজির সাদা কালো ছবি৷ ছবিতে ফুলের মালা৷ শাঁখ-ঘণ্টা-ধূপ-ধুনোয় নিত্যপূজা চলছে৷ আলমারির সামনে গোটা পরিবার৷ বাড়ির কর্তা, অশীতিপর সব্যসাচী রায়ের হাতে কাচের প্লেট৷ কুলদেবতাকে ভোগ নিবেদন করবেন বলে হাত বাড়িয়ে আছেন চেয়ারের দিকে৷
খিচুড়ি-পায়েস-মিষ্টি-নকুলদানা বা মিছরি নয়, প্লেটে রয়েছে গোটা আষ্টেক ঘরে বানানো সিঙাড়া৷ রায় পরিবারের 'কুলদেবতা' নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নিত্যপূজায় এই সিঙাড়া ভোগ দেওয়াই ট্র্যাডিশন! সেই ১৯৩২ সাল থেকে এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে৷ কিন্তু ট্র্যাডিশনের গোড়াটা কোথায়? সব্যসাচীবাবু জানালেন, আমাদের পরিবার কট্টর কংগ্রেসি৷ ১৯৩২-এ রায় পরিবারের কর্তা রমেশচন্দ্র ও তাঁর ভাই সুরেশচন্দ্র ছিলেন পুরোদস্তুর স্বাধীনতা সংগ্রামী৷ রমেশবাবুর স্ত্রী শিবভাবিনী দেবী ছিলেন বর্ধমান জেলা মহিলা কংগ্রেসের তদানীন্তন সভানেত্রী৷ ফলে রায়বাড়িতেই বসেছিল কংগ্রেসের কর্মীসভা৷ কাষ্ঠশালীতে জনসভা সেরে রায়বাড়িতে পৌঁছে এই কাঠের চেয়ারে বসেই বৈঠক করেছিলেন নেতাজি৷ শিবভাবিনী নিজের হাতে সিঙাড়া তৈরি করে খাইয়েছিলেন দেশনেতাকে৷ শোনা যায়, তারিফ করেছিলেন সুভাষ!
সেই থেকে রমেশবাবু ও তাঁর ভাইয়েরা বলে দেন, ওই চেয়ারে আর কেউ বসবে না৷ এ বার থেকে দেবতার আসনজ্ঞানে অর্চনা হবে ওই চেয়ারের৷ আর সেই পূজার ভোগ যে সিঙাড়া হবে, তাতে আর সন্দেহ কী? মঙ্গলবার তাই রায় পরিবারে ছিল সাজো সাজো রব৷ সকাল থেকে পুজোর প্রস্তুতি, জাঁকজমক তো ছিলই৷ তার উপর ২৩ জানুয়ারি গোটা পাড়াকে সিঙাড়া খাওয়ানোর তোড়জোড়৷ প্রতিবেশিদের সেদিন সিঙারা বিলোনোও যে রায় পরিবারের প্রথা৷ বাড়ির বৌ-ঝিয়েরা হাতে তৈরি করেন ওই সিঙাড়া৷ প্রসাদ হিসেবে বিলি করা হয়৷
সেই সব আগুনঝরা দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে এখনও আবেগে ভেসে যান বাড়ির সবাই৷ বৃদ্ধ সব্যসাচীবাবু বলেন, 'একাশি বছর ধরে আগলে রেখেছি এই স্মৃতি৷ ওই চেয়ারের জন্যই আমাদের বাড়ির নাম-যশ৷ ফলে আমাদের বাড়িতে এই চেয়ারই দেবতার আসন৷' রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন দে-ও জানান, 'রায়বাড়ির কথা অনেক শুনেছি৷ দলের মুখপত্র লোকমতে এ নিয়ে লিখেওছি৷' কাজেই ২৩ জানুয়ারি নিছক আরেকটা ছুটির দিন নয় পূর্বস্থলীর রায়বাড়িতে৷ এ দিন পুজোর দিন, এ দিন স্মৃতির উচ্ছাসের দিন৷ আর সিঙাড়া খাওয়ার দিন তো বটেই!
Post a Comment