শীতের বিকেলে চিড়িয়াখানা বা ভিক্টোরিয়া নয়, গন্তব্য হোক এইসব অফবিট জায়গা


Odd বাংলা ডেস্ক: ছুটির দিন শীতের দুপুর মানেই বাঙালির কাছে ময়দান, ভিক্টোরিয়া বা চিড়িয়াখানা। এইসব জায়গায় নিশ্চয় আপনি বহুবার গিয়েছেন। কিন্তু আজ আপনাদের বলব শহরের এমন কিছু জায়গার কথা যেখানে আপনার সচরাচর খুব একটা যাওয়া হয় না। তাই শীতের একটি দিন কাটাতে ঘুরে আসুন এই ছয়টি জায়গার যেকোনও একটিতে।

১) পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি- শীতের ছুটির দিনকে অ্যাডভেঞ্চারাস করে তুলতে সপিরবারে ঘুরে আসুন পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে। ঊনবিংশ শতাব্দিতে ইওরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় কবরস্থান। ১৭৬৭ সালে কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের (বর্তমানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোজ) পশ্চিমদিকের কবরস্থানটি সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি নামে পরিচিত। গেটে লাগানো ফলক অনুসারে এই কবরস্থান ১৭৯০ সালে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু কবরের ফলক অনুসারে ১৮৪০ সালেও এখানে সমাধি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এই কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করে। এটিকে কলকাতার একটি হেরিটেজ সাইটের তকমা দেওয়া হয়েছে। হেনরি লুই ডিরোজিও, এলিজাবেথ বারওয়েল-এর মতো অসংখ্য নামী ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে এখানে।

ঠিকানা- ৫২ পার্ক স্ট্রিট,কলকাতা- ৭০০০১৭, অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চ স্কুলের বিপরীতে।
কীভাবে যাবেন- রেলপথে প্রথমে হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সরাসরি ট্যাক্সিতে যেতে পারেন সিমেট্রি। অথবা স্টেশন থেকে বাসে করে ধর্মতলা তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সিতে পৌঁছে যেতে পারেন সিমেট্রি।

২) বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনলজিক্যাল মিউজিয়াম- মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা এবং প্রযুক্তির ধারণাকে মানুষের মধ্যে জাগ্রত করতে এক উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নিয়েছে এই মিউজিয়াম। বৈদ্যুতিক, পরমাণু পদার্থবিদ্যা, লৌহ ও ইস্পাত, প্রাণী বিজ্ঞান, ভূগর্ভস্থ কয়লা, অ্যাকোয়ারিয়াম, পাখিরালয়, বনসায়ী-এর এক বিপুল প্রদর্শনীশালা রয়েছে। সেইসঙ্গে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন মহাজাগতিক শো ও থ্রি-ডি শো-ও প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। আপনার শিশুকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করাতে শীতের ছুটিতে ঘুরে আসুন বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনলজিক্যাল মিউজিয়াম। মঙ্গলবার থেকে রবিবার এই মিউজিয়াম খোলা থাকে।

ঠিকানা- ১৯ এ, গুরুসদয় দত্ত রোড, বেকবাগান, বালিগঞ্জ, কলকাতা-১৯

কীভাবে যাবেন- বালিগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা ক্যাবে পৌঁছে যেতে পারেন মিউজিয়াম।
৩)  জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি দেখতে প্রতিবছরই বহু মানুষ এসে ভিড় করেন এখানে। অষ্টাদশ দশকের শেষদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুব় এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাংলা সাহিত্যে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে থেকেছে এই ঠাকুরবাড়ি। বর্তমানে এটি মিউজিয়ামের মতো করে সাজিয়ে রাখা রয়েছে। যেখানে রয়েছে কবিগুরুর ব্যবহৃত জিনিস, আরাম কেদারা, বইপত্র, পোশাক তাঁর খাবার ঘর, শয়নকক্ষ ইত্যাদি। বাড়ির পরতে পরতে মিশে আছে কবিগুরুর স্পর্শ। ঠাকুরবাড়ি খোলা থাকে সকাল ১০.৩০ থেকে বিকেল ৫টা।

ঠিকানা- গণেস টকিজ, ২৬৭, রবীন্দ্র সরণী, সিংহী বাগান, জোড়াসাঁকো, কলকাতা-৭০০০০৭

কীভাবে যাবেন- চিতপুর বা কলকাতা স্টেশন থেকে জাকারিয়া স্ট্রিট বাস কিংবা ট্যাক্সিতে যেতে পারেন।  মেট্রোতে গেলে বেশ খানিকটা হাঁটতে হতে পারে। ধর্মতলা থেকেও অনেক বাস ও ট্যাক্সি পেতে পারেন সহজেই। 

৪) কফি হাউস- কলেজ স্ট্রিটের নাম শুনলেই প্রথমেই যে জায়গাটার কথা মনে পড়ে তা হল কফি হাউস। কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর না থাকলেও ভোজনরসিক ও আড্ডারসিক বাঙালি বারবার ফিরে যান কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ এই স্থানে। বন্ধুবান্ধব হোক কিংবা পরিবার নির্ভেজাল আড্ডা দেওয়ার অন্যতম স্থান কলকাতার কফি হাউস। একসময়ে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিত রায় থেকে শুরু করে নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত সকলের পদধুলিই পড়েছে এই কফি হাউসে। কফি খেতে খেতে আড্ডার পাশাপাশি জমিয়ে দুপুরের খাবারও সেরে নিতে পারেন এখানে।

ঠিকানা- বঙ্কিম চ্যাটার্জ্জী স্ট্রিট, কলেজ স্কোয়্যার, কলকাতা- ৭০০০৭৩
কীভাবে যাবেন- ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজারগামী ট্রামে চেপে চলে যেতে পারেন কফি হাউস, সেইসঙ্গে পেয়ে যাবেন একাধিক বাসের অপশনও। আর মেট্রোয় করে যদি শ্যামবাজার নামেন তাহলে উল্টো পথে ট্রামে চেপে আসতে হবে কফি হাউস।

৫) গঙ্গাবক্ষে নৌকোবিহার- নিজের মনের মানুষকে বা নিজের পরিবারের সঙ্গে গোটা একটা বিকেল কাটাতে পারেন গঙ্গাবক্ষে। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে বহু নৌকো গঙ্গাবক্ষে ঘোরায়। সেগুলি বুক করে নিয়ে কাটাতে পারেন সুন্দর মুহূর্ত। তবে জলে আতঙ্ক থাকলে এই অপশনটা বাদ দেওয়া যায়।

কীভাবে যাবেন- চক্ররেলে প্রিন্সেপ ঘাট স্টেশনে নেমে পৌছে যেতে পারেন। বা সড়কপথে ধর্মতলা থেকে যেকোনও বাস বা ট্যাক্সিতে পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.