কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হত্যায় হাততালি দিয়েছিল পাকিস্তান, সংখ্যার রাজনীতি দেখেছিল কংগ্রেস



Odd বাংলা ডেস্ক: আজ ১৯শে জানুয়ারি। ৩০ বছর আগে আজকের দিনেই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়া করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে ভারতের কাশ্মীরে কি হল বুঝতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে আরো বেশ কয়েক বছর এবং দেখতে হবে ১৯৭৫-১৯৯০ এই সময়ে পাকিস্তানে কি হল। সত্তরের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানে হানা দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া। আমেরিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধ তখন তুঙ্গে। আমেরিকার দোসর পাকিস্তান।সামরিক অভ্যুথান করে ক্ষমতায় এসেছেন জেঃ জিয়া-উল-হক। জুলফিকার আলি ভুট্টো কে ফাঁসি তে ঝুলিয়েছেন। তাঁর ওপর বর্ষিত হচ্ছে আমেরিকার আশীর্বাদ।মহাশক্তিশালী সোভিয়েত কে আফগানিস্তানে আটকাতে আমেরিকার বলির পাঁঠা হতে রাজী পাকিস্তান। বিনিময়ে চাই ডলার। আফগানিস্তানে গিয়ে লড়াই করার জন্য পাকিস্তান তৈরী করবে হাজার হাজার ঈমানী জোশে উদ্বুদ্ধ জিহাদী। তৈরী হল কয়েকশত জিহাদী ট্রেনিং ক্যাম্প। আর এই ক্যাম্প গুলো স্থাপনা করা হল পাকিস্তানের দখল করা 'আজাদ কাশ্মীর " অংশে। তৈরী হল পাকিস্তানী এবং আফগান তালিবান।এই জিহাদী যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলেদিলো আমেরিকা। ঈমানী জোশ দিলো সৌদি আরব। ১৯৭৩ সালের আরব -ইস্রায়েল যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পেট্রো-তেলের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে।পেট্রোডলারএ সৌদি রাজাদের তখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। অশিক্ষিত ,বর্বর সৌদি রাজবংশের এখন শুধু তেল রপ্তানী করে মন ভরছে না , তারা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানী করা শুরু করল ওয়াহাবী ইসলাম। সৌদি অর্থে বিভিন্ন দেশে তৈরী হল একের পর এক মসজিদ।এগুলিতে সৌদীরা তাদের ওয়াহাবী প্রপাগান্ডা ছড়াতে শুরু করল বিশ্ব জুড়ে। তৈরী হল ধর্মের ভাইরাস এবং অর্থের মিশ্রনে তৈরি এক ভয়ংকর টাইমবম্ব। পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত জিহাদী /মুজাহীদ/আফগান/পাঠানরা আফগানিস্তানে গিয়ে সোভিয়েতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।শহীদ হওয়ার পর তাদের জন্য আছে জান্নাত।

পাকিস্তান খুশীতে ডগমগিয়ে উঠল। একদিকে আফগান যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য আমেরিকা দিচ্ছে বিলিয়নস অফ ডলার অন্যদিকে দেশের হাজার হাজার জিহাদী যুবক "শাহাদাত " বরণ করছে। সুতরাং তাদের শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ,কর্মসংস্থান এবং ভবিষ্যতের কোন দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেই। পাকিস্তানী আর্মি, ISI অফিসার এবং রাজনীতিবিদদের বিদেশী ব্যাংকে উপচে পড়ছে আমেরিকান ডলার।
১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের মধ্যে এক বিমান দুর্ঘটনায় জেঃ জিয়া-উল-হক নিহত হন।দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। নিন্দুকেরা বলে আমেরিকানদের কাছে তাঁর প্রয়োজনীতা শেষ হয়ে যাওয়াতে তাঁকে "ডাম্প" করা হয়। তাঁর আমলে পাকিস্তানে হাজার হাজার শিয়া মুসলমানদের হত্যা করা হয়। অনেক নিন্দুক বলে বিমানের শিয়া পাইলট প্রতিশোধ নেবার জন্য বিমানটিতে দুর্ঘটনা ঘটায়।
৮০র দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তান থেকে হটতে থাকে রুশ বাহিনী। পুল-আউট কমপ্লিট হয় ১৯৮৯ সালে। আফগানিস্থান থেকে আমেরিকাও হাত ধুয়ে ফেলে। পাকিস্তান সমস্যায় পরে এই জিহাদীদের নিয়ে -ধর্মের নামে মারা এবং মরা ছাড়া যারা আর কিছু শেখেনি।
পাকিস্তান চড়ে ছিল বাঘের পিঠে। থামার আর কোনো উপায় নেই। এই জিহাদী গুলোর কিছু অংশ কে পাকিস্তান ভিড়িয়ে দিল ভারতীয় কাশ্মীর অংশে। এরা স্থানীয় মুসলিম যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলো এবং অনুপ্রাণিত করলো জিহাদে। কাশ্মীরে প্রবেশ করলো টক্সিক ওয়াহাবী মতবাদ। কাশ্মীরি মুসলমান এতকাল অনুসরণ করে এসেছে বুল্লেশা র সুফী ইসলাম। শত শত বছর ধরে তারা পাশাপাশি বাস করেছে কাশ্মীরি পন্ডিতদের সাথে। তৈরী হয়েছে এক অসাধারন অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাকে বলা হয় "কাশ্মীরিয়াত"।
কিন্তু ধর্মের বিষ মেরে ফেললো প্রতিবেশী সুলভ ভালোবাসা কে।

কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিতদের নিধন শুরু হল । ১৯৯০’এর ১৯শে জানুয়ারি একদিনে ঘটে নি। তার আগের বছর থেকেই ফারুখ আবদুল্লা সরকার সেখানকার কুখ্যাত জঙ্গীদের জেল থেকে ছাড়তে শুরু করেন। অন্তত ৭০ জন জঙ্গী ১৯৮৯’এর জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল থেকে ছাড়া পায়। কাশ্মীরী পণ্ডিতদের নিহত হওয়াটা তখন যেন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এবারে গোটা কাশ্মীর জুড়ে বেছে বেছে নামজাদা পন্ডিতদে’র চিহ্নিত করে হত্যালীলা আরম্ভ হল। সমাজসেবী শ্রী টিকালাল টাপলো’কে প্রকাশ্য দিবালোকে নিম্ন শ্রীনগরে হত্যা করা হল। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলেন জাস্টিস নিলাকান্ত গাঞ্জো। ঘন্টার পর ঘন্টা তার সেই শবদেহ রাস্তায় পড়ে রইল। দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে এডভোকেট প্রেমনাথ ভাট’কে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে মারা হল। ১৯৯০’এর ৪ঠা জানুয়ারি, .... হিজবুল মুজাহিদিন-এর আফতাব একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষনা করলেন, - সমস্ত হিন্দুদের কাশ্মীর ছাড়তে হবে। আল-সাফা বলে অন্য একটি সংবাদপত্রেও একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হল। ক্রমশঃ পন্ডিতদের ঘরের দরজায় দরজায় কাশ্মীর ছাড়ার নোটিশ লটকানোর প্রক্রিয়া শুরু হল।

তখন উপত্যকা জুড়ে শুধু একটাই আওয়াজ, .... “পণ্ডিত মুক্ত কাশ্মীর”। রাস্তায় রাস্তায় এবং উপত্যকা জুড়ে এমন মিছিল আর স্লোগান, ... এই কাশ্মীর "কাশ্মীরিয়াত" আগে কখনও দেখেনি। কাশ্মীরের সমস্ত মসজিদ একসঙ্গে ঘোষনা করল যে, কাশ্মীর’কে পাকিস্তান বানাতেই হবে। মুজাহিদিন’দের উজ্জীবিত করে, এমন সব গান সর্বত্র বারবার বাজতে থাকে।

“(“ওঠো, জাগো, রাশিয়ার পতন হয়েছে। ভারতও চলেছে সেই পথেই, সময় এসেছে কাশ্মীর’কে স্বাধীন করার” .... ।।)
“হাম কেয়া চাহতে ...?
স্বাধীনতা” ... ।
(আমরা স্বাধীনতা চাই ...।।)

“আজাদি কা মতলব কেয়া?
লা ইল্লাহ ই লাল্লাহ ...
(স্বাধীনতা’র অর্থ লা ইল্লাহ ই লাল্লাহ...।)
(কাশ্মীরে থাকতে হলে আল্লাহ-উ-আকবার বলতে হবে।)
(ওরে পাষন্ড, ওরে কাফের আমাদের কাশ্মীর ছেড়ে পালা...।)
“ইঁহা কেয়া চলেগা ...?
– নিজাম-ই-মুস্তাফা...”
( আমরা চাই এই কাশ্মীর পাকিস্তান হোক, যেখানে পণ্ডিতরা না থাকলেও থাকবে তাদের মেয়েরা ...।। )
....নিশ্চিত আসন্ন মৃত্যুও কাশ্মীরী পন্ডিত’দের ততটা ভয় দেখাতে পারে নি, যতটা তারা আতঙ্কিত হলেন এই শেষ স্লোগানটির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরে।

এবং তাদের বার্তাটি ছিল সুস্পষ্টঃ “ রালিভ, গালিভ ইয়া চালিভ” ... (এসো আমাদের সঙ্গে, মরো ... কিংবা মুক্ত হও...।)
অতএব নিজেদের সম্মান ও জীবন বাঁচাতে, তখন হাতের কাছে যে যা পেলেন তাই নিয়েই বেশীরভাগ পন্ডিত-ই তাদের বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে পড়িমরি করে পালাতে শুরু করলেন। যেনতেন প্রকারেন সেখান থেকে পালাবার জন্য তাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। ট্রাক-লরির ক্যানভাসের ছাউনীর আড়ালে, বাস কিংবা ভাড়ার ট্যাক্সিতে চড়ে শুরু হল পণ্ডিতদের ঘর ছেড়ে পালানোর নির্মম কাহিনী। শুরু হল কাতারে কাতারে হিন্দুর উপত্যকা ত্যাগের রক্তাক্ত ইতিহাস।
সরকার, গোয়েন্দাবাহিনী, সেকুলার মানুষজন, দেশ রক্ষকদের বিবেক ... সবাই রইলেন নিরুত্তর! একটি শব্দ ভুলেও কেউ উচ্চারণ করলেন না।

সেই বীভৎস অত্যাচারের নমুনা জানতে চান? বিখ্যাত কাশ্মীরী শিক্ষাবিদ, সর্বানন্দ কাউল প্রেমী প্রতিদিন যেখানে তিলক পরতেন, কপালের ঠিক সেই অংশে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকে তাঁকে হত্যা করা হল। বি কে গাঞ্জোকে তার বাড়ীতে খুন করে সেই রক্ত মাখানো ভাত খেতে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁর সদ্যবিধবা পত্নী’কে। নার্স শ্রীমতী সরলা ভাট’কে গনধর্ষন করে তাঁর উলঙ্গ মৃতদেহটিকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়। মাট্টানের রবীন্দর পন্ডিতা’র শবদেহের উপর আততায়ীরা আনন্দে নৃত্য করে। সোপিয়ানে শ্রী ব্রিজলাল ও ছোটি’র মৃতদেহকে জীপের সঙ্গে বেঁধে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দীপুরার স্কুলশিক্ষিকা শ্রীমতী গিরজা টিক্কো’ও নৃশংস ভাবে মৃত্যুবরণ করার আগে কাশ্মীরীদের হাতে গণধর্ষনের শিকার হন। বিট্টা কারাটে নামের এক কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ২০ জনেরও বেশি পন্ডিত হত্যা করলেও তার মধ্যে কোন তাপ-উত্তাপ পরিলক্ষিত হয় না। শুধু তাই নয়, তাকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গেই এই কথা সর্বত্র বলে বেড়াতে দেখা যায়।

জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট-ই (JKLF) ছিল ১৯৯০’এর সেই ব্যাপক ও অভিশপ্ত হিন্দু গণহত্যার জন্য অধিকাংশে দায়ী। কাশ্মীরের হাজার হাজার পন্ডিতেরা সেদিন নিহত হয়েছিলেন। হয়েছিলেন পাশবিক ভাবে ধর্ষিতা বা অত্যাচারিতা...।।
এইভাবেই শুরু হওয়া কাশ্মীর হিন্দুশূন্য হবার প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলতেই লাগল এবং ১৯৯১’এর মধ্যেই অধিকাংশ পন্ডিত উপত্যকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন। সন্ত্রাসবাদী এবং কাশ্মিরী মুসলমানেদের একটি বৃহৎ অংশ কাশ্মীরের অমুসলিম জনগোষ্ঠী’কে উচ্ছেদ করার পাশাপাশি লাগাতার তাদের মঠ, মন্দির তথা দেবস্থান অপবিত্র ও লুঠপাট করে, তাতে অগ্নি সংযোগ করতেও কুন্ঠিত হয় না। হাজার হাজার পণ্ডিতদের বাড়ি-ঘর এবং শ’য়ে শ’য়ে মন্দিরে আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ন ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে সেই সমস্ত ভূ-সম্পত্তি গ্রাস করে নেওয়া হয়। এই সবকিছুই ঘটে একটি বিবিধসংস্কৃতি সম্পন্ন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের বুকে

ইন্টারনেটে আপনি এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনি সম্পূর্ণ তথ্য গুলো পেয়ে যাবেন। আমি পুরো আর্টিকেলটি প্রায় ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছি ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.