অলৌকিক: আজও হাওয়াতে ভাসছে ভারতের এই মন্দিরের পাথর


Odd বাংলা ডেস্ক: ভারতবর্ষ মানেই প্রকৃতিক বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। এর পাশাপাশি পুরাণপ্রথিত এই দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে রহস্যে ঘেরা মাইথলজিক্যাল স্টোরি। অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে লেপাক্ষী মন্দিরের সঙ্গে জড়িত আছে এমনই এক মিথ। বাল্মিকী রচিত “রামায়ণ” রাবণ নাকি যখন সীতাকে হরণ করে পুষ্পক রথে ফিরে যাচ্ছিলেন। এই স্থানেই জটায়ু নাকি তাকে বাধা দেয়। সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে সীতাকে রক্ষা করতে ব্যার্থ জটায়ু রাবণের তলোয়েরের আঘাতে লুটিয়ে পড়ে।

“লেপাক্ষী” তামিল এই শব্দের অর্থ হল “ওঠো পাখি”। রামচন্দ্র অন্ধ্রপ্রদেশের এই মন্দিরের কাছে এসেই নাকি আঘাতপ্রাপ্ত জটায়ুকে ডেকে তুলেছিলেন। এই মন্দিরের নাম সেই থেকেই লেপাক্ষী। আসলে উঠতে বলে রামচন্দ্র মৃতপ্রায় জটায়ুকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এই মন্দিরের একটি অংশে রয়েছে রহস্যজনক একটি স্তম্ভ। যা ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। মাটি থেকে ১ ইঞ্চি ফাঁক থাকা এই স্তম্ভটি কখনও মাটি স্পর্শ না করেই বছরের বছর দাঁড়িয়ে আছে। এই ফাঁকা অংশ দিয়ে যদি কাপড় গলিয়ে দেওয়া যায় তবে নাকি পূর্ণলাভ হয় এমনটাই মনে করেন এখানে আগত পূর্ণার্থীরা। বিজয়নগর রাজের পারিষদ দুই ভাই বীরান্না ও বীরুপান্না মন্দিরটি তৈরি করেন। তখন এর নাম রাখা হয়েছিল বীরভদ্র মন্দির।  

যদিও পুরাণ মতে, এই মন্দির তৈরি অগস্ত্য মুনির হাতে। মন্দিরটিতে রয়েছে গণেশ, নন্দী, বীরভদ্র, শিব, ভদ্রকালী, বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর মূর্তি। প্রতিবছর মহাসমারহে দশেরার উৎসব পালিত হয় এই মন্দিরে। এই মন্দিরে আছে একটি প্রকান্ড পাথরের সাপের মুর্তি যা শিব লিঙ্গকে বেষ্টন করে আছে। এই মন্দিরে রয়েছে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন নন্দীমূর্তি। ষোড়শ শতাব্দীর প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে বীরভদ্রের মূর্তি। মহাদেবের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক রুদ্রমূর্তি এই বীরভদ্র। দক্ষযজ্ঞের বিনাশ করেছিলেন মহাদেবের তেজ থেকে নির্গত রুদ্র ভৈরব বীরভদ্র।হায়দরাবাদ থেকে ৪৮০ কিলোমিটার এবং বেঙ্গালুরু থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লেপাক্ষী মন্দির ঘোরার আদর্শ সময় সকালবেলা। কারণ বছরের বেশিরভাগ সময়ই এখানে বেশ গরম। কাজেই দেরি না করে, একইসঙ্গে ইতিহাস ও পৌরাণিক জগতে বিচরণ করতে চলে যান অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে।

ভারতের লেপাক্ষিতে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। মন্দিরের ছাদ ধরে রাখার জন্য এখানে ৭০টি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে একটি পিলার ছাদকে ধরে না রাখার পরিবর্তে বলতে গেলে নিজেই ঝুলে আছে ছাদ থেকে। অর্থাত পিলারটি মেঝে থেকে খানিকটা ওপরে ভেসে রয়েছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এক বৃটিশ প্রকৌশলী এই ঝুলন্ত পিলারের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালান। অনেকে চেষ্টার পর ওই পিলারের এক প্রান্ত মেঝের সাথে স্পর্শ করাতে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু এর ফলে সিলিং এবং ফ্রেস্কো চিত্রকর্মগুলোর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কি কারণে এবং কিভাবে ওই পিলারটি ছাদ থেকে ঝুলে আছে তা আজো রহস্য হয়ে রয়েছে। এর সাথে পাথরের ওপর ৩ ফুট লম্বা একটি পায়ের ছাপ আরো রহস্যময় করে তুলেছে এই মন্টিরটিকে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.