অসম্ভব সুন্দর গান গাইতেন বিবেকানন্দ


Odd বাংলা ডেস্ক: বিবেকানন্দের বহুমুখী প্রতিভার বর্ণনা করা খুবই কঠিন। উনবিংশ শতাব্দীতে তো বটেই বিংশ শতাব্দীতে এ রকম প্রতিভাবান মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে কি?
পাণ্ডিত্য, ত্যাগ-তপস্যা, গভীর আধ্যাত্মবোধ, কর্মতৎপরতা, তত্ত্বদ্রষ্টার উদাহরণ ছাড়াও ছিলেন পরিব্রাজক, প্রচারক, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশক প্রভৃতি।
বংশসূত্রের সঙ্গীতানুরাগ করেছিল তাঁর সঙ্গীত রুচি ও সাধনাকে সচঞ্চল। তৎকালীন সিমুলিয়ার হাবু বাবু (অমৃতলাল দত্ত) ছিলেন সুবিখ্যাত বংশীবাদক এবং জগৎবিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব প্রথম জীবনে হাবুবাবুর কাছেই সঙ্গীত শিক্ষার তালিম নেন। স্বামীজির পিতা মাতা উভয়েরই সঙ্গীতের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। সুকণ্ঠের অধিকারী বিশ্বনাথ দত্ত নিধুবাবুর টপ্পা গাইতে পারতেন আর ভুবনেশ্বরী দেবী বৈষ্ণব রাতভিখারীদের ভজন গান একবার শুনেই সুর-তাল-লয় অক্লেশে আয়ত্ত করে নিতেন।
স্বামীজির সুমিষ্ট কণ্ঠ এবং সঙ্গীতপ্রিয়তার কথা পিতা বিশ্বনাথের অজানা ছিল না এবং সুচারুভাবে পুত্রের সঙ্গীত শিক্ষার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। সুপ্রসিদ্ধ সঙ্গীতবিশারদ্ আহম্মদ খাঁর শিষ্য বেণী ওস্তাদের কাছে স্বামীজি প্রথম গানের তালিম নেন। বাদ্যযন্ত্র যথা চর্মবাদ্য তবলা/পাখোয়াজ - যন্ত্রবাদ্য এসরাজ/সেতারও স্বামীজি ভালোই বাজাতে পারতেন। শোনা যায় তবলা ও পাখোয়াজের তালিম নিয়েছিলেন ওস্তাদ কাশী ঘোষালের কাছে।আর এসরাজ ও সেতার আহম্মদ খাঁর নিকট। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত খেয়াল, খাম্বাজ ও দ্রুপধাঙ্গের গান বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে তালিম নেন।
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের প্রিয় গান:

মন চলো নিজ নিকেতনে
সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে
ভ্রম কেন অকারণে
মন চলো নিজ নিকেতনে।
এই গান শুনলেই ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে পড়তেন।
স্বামীজি রচিত আরাত্রিক ভজন ঠাকুরের নিত্য পূজার অনুসঙ্গ।

খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়।
নিরঞ্জন নর-রূপ-ধর নির্গুণ গুণময়॥
মোচন অঘদূষণ জগভূষণ চিদ্ঘনকায়।
জ্ঞানাঞ্জন-বিমল-নয়ন বীক্ষণে মোহ জায়॥
ভাস্বর ভাব-সাগর চির-উন্মদ প্রেম-পাথার।
ভক্তার্জন-যুগল চরণ তারণ-ভব-পার॥
জৃম্ভিত-যুগ-ঈশ্বর জগদীশ্বর যোগসহায়।
নিরোধন সমাহিতমন নিরখি তব কৃপায়॥
ভঞ্জন-দুঃখগঞ্জন করুণাঘন কর্ম-কঠোর।
প্রাণার্পণ জগত-তারণ কৃন্তন-কলিডোর॥
বঞ্চন-কামকাঞ্চন অতিনিন্দিত-ইন্দ্রিয়রাগ।
ত্যাগীশ্বর হে নরবর দেহপদে অনুরাগ॥
নির্ভয় গতসংশয় দৃঢ়নিশ্চয়-মানসবান।
নিষ্কারণ-ভকত-শরণ ত্যজি জাতি-কুল-মান॥
সম্পদ তব শ্রীপদ ভব-গোষ্পদ-বারি যথায়।
প্রেমার্পণ সমদরশন জগজন-দুঃখ জায়॥
নমো নমো প্রভু বাক্য-মনাতীত মনোবচনৈকাধার।
জ্যোতির জ্যোতি উজল-হৃদিকন্দর তুমি তম-ভঞ্জন হার॥
ধে ধে ধে লঙ্গ রঙ্গ ভঙ্গ বাজে অঙ্গ সঙ্গ মৃদঙ্গ
গাহিছে ছন্দ ভক্তবৃন্দ আরতি তোমার॥
জয় জয় আরতি তোমার হর হর আরতি তোমার
শিব শিব আরতি তোমার॥
খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়॥
Blogger দ্বারা পরিচালিত.