এই বাংলার বুকেই রাজত্ব করতেন আগ্রামেস, সিন্ধু ছাড়াও ভারতের আর এক সভ্যতা, নাম উয়ারী-বটেশ্বর


Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের প্রাচীনতম এই সভ্যতাটি গড়ে উঠেছিল ভারত উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সিন্ধু উপত্যকায়। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বৎসর বা তার আগে থেকে যে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তাকেই সিন্ধু সভ্যতা নামে অভিহিত করা হয়। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নামের দুটি শহরই ছিল এই সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম অংশ। সিন্ধু সভ্যতাটি ছিল খুবই উন্নত।

আয়তনে এটি ছিল প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের মত। যার ব্যাপ্তি ছিল সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে। ভৌগোলিক বিস্তারের বিবেচনায় সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাচীন পৃথিবীর বৃহত্তম সভ্যতা। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ বেলুচিস্তানে এ সভ্যতার অস্তিত্ব লক্ষণীয় ৷ প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের বাস ছিল ঐ অঞ্চলে। এ সভ্যতা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার চেয়ে অনেক বড়।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার চেয়ে এই সভ্যতা ছিল প্রায় ২০ গুণ এবং প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মিলিত এলাকার তুলনায় ছিল ১২ গুণ বড়৷ ঐতিহাসিকদের মতে, সিন্ধু সভ্যতাটি উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে ক্যাম্বে উপসাগর, আরব সাগর এবং পশ্চিমে ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে পূর্বে ভারতের উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল ৷

সিন্ধু সভ্যতাটি খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ এর পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশে সিন্ধু সভ্যতার কোন নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় নি। উপমহাদেশে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো পর আরো ৪১ টি স্থানে নগর সভ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় । যার মধ্যে বাংলাদেশের পুণ্ড্রনগর ওরফে মহাস্থানগড় এবং উয়ারী বটেশ্বর রয়েছে। 

মহাস্থানগড় নিয়ে মোটামোটি বেশ তথ্য পাওয়া গেলেও আমরা উয়ারি-বটেশ্বর নিয়ে তেমন আর্টিকেল খুঁজে পাই না। 

যেভাবে পাওয়া যায় এ ঐতিহাসিক স্থান

১৯৩৩ সাল, নরসিংদীর উয়ারী নামের একটি স্থানে একদল শ্রমিক মাটি খননের কাজ করছে। হঠাৎ কারো একজনের কোদলের কুপে টং করে একটি আওয়াজ হয়। উৎসুক সবাই মাটি খুঁড়ে একটি পাত্রে সঞ্চিত কিছু রৌপ্য মুদ্রা পায় । মুদ্রাগুলো বেহাত হতে থাকে, খবর পেয়ে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০ টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। প্রাপ্ত রৌপ্য মুদ্রা বঙ্গভারতের প্রাচীনতম রৌপ্য মুদ্রা । সেই থেকে ঐ এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সংগ্রহ শুরু হয়। হানিফ পাঠান বুঝতে পারেন, নিশ্চয়ই এখানে কোনো প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন লুকায়িত আছে। তৎকালীন সময়ে সাপ্তাহিক মোহাম্মদি পত্রিকায় "প্রাচীন মুদ্রা প্রাপ্তি" শিরোনামে এ সম্পর্কিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

শুরু হয় নতুন নতুন বিষ্ময়কর আবিষ্কার

১৯৩৩ সালে প্রথম মুদ্রা পাবার পর থেকে  জনাব হানিফ পাঠান ও তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সংগ্রহ শুরু করেন। এর পরে প্রায় দুই যুগ তেমন বড় কোন সংগ্রহের কথা জানা যায় নি। ১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামে শ্রমিকদের খননের ফলে দুটি লোহার পিণ্ড পাওয়া যায়। একটি দেখতে ত্রিকোণাকার, অপরটির এক মুখ চোখা। ১৯৫৬ সালে উয়ারী গ্রামের একজন কৃষক মাটি খনন করছিল। মাটি খনন করতে গিয়ে কৃষক জাড়ু মুদ্রা একটি বেশ বড় ভান্ডার খুঁজে পান। রৌপ্য মুদ্রার ঐ ভান্ডারে চার হাজারের মত মুদ্রা পাওয়া যায়। চার হাজার মুদ্রায় প্রায় নয় সেরের মত ওজন হয়। এ মুদ্রাগুলো সে একজন রৌপ্যকারের কাছে মাত্র ৮০ টাকা সেরে বিক্রি করে দেয়। যার ফলে এ মুদ্রাগুলোর তথ্য পাওয়া গেলেও দুঃখজনকভাবে মুদ্রা কোন নমুনা সংগ্রহে নেই।


হানিফ পাঠান পরবর্তীতে নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেন, যেখানে তিনি এ ধরনের নিদর্শনগুলো জমিয়ে রাখতেন। হানিফ পাঠানের ছেলে জনাব হাবিবুল্লাহ পাঠান ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অবৈতনিক সংগ্রাহক হিসেবে জাতীয় জাদুঘরের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি উয়ারী বটেশ্বর অঞ্চলে পাওয়া পাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, পাথরের গুটিকা, লৌহ কুঠার ও বল্লম জাদুঘরে অর্পণ করেন।
এর পরে ১৯৮৮ সালে শাহাবুদ্দিন মাটির নিচ হতে ব্রোঞ্জের ৩৩ টি পাত্র পান। শাহাবুদ্দিন লোভে পড়ে মাত্র ২০০ টাকায় সবগুলো পাত্র এক ভাংগারির কাছে বিক্রি করে দেয়। জাড়ু মিয়ার মত শাহাবুদ্দিনের উদ্ধারকৃত এ নমুনাগুলোও চিরদিনের মত হারিয়ে যায় !

এবার হাবিবুল্লাহ পাঠান একটি বুদ্ধি বের করেন। তিনি অর্থ প্রদানের সাপেক্ষে প্রাচীন প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান দিবার জন্যে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের নিয়োগ প্রদান করেন। এ চিন্তা খুব ভাল কাজে দেয়। এভাবে তিনি বিষ্ণুপট্ট, ব্রোঞ্জের তৈরি ধাবমান অশ্ব, উচ্চমাত্রায় টিনমিশ্রিত পাত্র, শিব, নৈবেদ্য পাত্র, রেলিক কাসকিট -এর ভগ্নাংশ, পাথরের বাটখারা, নব্যপ্রস্তর যুগের বাটালি, লৌহকুঠার, বল্লম, পাথরের তৈরি সিল, ত্রিরত্ন, কচ্ছপ, হস্তী, সিংহ, হাঁস, পোকা, ফুল, অর্ধচন্দ্র , তারকা, রক্ষাকবচ (Amulate), পোড়ামাটির কিন্নর, সূর্য ও বিভিন্ন জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি, রিংস্টোন, ব্রোঞ্জের গরুড়, কয়েক সহস্র স্বল্প মূল্যবান পাথর ও কাচের গুটিকা ইত্যাদি সংগ্রহ করতে সমর্থ হন।

দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং ২০০০ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বরে নিয়মিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ শুরু হয়। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত সমস্ত প্রত্ন নিদর্শন বিশ্লেষণ করলে প্রত্ন প্রস্তর যুগ, নব্য প্রস্তর যুগ, আদি ঐতিহাসিক যুগ এবং ঐতিহাসিক যুগে এ অঞ্চলে জন বসতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহের পরেও উয়ারি অনেক দেরিতে মানুষের আকর্ষন করতে সমর্থ হয়। এক সময় দেশের  প্রত্নতত্ত্ব গবেষকরা উৎসাহিত হয়ে উঠেন। অবশেষে অনেক বছর অবহেলিত থাকার পরে ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন উদ্যমে শুরু হয় খনন কাজ। 
এই দলের উপনেতা ছিলেন জনাব মিজানুর রহমান। আর এই খননকাজেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন সে সময়ের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ। একই সাথে স্থানীয় জনগণ এ কাজে সহযোগিতা করেন। পরে এই কাজের জন্য সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল মুঠোফোন ফোন কোম্পানী 'গ্রামীণ ফোন'। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি তারিখে, এই খনন কাজে প্রথমবারের মতো আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দিতে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 
খনন কাজের পরই আবিষ্কার হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব-রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, স্বল্প-মূল্যবান পাথর, পাথর দিয়ে তৈরি বাটখারা, কাচের পুঁতি এবং উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা। এই খনন ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে উল্টো-পিরামিড আকৃতির স্থাপত্যকর্ম। প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোই পরবর্তীতে উয়ারী-বটেশ্বরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
পরবর্তিতে উয়ারি বটেশ্বরে পাওয়া বেশ কিছু বস্তুর কার্বন-১৪ টেস্ট করার পর গভেষকগণ ধারনা করেন যে, উয়ারি সভ্যতার বসতির সময় ছিল ৪৫০ খ্রিস্টপূর্ব। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারী প্রত্মস্থলে আবিষ্কৃত হয়েছে ৬০০ মি. x ৬০০ মি. আয়তনের চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের ৫-৭ ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এ ছাড়াও দুর্গের চারদিকের রয়েছে ৬৩৩ মিটার পরিখা (যদিও কালের ব্যবধানে তাতে মাটি ভরাট হয়েছে)। ভরাট হলেও পূর্ব প্রান্তের পরিখার চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। আরেকটি বহির্দেশীয় (৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট) পরিখা সোনারুতলা গ্রাম থেকে শুরু করে বটেশ্বর হানিয়াবাইদ, রাজারবাগ ও আমলাব গ্রামের ওপর দিয়ে আঁড়িয়াল খাঁ নদের প্রান্তসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটিকে স্থানীয় লোকজন "অসম রাজার গড়" বলে থাকেন।
দুর্গের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৫.৮ কি. মি. দীর্ঘ, ২০ মি. প্রশস্ত ও ১০ মি. উঁচু অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। সম্ভবত এটি দ্বিতীয় দুর্গ প্রাচীর হিসেবে উয়ারী দুর্গনগরের প্রতিরক্ষার কাজ করত।  ‘অসমরাজার গড়’ নামে পরিচিত দুর্গ নগরীতে খননের পরে তৎকালীন সমাজে ব্যবহার্য অনেক জিনিসপত্রের নিদর্শন পাওয়া গেছে। 
উদাহরন হিসেবে বলা যায়, তৎকালীন সমাজে বসবাসের জন্যে গর্তের ঘর (বৃষ্টিবহুল বাংলার গর্ত বসতি কতটুকু সম্ভব, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ধারণা করে নেয়া হয়েছে যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ বা তার কিছু আগে এ মহাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক ছিল।), পানি সংগ্রহের কুপ, নানা আকৃতির চুলা, পোড়া মাটির লাল ও কালো পাত্র।পাওয়া গেছে পাথরের পরিমাপক খন্ড। গভেষকরা এ খন্ডগুলোর অনেক গুলোকে বিভিন্ন জ্যামিতিক ও ত্রিকোণমিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হত বলে ধারনা করেন।  এ ছাড়া পাওয়া গেছে প্রচুর পুঁতি। পুঁতির সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অলংকার তৈরি করতে পারত বলে ধারনা করা হয়। এ কারণে ধারণা করা হয়, দূর-দূরান্তের জনপদ এবং শহরগুলোর সাথেও উয়ারী-বটেশ্বরের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিল।
ওয়ারী-বটেশ্বর গ্রাম দুটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে প্রাচীন বসতি ছিল। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন- রাঙ্গারটেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজাল, চন্ডীপাড়া, পাটুলি, জয়মঙ্গল, হরিসাঙ্গন, যশোর, কুন্ডাপাড়া, গোদাশিয়া, এবং আব্দুল্লাহ নগরেও প্রাচীন বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।
পরবর্তিতে ২০০৪ সালে পুনরায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খননের সূত্রে, উয়ারিতে  ১৮ মিটার দীর্ঘ, ৬ মিটার প্রশস্ত ও ৩০ সেন্টিমিটার পুরু একটি প্রাচীন পাকা রাস্তা আবিষ্কৃত হয়। এ রাস্তাটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইটের টুকরা, চুন, উত্তর ভারতীয় কৃষ্ণ মসৃণ মৃৎপাত্রের টুকরা, তার সঙ্গে রয়েছে ল্যাটারাইট মাটির লৌহযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা। গবেষক দলের ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এ রাস্তাকে আড়াই হাজার বছর আগের বলে দাবি করেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রত্নতত্ত্ব অধ্যাপক  দিলীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, এতো দীর্ঘ ও চওড়া রাস্তা এর আগে পুরো গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ সভ্যতায় কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি। গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ বলতে সিন্ধু সভ্যতার পরের নগরায়ণের সময়কে বোঝায়। ফলে যেটি আবিষ্কৃত হয়েছে বলা হচ্ছে তা তধু বাংলাদেশেই নয়, সিন্ধু সভ্যতার পর ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরোন রাস্তা হিসেবে বিবেচনায় আসে।
২০০৭-০৯ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ইটের একটি বিশেষ স্থাপত্য আবিষ্কৃত হয়। মাটির নিচে ১২ ফুট উচ্চতায় চারটি দেয়াল এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কাদামাটির গাঁথুনিতে স্থাপত্যটিতে বড় বড় ইট ব্যবহৃত হয়েছে। অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে ইট বিছানো মেঝে। পোড়ামাটির টালি আবিস্কৃত হওয়ায় অনুমিত হয় এই স্থাপত্যটির ছাদ টালি দ্বারা আবৃত ছিল। কিন্তু পাওয়া যায় নি  দরজা, জানালা কিংবা নিচে নামার সিঁড়ি ফলে এ স্থাপনাটির এর ব্যবহার জানা যায়নি। এটি কোন কাজে ব্যবহৃত হতো, তা গবেষণাধীন। তবে পোড়ামাটির একটি নব দৃষ্টিগোচর হওয়ায় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের স্থাপত্যটি বৌদ্ধদের কুণ্ড বা পুকুনিয়া বলে মনে হয়।
সম্প্রতি এক সীমিত আকারের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড মৃৎপাত্র, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, কাঁচের পুঁতি, পাথরের ফ্লেক, চিলতা এবং সার অংশ, লৌহবস্তু এবং লৌহ গলানোর ফলে তৈরি বল জাতীয় বস্তু, মাটির দেয়ালের অংশ এবং পোড়ানো কার্যক্রমের চিহ্ন খুবই গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও পাথর ও কাঠের হাতকুঠার, বাটালি, তীরের ফলক ইত্যাদি পাওয়া গেছে, যা প্রাগৈতিহাসিক বা প্রস্তর যুগের বলে ধারণা করা হয়।
আশেপাশে পঞ্চাশটির মতো পুরনো জায়গা পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন-রাঙ্গারটেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজাল, চন্ডীপাড়া, পাটুলি, জয়মঙ্গল, হরিসাঙ্গন, যোশর, কুন্ডাপাড়া, গোদাশিয়া এবং আব্দুল্লানগরেও প্রাচীন বসতি চিহ্ন পাওয়া যায়। 
স্থানীয়ভাবে মন্দিরভিটা নামে পরিচিত ধুপিরটেক, কামরাব গ্রামে একটি ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে অষ্টম শতকের বৌদ্ধ পদ্ম-মন্দির। উয়ারী থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিবপুর উপজেলার ধুপিরটেকে এই মন্দির আবিষ্কৃত হয়।
খনন এলাকার মানুষেরা জানান এই স্থানটিকে তারা মন্দিরের ভিটা নামেই চিনতেন। তারা মাঝে মাঝে ঢোলের শব্দ শুনতে পেতেন। তাদের ধারণা ছিল বাঁশ ঝাড়ে ছাওয়া এই টেকে হয়তো কোন হারানো রতন লুকিয়ে ছিল। স্থানীয় মানুষদের সহযোগীতায় ২০০৯ সাল থেকে সেখানে খনন শুরু হয়। সুফী মুস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খনন শুরু করেন।
২০১০ সালে খনন শুরুর তিনমাস পর গবেষকরা বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন আবিষ্কার করেন। আবিষ্কৃত হয় প্রদণি পথ, বারান্দা, বেদি, পদ্ম। এসকল নিদর্শনের উপস্থিতি স্থাপনাটিকে বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করে। মোট সাতটি পদ্ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়টি পদ্ম ভঙ্গুর অবস্থায় পাওয়া যায়। এগুলোর পুনরানয়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
ধারণা করা হয়, এই মন্দিরটি প্রায় ১,৪০০ বছর আগের ইটে নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীন এই মন্দিরটি বর্গাকার (১০.৬ মিটার x ১০.৬ মিটার)। এর দেয়াল কাদামাটির গাঁথুনির।  ৮০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত এই দেয়ালের ভিত্তিমূল এক মিটার।  মূল দেয়ালের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ৭০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সমান্তরালভাবে ৭০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত আরও একটি দেয়াল রয়েছে।
মূল দেয়ালের চারদিকে ইট বিছানো ৭০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত একটি প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। এই পথের বাইরের দিকে মূল দেয়ালের সমান্তরাল ৬০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত আরও একটি দেয়াল রয়েছে। তবে পূর্বদিকে মূল দেয়াল ও বাইরের দেওয়ালের মধ্যকার দূরত্ব ৩.৫ মিটার। পূর্বদিকে প্রদক্ষিণ পথ ও একটি বারান্দা রয়েছে।  
উয়ারীর সাথে এই মন্দিরের সম্পর্ক কি তা জানতে চাইলে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 
‘উয়ারী দূর্গ নগরীকে কেন্দ্র করে আরো অনেকগুলো প্রত্নস্থান রয়েছে। শিবপুরে প্রাপ্ত বৌদ্ধ মন্দিরের সময়কাল এখনো নির্ণিত না হলেও এর সাথে উয়ারীর সম্পর্ক অনুমান করা যায়। কারণ একটি সভ্যতার শুরু এবং বিস্তৃতি ও ধ্বংসের সময়কাল লম্বা। বিস্তৃত এলাকা নিয়েই গড়ে ওঠে কোন সভ্যতা। ফলে এই মন্দিরের সাথে উয়ারীর সম্পর্ক অথবা যোগাযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আরো গবেষণা এবং খননের ফলেই এসব বিষয়ে নানা তথ্য দেয়া যেতে পারে। এই মন্দিরের প্রাপ্তি উয়ারী এবং তার আশপাশের সর্ণোজ্জ্বল সভ্যতার নিদর্শনকেই তুলে ধরে।’
যোশর ইউনিয়নের জানখারটেক প্রত্নস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে বর্গাকৃতির বৌদ্ধ বিহারিকা। উত্তরদিকে একটি আধুনিক ঘর থাকায় বিহারের প্রবেশপথ শনাক্ত না করা গেলেও এতে ১৫টি ভিক্ষু কক্ষ শনাক্ত করা গিয়েছে। সোমপুর মহাবিহারে ভিক্ষু কক্ষ সংখ্যা ১৭৭ এবং শালবন বিহারে ১১৫টি। ভিক্ষু কক্ষের বিচারে মহাবিহার ও বিহার নামকরণ করা হয়। এতদিন মহাবিহার ও বিহারের নাম শুনলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বিহারিকা পাওয়া গেল। 
উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত জিনিসগুলো, চুন সুরকির রাস্তা, ইট নির্মিত স্থাপত্য, দুর্গ- এর সবকিছুই বহন করে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার পরিচয়। বর্তমানে সবগুলোই প্রত্ন স্থাপনা অস্থায়ীভাবে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে, প্রাচীনতা-অন্বেষীদের জন্য উয়ারী গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে একটি উন্মুক্ত জাদুঘর।

উয়ারী- বটেশ্বরের সমসাময়িক ইতিহাস

ইতিহাস নিয়ে নাড়াছাড়া করে অথচ গ্রিক সম্রাট আলেক জান্ডার নাম শুনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইতিহাস বলে, আলেকজান্ডার ৩২০ খ্রিস্টপূর্বে ভারতবর্ষের পশ্চিম দিকে আক্রমণ করেছিল । সেসময় প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি নামে একটি পরাক্রান্ত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের কথা জানা যায়। 
গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রটি গঙ্গারিডি, গঙ্গারিডই, গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাহৃদয়, গঙ্গারাঢ় গঙ্গারাষ্ট্র প্রভৃতি নামেও পরিচিত।গঙ্গা নদিটি ভারতের উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরা যায় গঙ্গা বিদৌত অঞ্চল বলে একে গঙ্গারিডি নাম ধরা যায়।  ‘প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী’ গ্রন্থে কাবেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখক-ঐতিহাসিকদের লেখনীতে বহুলকথিত ‘গঙ্গারিডি’ বা ‘গঙ্গারিডাই’ জাতি ছিল সম্ভবত প্রাচীন বঙ্গজাতি । অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন,
‘ নন্দবংশীয় রাজা ধননন্দ আলেকজান্ডারের সমসাময়িক। এঁর রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। গ্রিক লেখকদের কাছে ইনি ‘আগ্রামেস’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীতে ২০,০০০ অশ্বারোহী, ২০০,০০০ পদাতিক, ২০০০ রথ এবং ৩০০০ হাতি ছিল। গঙ্গাহৃদি ও প্রাসি তাঁর শাসনাধীন ছিল।' (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড। পৃষ্ঠা, ১৩১)
ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দ লিখেছেন,‘রাঢ়ে তখন পরাক্রান্ত গঙ্গরিডই রাজ্য প্রতিষ্ঠিত।’ প্রাচীন রাঢ়-এর অবস্থান ছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলায়। ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দর বক্তব্য অনুযায়ী প্রাচীন বাংলার পশ্চিম অংশ গঙ্গা গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ ছিল। তা হলে , উয়ারী- বটেশ্বর-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কি কোনও সম্পর্ক ছিল? উয়ারী- বটেশ্বর কি প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের -এর অংশ? কিংবা উয়ারী- বটেশ্বর-এর কি গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী ছিল? সৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান এরকম সম্ভাবনার কথা একবার উল্লেখ করেছিলেন।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী মনে করেন যে, এ অঞ্চলের (উয়ারী- বটেশ্বর) সঙ্গে দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া এবং রোমান সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী- বটেশ্বর গ্রামে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপাত্র, স্যান্ডউইচ কাঁচের পুঁতি, স্বর্ণ দিয়ে আবৃত এক ধরণের কাঁচের পুঁতি, উচ্চ মাত্রায় টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ পাওয়া গেছে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী যে অনুমান করেছে এসব প্রত্নবস্তু তার পক্ষে প্রমাণ দেয়।
​গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমি তাঁর Geographia গ্রন্থে এই অঞ্চলে 'সৌনাগড়া' নামক একটি অঞ্চলের নাম উল্লেখ করেছিলেন। ধারনা করা হয়, টলেমির এই নামটি হয়তো সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁও। বঙ্গদেশের এই অঞ্চলের পলিবিধৌত নতুন ভূমিতে যে বসতি স্থাপিত হয়েছিল, তার বিস্তৃত অংশ ছিলো  বর্তমান সময়ের সাভার, কাপাসিয়া, বর্ষী, শ্রীপুর, টোক, বেলাব, মরজাল, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, উয়ারী-বটেশ্বর। আর এই অঞ্চলের যোগাযোগ ও কৃষিকাজের জন্য মূখ্য ভূমিকা রেখেছিল   লক্ষা, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, প্রভৃতি নদ-নদী। এর ভিতরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আঁড়িয়াল খাঁ নদের মিলনস্থলের অদূরে ছিল কয়রা নামক একটি শুষ্ক নদীখাত। এর দক্ষিণতীরে মাটির উঁচু ভূখণ্ডে অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর।
​সে সময়ের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে বলা যায়  এই অঞ্চলের বহির্বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে এই অঞ্চল ব্যবহৃত হতো।  টলেমির বিবরণ থেকে জনাব দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর অনুমান করেছেন   আদি ঐতিহাসিক যুগে উয়ারী-বটেশ্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও রোমান সাম্রাজ্যের মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণের সওদাগরি আড়ত (Entry port) হিসেবে কাজ করতো। এই বিচারে অনেকে মনে করছেন যে,  টলেমি-কথিত 'সৌনাগড়া' ছিল একালের 'উয়ারী-বটেশ্বর'।
ধারনা করা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশের আদি-ঐতিহাসিককালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের। ২৩০০ বছরের প্রাচীন ৪০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিল্ক রুটের সঙ্গেও যে উয়ারী-বটেশ্বর সংযুক্ত ছিল, নানা নিদর্শনগত প্রমাণ থেকে সম্প্রতি তা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

কিভাবে যাবেন ও থাকবেন কোথায়?

প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত এত তথ্য জানার পর আপনার ইচ্ছে হতে পারে আড়াই হাজার বছর পূর্বের নগরটিতে পা ফেলার। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে সিলেট গামী কোন বাসে চড়ে মরজাল নামক বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। 
সায়দাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জগামী হাওর বিলাস, অনন্য সুপার, কমলাপুর থেকে বিবাড়িয়াগামী তিশা, সোহাগ, কিংবা বি আর টিসিতে চড়ে বসুন। কন্ট্রাকক্টরকে মরজাল বাস স্ট্যান্ড নামিয়ে দিতে বলবেন। বাস অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ১০০-২০০ টাকা। চাইলে সায়দাবাদ থেকে লোকাল বাসেও যেতে পারেন সিলেট গামী লোকাল বাসে দামধর করে উঠতে হবে । সে ক্ষেত্রে সাধারনত ৫০-৬০ পড়ে।  
অথবা মহাখালি থেকে বিআরটিসির ভৈবগামী বাসে বা চলনবিল/অন্যনা সুপার পরিবহণের বাসে উঠুন। ভৈরবের মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান। সময় লাগবে দুই ঘন্টা ভাড়া ১০০ টাকা।
সেখান থেকে খনন কাজের জায়গা যাওয়া যায় সিএনজি করে। প্রতিজন ৩০ টাকা, রিজার্ভ ১২০-১৫০ টাকা।
উয়ারী তো চলে আসলেন। সকালে এসে বিকালে চলে যেতে পারবেন কিংবা চাইলে রাত্রে থাকতে পারবেন। উয়ারী বটেশ্বরে একটি সরকারি গেস্ট হাউজ আছে। বাংলোটির পরিবেশ খুব সুন্দর। রাতের বেলা খেয়ে দেয়ে অনায়াসে অনেক সময় বারান্দায় কাটালেও বিরক্তি আসবে না। লিটন নামে একজন কেয়ার টেকার আছে। বাজার ও রান্নার দায়িত্ব অনায়াসে দেয়া যায় এর কেয়ারটেকারের ওপর। গেস্ট হাউজটি বুকিং দেওয়া খুব সোজা, ভাড়াও কম। ডাক বাংলোর ভাড়া ৫০০ টাকা ও ১২০০ টাকা (এসি রুম)। কেয়ারটেকার লিটনের ফোন নম্বর ০১৯৩৩২৫১২৪২
শেষ কথা
৫০ টির মত প্রত্নস্থান নিয়ে উয়ারী নগর-সভ্যতার বিস্তৃতি চিহ্নিত করা হয়। গবেষকরা উয়ারীকে অবশ্য এই নগর-সভ্যতার কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেছেন। নদী তীরবর্তী উয়ারী অঞ্চলটি ছিল একটি বাণিজ্যকেন্দ্র, এর পাশ দিয়ে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে দণি ও দণি-পূর্ব এশিয়া হয়ে সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। 
উয়ারীর ভূ-প্রাকৃতিক বিন্যাস এবং উয়ারীতে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন বাণিজ্য-কেন্দ্র হিসেবে উয়ারীর সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রতীক রূপে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণে রৌপ্যমুদ্রা স্থানটিকে প্রাক-নাগরিক জনপদ ও পরবর্তীকালের নাগরিক সভ্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া হাতিয়ারকে পুরাপ্রস্তর ও নব্যপ্রস্তর যুগের বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি উয়ারী-বটেশ্বর উৎখননে তাম্র-প্রস্তর যুগের সুস্পষ্ট নিদর্শন, মাটিতে গর্ত করে মানুষের বসবাসের ঘর এবং কালো মৃৎপাত্র আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাম্র-প্রস্তর যুগেও এখানে মানববসতি ছিল।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.