জানেন কেন পালিত হয় মকর সংক্রান্তি, এর নেপথ্যে রয়েছে কোন পৌরাণিক ব্যখ্যা


Odd বাংলা ডেস্ক: হাতে আর মাত্র কয়েকটা, আর তার পরেই মকরসংক্রান্তি। আগামী ১৪ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে বাংলা পৌষ মাসের মেয়াদ। এরপর শুরু মাঘ মাস। রাশিবিজ্ঞানীদের কথায়, এক মাস থেকে আর এক মাসে পদার্পণের এই বিশেষ মুহূর্ত যখন সূর্য নতুনভাবে 'ধনু' রাশি ত্যাগ করে 'মকর' রাশিতে প্রবেশ করে। শুরু হয় সূর্যের 'উত্তরায়ণ'। এই উপলক্ষে পৌষ মাসের শেষ দিনটি পালিত হয় 'মকরসংক্রান্তি' বা 'পৌষ সংক্রান্তি' হিসেবে। 

কিন্তু সূর্য তো স্থির নক্ষত্র। এর আবার উত্তর দিকে গমন কিভাবে সম্ভব? এর ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানে রয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর দিনটি বিজ্ঞানে 'জলবিষুব' নামে চিহ্নিত। এই তারিখ থেকে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অর্থাত্‍ দূরত্ব বাড়তে থাকে সূর্যের। আর ধীরে ধীরে সূর্যের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে দক্ষিণ গোলার্ধ। কর্কটক্রান্তি রেখার সীমানা পেরিয়ে সূর্য ঢলে পড়তে থাকে মকরক্রান্তি রেখার দিকে। এই মহাজাগতিক ঘটনাকেই বলা হয় সূর্যের 'দক্ষিণায়ন'।

আর এই কারণেই ধীরে ধীরে শরতের পর থেকেই ভোর রাতের দিকে ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ অনুভূত হয়। এই সময় কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় তীব্র দহন অনুভূত হয়। আর পশ্চিমবঙ্গে পৌষ মাসের শেষ দিন চলে আসা মানেই ধীরে ধীরে উষ্ণতা বৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া। পৃথিবীর উত্তর ভাগ ক্রমশ ঢলে পড়তে থাকে সূর্যের দিকে। বড় হতে থাকে দিন, আর ছোট হতে থাকে রাত। 'মকরক্রান্তি' থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সেই মুহূর্তের সূচনালগ্নই 'মকরসংক্রান্তি'।বিজ্ঞানের ভাষায় সূর্যের 'উত্তরায়ণ'।

'মকরসংক্রান্তি'-র পৌরাণিক ব্যাখ্যা- 'মকরসংক্রান্তি'-র পৌরাণিক ব্যাখ্যাও যথেষ্ট চমকপ্রদ। সূর্য নাকি এই লগ্নে তাঁর ছেলে মকর অধিপতি শনির বাড়ি যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিলনের দিন হিসেবে পালন করা হয়। আবার মহাভারতে ভীষ্মের শরশয্যার সঙ্গে মকরসংক্রান্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গল্প আলাদা মাত্রা পেয়েছে। প্রিয় প্রপৌত্র অর্জুনের অগুন্তি শরে কুরুক্ষেত্রের ভূমিতে শরশয্যা হয়েছিল ভীষ্মের। ভীষ্ম পিতা শান্তনুর থেকে পেয়েছিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর বর। তাই শরশয্যায় শুয়েও তিনি সহ্য করেছিলেন মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা। কারণ, সেইসময় চলছিল সূর্যের দক্ষিণায়ন।

দেবলোকে দক্ষিণায়নকে রাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। রাতের বেলা সবাই যেমন ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘুমোন, তেমনই ওই সময় দেবতারাও স্বর্গদ্বার বন্ধ করে ৬ মাস টানা বিশ্রাম নেন। ওইসময় যদি ভীষ্ম স্বেচ্ছা মৃত্যু বরণ করতেন, তাহলে তাঁকে স্বর্গের দরজায় দাঁড়িয়ে দেবতাদের ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করতে হত। তাছাড়া কথিত আছে সূর্যের দক্ষিণায়নে দেহত্যাগ করা মানে প্রাণের পুনর্জন্ম লাভ করা।

আর উত্তরায়ণে মৃত্যু মানে পৃথিবী থেকে চিরমুক্তি। তাই মর্ত্যে থেকে শরশয্যার যন্ত্রণা সহ্য করা অনেক ভাল বলেই মনে হল ভীষ্মের কাছে। ভীষ্ম অপেক্ষা করতে লাগলেন সূর্যের উত্তরায়ণের জন্য। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মকরসংক্রান্তির পুণ্যক্ষণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভীষ্ম। অন্যদিকে সূর্যের উত্তরায়ণের শুরু মাত্রই খুলে গেল স্বর্গের দ্বার। ঘুম ভাঙল দেবতাদের। তাঁদের তুষ্ট করতে মর্ত্যলোকে শুরু হয়ে গেল যজ্ঞ, উপাদেয় মিষ্টান্ন সহযোগে পুজোপাঠ। আর ভীষ্মের মহাপ্রয়াণকে স্মরণে রেখে মর্ত্যবাসীর কাছে 'কর্কট সংক্রান্তি'-র চেয়ে অধিক গ্রহণীয় হয়ে উঠল 'মকরসংক্রান্তি'।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.