কেন মনে করা হয় যে নেতাজি তাইহোকুতে মারা যান


Odd বাংলা ডেস্ক: অধিকাংশ জাপানি এখন আর এই রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন না। তথাপি প্রবীণ ভক্তদের অকাট্য বিশ্বাস: নেতাজি তাইওয়ানেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তাইহোকুতে নেতাজির মরদেহ সৎকার করে জাপানি বৌদ্ধধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কিছু চিতাভস্ম টোকিও পর্যন্ত নিয়ে আসেন। তখন বিধ্বস্ত টোকিওতে এই চিতাভস্ম সংরক্ষণ করার মতো কেউ যখন এগিয়ে আসেননি তখন নেতাজিভক্ত রেভারেন্ড মোচিজুকি তা নিয়ে এসে একটি বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করেন মন্দিরের দ্বিতলে অবস্থিত মূলবেদির ডানপাশে। আজও সেখানে এই চিতাভস্ম রক্ষিত আছে। প্রতি বছর ১৮ আগস্ট সকলের জন্য মন্দির উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। একবার যদিওবা আগুন লেগে মন্দিরের কিয়োদংশ পুড়ে গেলে চিতাভস্মও বিনষ্ট হয়ে যায় বলে কথিত আছে কিন্তু তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
 যুদ্ধের পর প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, কন্যা ইন্দিরা গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী এখানে এসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। নেতাজির আত্মীয় অমিয়নাথ বসু, শিশিরকুমার বসু, কৃষ্ণা বসু প্রমুখও এসেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোন রাজনৈতিক নেতা এই মন্দির পরিদর্শন করেননি এমনকি নেতাজির শেষ অনুসারী বলে কথিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নন--এটা এক রহস্য। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা, শেখ হাসিনা একাধিকবার জাপানে এলেও কেউ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাননি। কোন রাষ্ট্রদূতও গিয়েছেন কিনা জানা যায় না। আমার জানামতে বাংলাদেশ থেকে কবি নির্মলেন্দু গুণ, সাংবাদিক চিত্ত রিবেরু, কবি সমুদ্র গুপ্ত, এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ, কথাসাহিত্যিক ফখরুজ্জামান চৌধুরী, সাহিত্যিক.অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান, লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ শামসুজ্জামান খান রেনকোজি মন্দিরে গিয়েছেন নেতাজির আবক্ষ প্রস্তরমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। 

উল্লেখ্য যে, এই মূর্তি স্থাপন করেছেন নেতাজিভক্ত শ্রীমতি এমোরি কিকুকোর কন্যা কাজুকো মাৎসুশিমা ১৯৯৫ সালে নেতাজির পঞ্চাশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বর্তমানে সত্তোর্ধ এবং প্রতি বছরই উপস্থিত হন স্মরণসভায়। এবারও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন, নেতাজির দুই দেহরক্ষী ইয়ামামোতো তেৎসুরু, ইসাও ইয়ামাদা সেইসঙ্গে গবেষক মোতোইউকি নেগেশি, গবেষক তোশিআকি ওওৎসুকা, কিয়োদো সংবাদসংস্থার অন্যতম সম্পাদক তাকেজুমি বান, গবেষক ইয়োশিআকি হারা, জাপান-ভারত অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিরোশি হিরাবায়াশি ও সিনিয়র ডিরেক্টর ইউজি হারা, রাজনীতিক ও সুগিনামি-ওয়ার্ড পৌর পরিষদ-সদস্যা ইয়োশিকো মাৎসুউরা, নেতাজি গবেষক গেন নাকামুরা প্রমুখ। প্রধান অতিথিদ্বয় ইয়ামামোতো ও ইয়ামাদা নেতাজি সম্পর্কে আবেগ থরোথরো দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন। কিভাবে জার্মানির ডুবোজাহাজ থেকে জাপানি ডুবোজাহাজে নেতাজিকে স্থানান্তরিত করা হয় সেই লোমহর্ষক বর্ণনা দেন! 
উল্লেখ্য যে, তিন জন দেহরীর একজন শত্রুপক্ষের গুলিতে নিহত হন। ইয়ামামোতা বিভিন্ন সময়ে সরকারি ও বেসকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উপদেষ্টা হিসেবে দেশ-বিদেশে কাজ করেছেন, লিখেছেন 'কো-রান নো সেকাই' বা 'কোরানের জগৎ' নামে একটি গ্রন্থ। সম্প্রতি নিজের স্মৃতিকথা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন সেখানে অনেক অজানা কথা লিখেছেন নেতাজি সম্পর্কে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.