বৃহদেশ্বর: মনে করা হয় এই মন্দির ঈশ্বর নিজেই তৈরি করেছিলেন


Odd বাংলা ডেস্ক:  ভারতের অন্যতম বড় বৃহদেশ্বরের মন্দিরটি তানজোরে ১০১০ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২১৬ ফুট উঁচু এই মন্দিরটি নির্মাণে আনুমানিক ১ লাখ ৩০ হাজার টন পাথর ব্যবহার করা হয়েছিলো। মন্দিরটির চূড়ায় অবস্থিত ৮০ টন ওজনের গোলাকার কুম্বমটি একটি মাত্র গ্রানাইট পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু হাজার বছর আগে মন্দিরটি নির্মাণ করার সময় এত ওজনের এই পাথর খন্ডটি কিভাবে অত উঁচুতে তোলা হয়েছিলো তা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে আজও।


ভারতের প্রাচীন ও বৃহত্তম মন্দিরগুলোর অন্যতম তামিলনাড়ুর বৃহদেশ্বরের মন্দির। ঐতিহ্যবাহী এ মন্দির তৈরি করা হয়েছে দ্রাবিড় স্থাপত্যের অনুকরণে। এটি ‘রাজারাজেশ্বরের মন্দির’ বা ‘রাজারাজেশ্বরম’ নামেও পরিচিত। তামিলনাড়ুর থানজাভুরে হিন্দুদের পবিত্রতম এই মন্দিরটি ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব হেরিটেজ’ হিসাবে। ১০১০ সালে তামিল মহারাজা রাজা রাজা চোলা প্রথম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে এই মন্দির পরিচিতি লাভ করে পেরুভুদাইয়ার মন্দির হিসেবে। স্থানীয় লোকরা মন্দিরে পূজা-অর্চনায় আসতো আর ভক্তি জানাতো।


মন্দিরের নির্মানশৈলী অপূর্ব। বিশাল সব গ্রানাইট পাথর কেটে গোটা মন্দির তৈরি করা হয়েছে। মূল মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ২১৬ ফুট। চূড়ায় রয়েছে একটি আস্ত পাথর। পাথরটির ওজন প্রায় ৮০ টন। মূল ফটকে তিনটি পাথরের তৈরি বিশাল ষাঁড়ের মূর্তি রয়েছে। এগেুলো লম্বায় ১৬ ফুট ও উচ্চতায় ১৩ ফুট। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, সুবিশাল শিব মন্দিরটি তামিল মহারাজা রাজা রাজা চোলা প্রথম স্থাপন করেন। সে সময়েই প্রথম মহান 'তামিল চোলা' স্থাপত্যের নকশা তৈরি হয়। সেই নকশা এখনও আছে মন্দিরের সংগ্রহশালায়। মন্দিরের জাঁকজমকের বিবরণ ও নিয়ম আচার লিপিবদ্ধ করা আছে পুঁথিতে। সেই নিয়ম আচার আজও মেনে চলা হয়। মন্দিরের কারুকাজে ফুটে উঠেছে সে সময়ের সমৃদ্ধি ও জীবনবোধ। এরপর এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী থেকেই চোলা শৈলী ভারতের বিভিন্ন স্থানে অন্য মাত্রায় রূপ পায়। জানা যায়, একবার রাজা স্বপ্নের মাঝে আদেশপ্রাপ্ত হন মন্দির স্থাপনের। সেই স্বপ্নাদেশেই রাজা এই রাজকীয় মন্দির স্থাপন করেন।


দ্রাবিড় মন্দিরগুলির ন্যায় স্থাপত্য ও ঐতিহ্যপূর্ণ এই মন্দিরটি প্রকাশ করে দক্ষিণ ভারতের মতাদর্শকে। কিছুটা ইউরোপীয় শিল্পের ছোঁয়াও লক্ষ্য করার মত। মন্দিরের ভেতরে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রাজার ও দেব-দেবীদের তৈলচিত্র, ব্রোঞ্জের তৈরি বিভিন্ন দেবতার মূর্তি। মন্দিরের স্থাপত্য ও শৈল্পিক নির্দশন অনেকটা শ্রীলঙ্কার রাজাদের তৈরি মন্দিরগুলির মতোই। এ থেকে ধারণা করা হয়, রাজা রাজা চোলা প্রথম শ্রীলঙ্কার কোনও মন্দিরকে অনুকরণ করে এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। সেই সময় মন্দিরের স্থপতি ছিলেন কুনজারা মাল্লান রাজা রাজা পেরুনথাচান। বাস্ত্তু-শাস্ত্র এবং আগম-এর মতো প্রাচীন গ্রন্থের উপর নির্ভর করে গোটা মন্দিরটি গড়ে তুলেছিলেন পেরুনথাচান। সেই সময় বাস্তুশাস্ত্রের স্থপতি হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়।


যাইহোক, গ্রানাইটের তৈরি মন্দিরটির কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিলো পাঁচ বছর। মন্দিরের ভেতর আছে ৫ মিটার লম্বা নৃত্যরত শিবের মূর্তি। রয়েছে মন্দিরের ভাষ্কর্যে তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ভারতনাট্যমের নানা চিত্র। বৃহদেশ্বর মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব হলেও পাশাপাশি মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে চন্দ্র, সূর্য, দক্ষিণ মূর্তির বিশালাকার নানা চিত্র আঁকা রয়েছে। এখানে আট মিটার লম্বা 'অষ্ট-দিকপালক'-র-( ইন্দ্র, অগ্নি, যম, বরুণ, নৈঋত, বায়ু, ঈশান, কুবের) মূর্তি রয়েছে। ১০০০ বছরের পুরনো মন্দিরটির সর্বত্র রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও ভাষ্কর্যের ছাপ। মোট ৮১টি নৃত্যেরত ভঙ্গির কারুকাজ দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয়। এছাড়া মন্দিরের ছাদে রয়েছে রঙিন তৈলচিত্র। মন্দিরের প্রধান দেবতা যখন শিব, তাই শিবরাত্রিতে অত্যন্ত ধুমধাম করে পূজা-অর্চনা হয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.