ভারতেই রয়েছে এই গ্রাম, যেখানে বজরঙ্গবলীর পুজো করা তো দূর, তাঁর নাম নেওয়াও নিষিদ্ধ


Odd বাংলা ডেস্ক: যে অঞ্জনিপুত্রের নাম নিলে কেটে যায় সমস্ত বিপদ, দূর হয় সমস্ত সংকট, পরিবারের ওপর থেকে কেটে যায় সমস্ত কুপ্রভাব, সেই সংকটমোচনের পুজো করা নিষিদ্ধ ভারতের এই গ্রামে। এমনকী হনুমানজির নাম পর্যন্ত কেউ উচ্চারণ করলে তাকে গ্রাম থেকে নির্বাসিত করা হয়। বিশ্বাস হচ্ছে না তো! কিন্তু এর নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক ব্যাখ্যা। 

রাবণ পুত্র মেঘনাদ যখন মেঘের আড়াল থেকে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং লক্ষ্মণের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন তখন মেঘনাদের নিক্ষেপ করা বানে অচৈতন্য হয়ে পড়ে লক্ষণ। জানা যায় একমাত্র বিশেষ এক সঞ্জীবনীই বাঁচাতে পারে লক্ষণের প্রাণ। এরপর সেই বিশল্যকরণী সঞ্জীবনীর সন্ধানেই বেরিয়ে পড়েন হনুমান। জাম্ববান-এর থেকে তিনি জানতে পারেন যে হিমালয়ের গন্ধমাদন পর্বতে এই বিশল্যকরণী সঞ্জীবনী পাওয়া যায়। সেইমতো বিশল্যকরণীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন হনুমান। 
গন্ধমাদনের সন্ধানে হনুমানজী বর্তমান উত্তরাখণ্ডের চামোলি গ্রামে পৌঁছান। এরপর সেখানে খুঁজতে থাকেন পর্বত। তখন সেই গ্রামেরই এক মহিলা তাঁকে গন্ধমাদন পর্বতের সন্ধান দেয়। কিন্তু পর্বতে উঠে কিছুতেই সেই বিশল্যকরণী চিনতে পারেননি হনুমান। আর তাই গোটা পর্বতটাই কাঁধে করে তুলে নিয়ে যান বীর হনুমান। পূরাণে এইটুকুর রয়েছে কিন্তু এরপর কী হয়েছিল জানেন? 

হনুমানের এই কাণ্ডে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। হনুমান এই পর্বতটিকে উপড়ে নিয়ে যাওয়ায় গ্রামের মানুষের জীবন-যাপন বিঘ্নিত হয়। শুধু তাই নয় গন্ধমাদন পর্বতকে ভগবান বলে মনে করতেন গ্রামবাসীরা। তাই সেই গ্রামে  ঘোষণা করে দেওয়া হয়, বজরঙ্গবলীর যেন পুজো না করা হয়। আজও সেই রীতি বজায় রয়েছে। আর তার পর থেকে উত্তরাখণ্ডের এই গ্রামে হনুমানজির পুজো তো বন্ধ করে দেওয়া হয়ই, তার ওপর তাঁর নাম জপ করাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, যে মহিলা তাঁকে গন্ধমাদন পর্বত চিনিয়ে দিয়েছিলেন, সেই মহিলাকেও গ্রাম থেকে নির্বাসিত করা হয়। এই কাহিনি সেখানকার স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে আজও ঘুরে-ফেরে। 
লক্ষ্ণণের সুস্থ হয়ে ওঠার পর সেই পর্বত যথাস্থানে রেখে আসার কথা ছিল। কিন্তু, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের ব্যস্ততায় হনুমান সেটি রেখে আসেন বর্তমান ওড়িশার এক স্থানে। প্রসঙ্গত মহাভারত-এ বলা আছে, কৌরব-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য এই পর্বতে বসবাস করতেন, সেই কারণে এই পর্বতের আর এক নাম দ্রোণগিরি। 

আজও এই দ্রোণগিরি পর্বতমালা বিভিন্ন ঔষধি গাছ-গাছালি দ্বারা বেষ্টিত। আর চামোলি গ্রামের বসবাসকারী ভুটিয়া উপজাতির মানুষ দ্রোণগিরি পর্বতকে খুব পবিত্র বলে মনে করেন। আজও এই পর্বতকে উৎসর্গ করে পূজার্চনা করা হয়। কিন্তু হনুমানকে যেহেতু এক মহিলাই দ্রোণগিরি পর্বত দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেই কারণে এই পুজোয় আজও অংশ নিতে পারেন না মহিলারা। 

কীভাবে পৌঁছাবেন দ্রোণগিরি?- দিল্লি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত।সড়ক পথে ধৌলি গঙ্গা নদীর তীরে জুম্মা পর্যন্ত পর্যটকরা যেতে পারবেন। জুম্মা থেকে ট্রেক করে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন দ্রোণগিরিতে। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.