নেহেরু থেকে মোদী, ভারতের এই প্রধানমন্ত্রীদের জমানায় দেশে এসেছেন যে সাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট


Odd বাংলা ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন সপ্তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে পা রাখলেন। ট্রাম্পের ২ দিনের ভারত সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং জামাই জ্যারেড কুশনার। তবে ট্রাম্পের আগে যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন সময়ে ভারত সফরে এসেছিলেন তারই একটি টাইমলাইন প্রস্তুত করেছে Odd বাংলা ডট কম। দেখে নিন সেই তালিকা। 

১) ড্যুইট ডি আইজেনহওয়ার, ১৯৫৯

ড্যুইট ডি আইজেনহওয়ারই ছিলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ১৯৫৯ সালে ভারক সফরে এসেছিলেন। তাঁর এই সফরটি হয়েছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আমলে। রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছানোর পরই ২১টি গান স্যালুট দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনায় জানানো হয়। সেবার দিল্লির রাস্তায় নেমেছিল মানুষের ঢল। যাতে তাঁরা ৩৪ তম মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে এক ঝলক হলেও দেখতে পান। হুড খোলা গাড়িতে রোড শো করেছিলেন তিনি। 

নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে জনসভায় বক্তব্য রাখার পাশাপাশি আইজেনহওয়ার সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদেরও সম্বোধন করেছিলেন। চার দিনের সফরে তাঁর 'স্বপ্নের জায়গা' তাজমহলও পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কে নিরিখে এই সফরটিকে সফল বলেই মনে করা হয়। 

২) রিচার্ড এম নিকসন, ১৯৬৯
রিচার্ড এম নিকসন ১৯৬৯ সালের ৩১ জুলাই ভারত সফরে এসেছিলেন। নিকসনের ভারত সফরের মেয়াদ ছিল একদিনেরও কম। আসলে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উত্তেজনা হ্রাস করতেই তাঁর এই ভারত সফর বলে মনে করা হয়। এর দুবছর পর ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় (যা বাংলাদেশ গঠন পরিচালিত করে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ঘোষিত টেপ অনুসারে নিকসন হোয়াইট হাউসে জানিয়েছিলেন যে, ভারতীয়রা 'পিচ্ছিল এবং বিশ্বাসঘাতক'।

৩)জিমি কার্টার, ১৯৭৮
জনতা পার্টির মোরারজি দেশাইয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তাঁর তিন দিনের ভারত সফরে, তিনি পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছিলেন এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছিলেন। কার্টার নয়াদিল্লির কাছে একটি গ্রামে গিয়েছিলেন উপহার হিসাবে একটি টেলিভিশন সেট আনতে।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭৪ সালে পারমাণবিক পরীক্ষার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে নয়া দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যেকার সম্পর্কের বরফ গলাতেই কিন্তু কার্টারের ভারত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রী দেশাইকে ভারতের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিতে রাজি করতে সক্ষম হননি, যা আমেরিকার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।

৪) বিল ক্লিনটন, ২০০০
কার্টারের ভারত সফরের প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভারত সফরে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তাঁর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন স্থবিরতার পরে হয়েছিল। পাশাপাশি নব্বইয়ের দশকে ভারত যখন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাজার খুলে দেওয়ার পর এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ক্লিনটনের এই ভারত সফর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করে। ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের সময়, ক্লিনটনের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পক্ষে ছিল। আর এই প্রথমবারের মতো মার্কিন মুলুক ভারতকে সমর্থন করেছিল। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক বিদেশ নীতি বিশেষজ্ঞ প্রমিত পাল চৌধুরীর কথায়, রাষ্ট্রপতি ক্লিনটনই ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্লিন্টনের আগে প্রায় ২০ বছর কোনও রাষ্ট্রপতি ভারত সফর করেননি। তার এই সফর আরও একবার প্রমাণ করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অনেকটাই গুরুত্ব দিচ্ছে। 

৫) জর্জ ডাব্লু বুশ, ২০০৬
২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের জন্য সারা বিশ্বব্যপী নিন্দার মুখে পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২০০৬ সালে নয়া দিল্লিতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ। তাঁর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিক্ষোভের আবহ দেখা গিয়েছিল। এমনকী সংসদের বামপন্থী সদস্যরা তাঁর ভাষণ বয়কট করেছিলেন। তবে তাঁর তিন দিনের এই সফর দু'দেশের মধ্যেকার কৌশলগত সম্পর্ককে বিশেষ করে বাণিজ্য ও পারমাণবিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রকে জোরদার করে তুলেছিল। 

বুশ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একসঙ্গে পরমাণু চুক্তির কাঠামো চূড়ান্ত করেছিলেন যা পারমাণবিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের বাজার থেকে ভারতকে আর আলাদা করে রাখতে পারেনি। উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র সহযোগী মাইকেল কুগেলম্যান-এর কথায়, ১৯৯০-এর দশকের গোড়া থেকে এবং বিশেষত ২০০০ এর দশকের শুরু থেকেই ভারত-মার্কিন সম্পর্ক দ্রুত উন্নতি লাভ করেছিল।

৬) বারাক ওবামা, ২০১০ এবং ২০১৫
বারাক ওবামা হলেন একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন দু'বার সরকারি সফরে ভারতে এসেছিলেন। প্রথমবার তিনি নয়া দিল্লির বদলে মুম্বই এসেছিলেন ২০১০ সালে। এর আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাস হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। এই সেই মুম্বই হামলা যাতে প্রায় ১৬৬জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই সফরকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিলেন এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সুরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছিলেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীত্বকালে বারাক ওবামা আবার ভারতে আসেন ২০১৫ সালে। সেবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসাবে ভারতে এসেছিলেন ওবামা। সেবারের সফরে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা বিভক্ত না হলেই ভারতের সাফল্য আসবে। 

৭) ডোনাল্ড ট্রাম্প, ২০২০
ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন সপ্তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে স্বাগত জানাল ভারতবাসী। এর আগে হিউস্টনে আয়োজিত হাউডি মোদী অনুষ্ঠানে গিয়ে মার্কিন নিবাসী ভারতীয়দের সামনে বক্তব্য রেখেছিলেন মোদী। এবার সেই আতিথেয়তা ফিরিয়ে দিতেই ভারতে ট্রাম্পের গ্র্যান্ড ওয়েলকাম করলেন নরেন্দ্র মোদী। দুদিনের ঝটিকা সফরে আমেদাবাদে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম মোতেরা স্টেডিয়াম-এর উদ্বোধন করেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে সবরমতীচে গান্ধী আশ্রম, তাজমহল, রাজঘাট দর্শনেও যান সস্ত্রীর ট্রাম্প। 


আরও পড়ুন -অতিথি দেব ভবঃ চিরাচরিত ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানালেন নরেন্দ্র মোদী

চিনের পর ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকারি আধিকারিকের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে ১৯৯৫ সালে ১১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০১৮ সালে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক দ্বীপাক্ষিক বাণিজ্য সাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। তবে ট্রাম্প নয়াদিল্লিকে আরও বেশি ছাড়ের জন্য চাপ দেওয়ায় দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে একটা দোলাচল রয়েছে। তবে ট্রাম্পের ভারত সফর মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বিরাট হাতিয়ার এবং ট্রাম্প-মোদী রসায়ন আরও সুদৃঢ় করার একটা মাধ্যম সেকথাই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। 

ছবি সৌজন্যে- আলজাজিরা
Blogger দ্বারা পরিচালিত.