বিদায় বেলাতেও পিছু ছাড়ল না রাজনীতি! তবে মানুষের মনে তিনি নায়কই থাকবেন


Odd বাংলা ডেস্ক: রাজনীতি এমনই এক পঙ্কিল পেশায় পরিণত হয়েছে এখন যে, ভিন্ন জগতের তারকারা কোন পরীক্ষা ছাড়াই এখানে ফ্রি-এন্ট্রি পেয়ে যান। রাজনীতিতে তারকা-তোষণ একটা ব্র্যান্ডভ্যালু তৈরি করার তরিকা হিসেবে নিয়েছে উপমহাদেশের পার্টিগুলো। এই শতাব্দীতে সেটা বহুল মাত্রায় বেড়েছে বুর্জোয়া পার্টিগুলোতে। তাপস পাল রাজনীতিতে এই সময়টারই প্রোডাকশন।

২০০১ সালে চলচ্চিত্র শিল্পে প্রায় জীবন্ত-জনপ্রিয় থাকার সময়টাতেই তিনি নাম লেখালেন রাজনীতিতে। অভিনেতা থেকে নেতা হলেন। সঙ্গে রিলের নায়কের স্খলন ঘটে জন্ম হতে থাকল এক রিয়েল খলনায়কের!

অথচ, তাপস পাল শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন না শুধু; উভয় বাংলায় সমান জনপ্রিয়ও ছিলেন। বলিউডেও তার বিপরীতেই নিজের প্রথম ছবি করেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত, ‘অবোধ’-এ।

টালিউডে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জিত মল্লিক উত্তর-যুগে নায়কের শূন্যতা পূরণ হয়েছিল তারই হাত ধরে। আশি-নব্বই দশকে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বয়সানুক্রমে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, তাপস পাল ও প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জীর। তবে, তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার বিচারে বয়সে চার বছরের ছোট প্রসেনজিৎ এগিয়ে ছিলেন তাপসের চেয়ে। তাপস যেমন এগিয়ে ছিলেন তার চেয়ে তিন বছরের বড় চিরঞ্জিৎয়ের চেয়ে।

নব্বই দশকের প্রজন্মের কাছে টালিউডের চলচ্চিত্র মানেই জুটি হিসাবে প্রসেনজিৎ-শতাব্দী রায় এবং তাপস পাল-দেবশ্রী রায়।এদেরই পথ ধরেই এসেছিলেন অভিষেক চ্যাটার্জি। কিন্তু, প্রসেনজিৎ ও তাপস পালের জনপ্রিয়তার সঙ্গে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেননি। তবে, নায়িকা হিসেবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সম্ভবত জনপ্রিয়তায় প্রসেনজিৎয়ের পাশেই বসেছেন নব্বই থেকে আজ অবধি। কিন্তু, কোন সে বিষবৃক্ষ যা তাপস পালকে অমন চূঁড়া থেকে ধাক্কা মেরে ভূপাতিত করল?

রাজনীতি! তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!রাজনীতিতে সাফল্য পাচ্ছিলেন। ২০০১ ও ২০০৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে জিতেছিলেন বিধানসভা নির্বাচন। এরপর আরও বড় জায়গায় গেলেন। একেবারে সাংসদ! ২০০৯ ও ২০১৪ সালে পরপর দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জিতে গেলেন।

এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু, সম্ভবত রাজনৈতিক ক্ষমতাবানের অতি আত্মবিশ্বাস গত ৬ বছরে তাকে একদম জনপ্রিয়তার শীর্ষ থেকে বানিয়ে দিল পতিত নেতা! ২০১৪ সালের জুনে তার সেই বিতর্কিত মন্তব্য ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব’ – ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দেখে পর্দার নায়ক তাপস পালের সঙ্গে মেলাতে পারিনি। এর পর আর কখনই তাপসমুখ দেখার আগ্রহ হয়নি!

চিটফান্ড কাণ্ডে নাম উঠল তার। এরপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘটল আরও বড় ঘটনা। কুখ্যাত রোজভ্যালি দুর্নীতিতে সিবিআই গ্রেফতার করল তাকে। জেলজীবনে অসুস্থতার কারণে ১৩ মাস পর ১ কোটি টাকার বন্ডে মুক্তি মিলেছিল বটে, কিন্তু ততদিনে নায়কের খলনায়কের আসনে বসা নিশ্চিত হয়ে গেছে। কারাগারে অন্তরীণ কিংবা ঘরে অন্তরীণ থাকার মধ্যে তখন আর তেমন কোন ফারাক নেই তার জীবনে। জীবনটা তাঁর এভাবেই চির অন্তরালে চলে গেল!

তাপস পাল যা ছিলেন, তা স্যালুলয়েডে, গত শতাব্দীতে। এই শতাব্দীর তাপস পাল পথভোলা আত্মভোলা রাজনৈতিক পুতুল, যার চিতা জ্বলার বহু আগেই লোকে তাঁর কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়েছে। সেই যে কুশপুত্তুল জ্বলেছিল, তা চিরতরে ছাইভষ্ম হয়ে গেল!
Blogger দ্বারা পরিচালিত.