হেলমেট এলো কেমন করে? জানা আছে কি?


Odd বাংলা ডেস্ক: ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের কথা ক্রিকেটপ্রেমীরা কমবেশি সবাই জানেন। ডন ব্রাডম্যানের দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ান দলকে বেঁধে রাখার জন্য সরাসরি ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করার কৌশল গ্রহণ করেছিলেন ইংলিশ বোলাররা। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান আহত হয়েছিলেন বলের আঘাতে।  তখনও ক্রিকেট অঙ্গনে আসেনি হেলমেটের ভাবনা। ১৯৩০-এর দশকে অবশ্য ইংল্যান্ডের এক ব্যাটসম্যান প্যাটসি হেনড্রেন বানিয়েছিলেন বিশেষ এক ধরণের টুপি। কাউকে কাউকে মাথায় তোয়ালে জড়িয়েও দেখা গেছে ব্যাট হাতে মাঠে আসতে। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনিল গাভাস্কারও মাথা বাঁচানোর জন্য বানিয়েছিলেন বিশেষ এক ধরণের টুপি। কিন্তু কোনো কিছুকেই হেলমেটের উত্তরসূরি বলা যায় না।

ব্যাটসম্যানের মাথায় প্রথমবারের মতো হেলমেট সদৃশ বস্তু দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত। সে সময় ক্রিকেট অঙ্গন কাঁপিয়ে তুলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, কলিন ক্রফটরা কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানদের মনে। অস্ট্রেলিয়ার পেস জুটি ডেনিস লিলি ও জেফ থম্পসনও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। বল না, ব্যাটসম্যানদের দিকে যেন একেকটা আগুনের গোলাই ছুঁড়ে দিতেন দুর্ধর্ষ এই পেসাররা। তাঁদের ভয়ঙ্কর সব ইয়র্কার থেকে বাঁচার জন্যই মাথায় হেলমেট পরার কথা ভাবতে হয়েছিল সেসময়ের ব্যাটসম্যানদের।

dennisক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম হেলমেট অবশ্য কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে না, দেখা গিয়েছিল কেরি পেকারের বাণিজ্যিক টুর্নামেন্ট ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের সৌজন্য। ১৯৭৭ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজের প্রথম মৌসুমে অ্যান্ডি রবার্টের বাউন্সারে চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ডেভিড হুকসের। এই ঘটনার পরেই নিজের মাথা বাঁচাতে হেলমেট পরে ব্যাট করতে আসেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেনিস অ্যামিস। সেটা ছিল একটা মোটরসাইকেলের হেলমেট। সেসময় অনেকেই কাপুরুষ বলে গালি দিয়েছিলেন অ্যামিসকে। কিন্তু অ্যামিসের সেই সিদ্ধান্তটিই অনেকটা বদলে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে। তার দেখাদেখি টনি গ্রেগসহ আরও অনেকে পরা শুরু করেন হেলমেট।

grahamআন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবারের মতো হেলমেট পরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রাহাম ইলোপ। ১৯৭৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়। সেটিও ছিল মোটরসাইকেলের হেলমেটের মতো। বলাই বাহুল্য যে, শুরুর দিকের সেই হেলমেট পরে খেলতে বেশ কষ্টই হতো ব্যাটসম্যানদের। অনেক ভারী সেই হেলমেটগুলোয় বাতাস চলাচলের সুবিধা ছিল না বললেই চলে। সামনে মোটা প্লাস্টিকের গ্লাস থাকায় বল দেখার ক্ষেত্রেও পড়তে হতো অসুবিধায়। তারপরও মহামূল্যবান মাথা বাঁচানোর তাগিদে সেগুলোই মাথায় দিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছিলেন সে যুগের ব্যাটসম্যানরা। এরপর ধীরে ধীরে গ্লাভস-প্যাডের মতো হেলমেটটাও হয়ে ওঠে ব্যাটসম্যানদের একটি আবশ্যিক সুরক্ষা উপাদান।


ভিভ রিচার্ডসের মতো কিছু ব্যাটসম্যান অবশ্য আছেন যাঁরা কখনোই মাথায় চাপাতে চাননি হেলমেট নামের এই ‘বোঝা’টিকে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১২১টি টেস্ট ও ১৮৭টি ওয়ানডে খেলা রিচার্ডস সব সময়ই মাঠে নেমেছেন টুপি পড়ে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.