আমাজনের গহনে আজও বেঁচে আছে ডাইনোসর, মিলেছে প্রমাণ


Odd বাংলা ডেস্ক: ক্রিপ্টোজুলজি- অর্থাৎ রহস্যময় প্রাণী নিয়ে যে বিজ্ঞানের কাজ কারবার, সেখানে কিংবদন্তির বিগফুট বা ইয়েতির পাশাপাশি আরেকটি প্রাণীর নাম খুব জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। লক নেসের জলদানব বা নেসি নামেই এটি সর্বাধিক পরিচিত। স্কটল্যান্ডের ঐতিহাসিক লক নেসের এই রহস্যময় জলদানবটি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে, স্কটল্যান্ড এবং এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে এই জলদানবটি যেভাবে পরিচিত তা হচ্ছে, এটি আকারে অনেক বড় প্রগৈতিহাসিক কোনো ডানাওয়ালা প্রাণীর মতো দেখতে ছিলো।

লক নেসের রহস্যময় জলদানব নেসি ! আসলেই কি আছে পৌরাণিক এই দানবটি ?? 

যদিও বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি প্রাণী, তবে ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে কিছু দিন আগ পর্যন্তও অনেকেই দাবি করেছেন তারা লক নেসে অদ্ভূত কোনো প্রাণীকে দেখতে পেয়েছেন। লক নেসের জলদানবের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ৬ষ্ঠ শতকে লেখা একটি আত্মজীবনী থেকে। ১৮৭১ সালের অক্টোবরে ডক্টর ম্যাকেঞ্জি নামে এক ব্যক্তি লক নেসের পানিতে বিশাল কিছু একটা ভাসতে দেখেন যা কিছুক্ষণ পরেই মিলিয়ে যায়। ১৯৩৩ সালের ২২ জুলাই জর্জ স্পাইসার নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী চোখের সামনে অদ্ভূত এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি প্রাণীকে হেঁটে যেতে দেখেন বলে দাবি করেন। লম্বা গলা এবং ২৫ ফুটের মতো দীর্ঘ ওই প্রাণীটি তাদের গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে যাচ্ছিলো বলে জানান তারা। ওই বছরের আগস্টে আর্থার গ্রান্ট নামে আরেক ব্যক্তি রাতের বেলা লকের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় ছোট মাথা এবং লম্বা গলাওয়ালা একটি প্রাণীকে লকের পানিতে নেমে যেতে দেখেন বলে দাবি করেন। ১৯৩৮ সালে স্কটল্যান্ডের ইনভারনেসশায়রের চিফ পুলিশ কনস্টেবলের লেখা এক চিঠি থেকে জানা যায়, ওই সময় লক নেসের জলদানবটিকে জীবিত বা মৃত ধরার জন্য একদল শিকারী হাজির হয়েছিলো যারা দানবটিকে ধরার জন্য বিশেষভাবে তৈরি বর্শা তৈরি করে এনেছিলো। ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে একটি নৌকা থেকে লক নেসের পানিতে চালানো সোনার রিডিং থেকে জানা যায় পানির ৪৭৯ ফুট নিচে একটি বিশালকার কিছু ছিলো যা ওই নৌকাটিকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তা কি ছিলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯৩৪ সালে রবার্ট কেনেথ উইলসন নামে এক সার্জন লক নেসের ওই জলদানবের ৪টি ছবি তুলতে সক্ষম হন যার মধ্যে দুটি ছবিতে ওই প্রাণীটিকে প্রথম পরিস্কারভাবে দেখতে পাওয়া যায়। একটি ছবিতে ওই প্রাণীর ছোটো মাথা এবং পেছনের দিক দেখা যাচ্ছিলো। ছবিটি ওই বছরের ২১ এপ্রিল ডেইলি মেইল পত্রিকায় ছাপা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ছবিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ছবিটি ভুয়া, এটি নিয়ে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে এমন প্রমাণও তুলে ধরতে থাকেন অনেকে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত এক বইয়ে এই ছবিটি যে সঠিক নয় তার বর্ণণা দেয়া হয়। ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এক পর্যটক লক জি ই টেইলর লকের পানিতে অদ্ভুত কিছুর ছবি ৩ মিনিট ধরে ১৬ মিলিমিটার রঙিন ফিল্মে ধারণ করেন।



 মরিস বার্টন নামে এক লেখক এই ভিডিওটি নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত এক বইয়ে ওই ভিডিওচিত্রের মাত্র একটি ফ্রেম ছাপা হয়। ১৯৬০ সালে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার টিম ডিন্সডেল লক নেসের পানিতে কোনো প্রাণীর পিঠের কুঁজ দেখতে পান এবং ৪০ ফুট ভিডিও ধারণ করেন। এই ছবি নিয়েও বিতর্ক হয় এবং ওটা কোনো নৌকার ছবি ছিলো বলে মত দেন অনেকেই। তবে ১৯৯৩ সালে ছবিটি আরো ভালোভাবে পরীক্ষা করে ডিসকভারি কমিউনিকেশন্সের একটি তথ্যচিত্রে জানানো হয়, এটি ভুয়া বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ২০০৭ সালের ২৬ মে ল্যাবরেটরী কর্মী গর্ডন হোমস লক নেসের পানিতে একটি ৪৬ ফুট লম্বা কালো প্রাণীর ভিডিও ধারণ করেন যা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রদর্শণ করা হয়। তবে এই ফুটেজ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। ২০১২ সালের ৩ আগস্ট জর্জ এডওয়ার্ডস নামে এক ব্যক্তি নেসির সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য একটি ছবি প্রকাশ করেন যা ২০১১ সালের ২ নভেম্বর তোলা হয়েছিলো বলে তিনি জানান। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে লক নেসের ওই জলদানবকে তিনি খুঁজে বেরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি পানির ওপর ভেসে থাকে বিশাল কোনো প্রাণীর পিঠের কুঁজের ছবি নিতে সক্ষম হন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই ছবিটিও ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। বিভিন্ন সময় লক নেসের ওই রহস্যময় জলদানব নিয়ে যে আলোচনা বিতর্ক চলেছে, তাতে করে অনেক উৎসাহী মানুষই আগ্রহী হয়েছে ওই জলদানবটিকে খুঁজে বের করতে। ১৯৩৪ সালে এডওয়ার্ড মাউন্টেইন নামে এক ব্যক্তি ২০ জন সঙ্গী এবং ক্যামেরা নিয়ে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কিছুই খুঁজে পাননি। ১৯৬২ থেকে ৭২ পর্যন্ত ১০ বছর ধরে লক নেস অনুসন্ধান বুর্যো নামে একটি সংগঠন লক নেসে অনুসন্ধান চালায়। এক হাজারেরও বেশি সদস্য ওই অনুসন্ধানে যোগ দিয়েছিলো। ১৯৭২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রবার্ট রাইনস নামে এক গবেষক লেকর পানিতে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান চালান। পানির নিচে ক্যামেরা পাঠিয়ে বেশ কিছু ছবি তোলা হয় যেগুলো নিয়েও বিতর্ক হয়েছে এবং এখনো চলছে। ১৯৮৭ সালে ২৪টি নৌকা নিয়ে অপারেশন ডিপস্ক্যান নামে একটি অনুসন্ধান চালানো হয়েছিলো। এ অনুসন্ধানে পানির ৫৯০ ফুট নিচে অস্বাভাবিক বড় আকৃতির কিছুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু তা কি ছিলো তা নিশ্চত হওয়া যায়নি। লক নেসের এই ভীষণ রহস্যময় প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো আছি কি না কিংবা কোনো কালে ছিলো কি না তা নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক হয়েছে অনেক। অনেক মনে করেন এখনো হয়তো ওই লকের তলায় লুকিয়ে রয়েছে প্রাণীটি। আবার অনেকের বিশ্বাস, কোন কালেই ওখানে কিছু ছিলো না। আর থেকে থাকলেও অনেক আগেই তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.