১৪ই ফেব্রুয়ারি আসলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের ফাঁসি হয়েছিল

প্রতীকি ছবি, Image Source: 'Braveheart'

Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে। দীর্ঘদিন ধরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে গল্প ইতিহাস ও রহস্যের মধ্যে, রোমান্স ও ভালোবাসার দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসকে ভালোবাসার মাস হিসেবে পালন করা হয়। এবং আমরা জানি যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে খ্রিস্টান ও প্রাচীন রোমান উভয় ঐতিহ্যের সাথেই ওতপ্রোতো ভাবে জড়িত। কিন্তু সেন্ট ভ্যালেনটাইন কে ছিল, এবং কিভাবে তিনি এই প্রাচীন আচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকেন তা হয় তো আমারা অনেকেই জানি না । চলুন জেনে নেই সে সম্পর্কে।

ক্যাথলিক চার্চ, অন্তত তিনজন ভিন্ন ব্যক্তিকে ভ্যালেনটাইন বা ভ্যালেন্টিনাস নামে স্বীকৃতি দেয়। এক কিংবদন্তি ‘ভ্যালেনটাইন’ তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের একজন যাজক ছিল এ বিষয়েই সবচাইতে বেশি মত পাওয়া যায়। সম্রাট ২য় ক্লডিয়াস সিদ্ধান্ত নেয় যে বিবাহিত পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষ, সৈন্য হিসেবে বেশি ভালো । তাই তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন । ভ্যালেনটাইন রাজার অবিচার বুঝতে পেরে গোপনে তরুণ প্রেমিক প্রেমিকাদের বিয়ে দিতে থাকেন। যখন ভ্যালেনটাইন এর এই কার্য ফাস হয়ে যায় তখন রাজা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। এবং ১৪-ই ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু কার্যকর করা হয়।

আরও পড়ুন: যে মুসলমান বাইজিকে সমাজ 'বেশ্যা' বললেও, তিনি দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন

অন্য এক গল্পে জানা যায়, ভ্যালেনটাইন ছিলেন একজন খ্রিস্টান যুবক, যিনি জেল-সুপারের কনিস্ট কন্যার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন, জেল-সুপার ঘটনা জানতে পেরে তাকে ধরে এনে কারাগারে বন্দী করে এবং পচন্ড প্রহার করতে থাকে। কারা রক্ষকদের কঠোর অত্যাচারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যু বরন করেন এবং মৃত্যুর আগে জেল খানায় বসে তিনি তার প্রেমিকাকে ভালোবাসা জানিয়ে এক খানা চিঠি লিখে যান যা ভ্যালেনটাইন ডে তে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। যার ফলে এখন সবাই ভালোবাসার মানুষকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানায়।

ভ্যালেনটাইন ডের পৌরাণিক কাহিনীর পিছনের সত্য অস্পষ্ট হলেও, প্রতিটি গল্পই সহানুভূতিশীল ও বীরত্বপূর্ণ এবং বেদনাগাথা। আর ভ্যালেনটাইন নামের ব্যক্তি টি রোমান্টিক ও বীর হিসেবে খ্যাত। ভ্যালেনটাইন ডে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় দিন।
‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ইতিহাস যতটুকূ জানতে পারা যায়, পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে রোমিউলাস নামক এক ব্যক্তি ছিল। একদা রোমিউলাস নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এই পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী উৎসব পালন করত। উৎসবের দিন তারা একটি কুকুর ও একটি পাঠা বলি দিত। দুজন শক্তিশালী যুবক বলির রক্ত সারা গায়ে মাখতো এবং পরে তা দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলত। অত:পর সেই দুই শক্তিশালী যুবকের নেতৃত্বে শহরে প্যারেড অনুষ্ঠিত হতো। সেই দুই যুবক তাদের হাতে থাকা চামড়ার রশি দিয়ে সম্মুখে আগত যে কাউকে আঘাত করত। রোমান নারীরা এই আঘাত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করতো। কেননা তারা বিশ্বাস করত, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব থেকে রক্ষা পাবে, আর বন্ধ্যা মহিলারা তাদের অনুর্বরতা থেকে মুক্তি পাবে। তাদের উৎসবের আরেকটি অংশ ছিল বিবাহযোগ্যা নারীদের নাম লিখে কতগুলো কাগজের টুকরো রাখা হবে। অত:পর, যে ব্যক্তি, যে নামের টুকরো তুলত সেই মেয়েটির সাথেই পরবর্তী এক বছর কাটাতো । এই এক বছর তারা পরস্পরকে যাচাই করার সময় পেত। পরবর্তী বছরের এই একই দিনে হয় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো নতুবা একই নিয়মে নতুন সঙ্গী গ্রহণ করত। পরবর্তীতে রোমানরা খ্রীস্টানদের দখলে আসে এবং তাদের অনেকেই খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করে। খ্রীস্টান ধর্মযাজকরা এই অনৈতিক, অশ্লীল বিবাহ-বহির্ভূত ব্যবস্থা বাতিল করেন।

আরও পড়ুন: দোঁ-পিয়াজার সঙ্গে পেঁয়াজের কোনো সম্পর্কই নেই, জানুন ইতিহাসের এই অজানা তথ্য

‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ সম্পর্কে আরেকটি সূত্র হতে জানা যায় যে, খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে যখন রোমানরা খ্রীস্টানদের দখলে আসে তখন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সৈন্যদের বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ভ্যালেন্টাইন নামক একজন খ্রীস্টান ধর্মযাজক এর বিরোধিতা করেন এবং তিনি গোপনে সৈন্যদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনা প্রকাশ পেলে তাকে বন্দী করা হয়। জেলে বন্দী থাকে অবস্থায় তিনি গোপনে কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েন কেননা খ্রীস্টান ধর্মমতে খ্রীস্টান ধর্মযাজকরা কখনো বিয়ে করতে পারেন না বা কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারেন না । পরবর্তীতে সম্রাট তাকে মুক্তির এই শর্তে দেন যে, তাকে খ্রীস্টান ধর্ম ত্যাগ করে রোমানদের পৌত্তলিক ধর্ম গ্রহণ করতে হবে এবং তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন তার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন এবং খ্রীস্টান ধর্মে অটুট থাকেন। অবশেষে ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।

এই হলো ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ইতিহাস যা আমাদের যুব সমাজের অনেকেরই অজানা । অজ্ঞতাবশত তারা এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে উপহার, কার্ড, লাল-গোলাপ বিনিময়ের মাধ্যমে, প্রেয়সীর সাথে লাল পোষাক পরিধান করে সাক্ষাৎ করে। এমনকি এই দিনটিকে পাশ্চাত্য সমাজে এতটাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি এই দিনটিকে বেমালুম ভুলে যায়, তবে তাকে প্রকৃত প্রেমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.