ফুলের বেশে 'ক্ষীরাই' দেশে- ঘুরে আসুন সপরিবারে, কাশ্মীরের ক্ষুদ্র সংস্করণ রয়েছে এই বঙ্গে
শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়: অফিসের রাশভারি সময়ের মাঝে মাত্র দু'দিনের ছুটি। তাই অনেকেই হয়তো ট্যুর প্ল্যান করে রেখেও সময়ের কমতির জন্য ঘুরতে যেতে পারছেন না। আসলে আমরা নিজেদের আশেপাশের জায়গাগুলোর ব্যাপারে বিশেষ জানি না বলেই জানা হয় না আমাদের কলকাতার কাছাকাছিই আছে অনেক ঘোরার জায়গা, একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসার মতো। সেই রকমই একটা জায়গা হল পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই। একদিনে ঘুরে আসার জন্য যথেষ্ট। তবে হঠাৎ করে ক্ষীরাই কেন? কারণ ক্ষীরাইতে গেলে আপনি পাবেন চোখ-ধাঁধানো সৌন্দর্যের ফুলের ক্ষেত।
এবার আসা যাক তথ্যের খুঁটিনাটিতে। হাওড়া থেকে মাত্র কুড়ি টাকায় ক্ষীরাই যাওয়ার ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। যেতে সময় লাগে মোটামুটি দু'ঘন্টা। কোলাঘাট-পাঁশকুড়ার কাছাকাছিই ক্ষীরাই। ফুলের বাগান কাঁসাই নদীর দুপারে। শীর্ণকায়া নদীর দুপারের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে নানা রঙের ফুলের বাহার। তবে ফুল দেখতে গেলে শীতের সময়ই যাওয়াই ভাল। কারণ বেশিরভাগ ফুলের চাষ হয় শীতকালেই।
ছবি সৌজন্যে- শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় |
দেখতে পাবেন হলুদ এবং লাল গাঁদা, নানা রঙের অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকার, সর্ষে, মুলোফুলের মতো নানা ফুল। গোলাপও দেখতে পেতে পারেন নেহাত সৌভাগ্য হলে। ঝাঁক ঝাঁক গোলাপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আর ফেরাতে ইচ্ছে করবে না চোখ। ফুলের বাগানের ঠিক কাছেই রয়েছে ট্রেন পেরোনোর জন্য ছোট্ট একটি সেতু। ট্রেনের কু কু ঝিক শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সেই ফুলবাগানের ফুলগুলোও যেন ছন্দে নেচে ওঠে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে জুড়িয়ে যায় চোখ। গুনগুন গান করে উড়ে বেড়াচ্ছে হাজারও মৌমাছি। যেন স্বর্গরাজ্যে এসে পৌঁছনো গেছে শেষ পর্যন্ত।
ছবি সৌজন্যে- শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় |
ছবি সৌজন্যে: শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় |
কেন ফুলক্ষেত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ক্ষীরাইয়ের চাষীরা? হয়ত বা সামর্থ্য নেই। তাঁদের দু'চোখে সোনালী স্বপ্ন। এক বয়োজ্যেষ্ঠ ফুলচাষী জানালেন, আমরা মানুষের সঙ্গে এত সহযোগিতা করলেও বাইরে থেকে আসা মানুষরা ফুলের ক্ষতি করে। আমাদের তো ফুল থেকেই রোজগার, এটা না বুঝলে চলবে কী করে। তাও আমরা আশা করে আছি বাইরে থেকে মানুষ এলে আমাদের ক্ষীরাইয়ের নাম হবে। অনেক ধারাবাহিক বা সিনেমার শ্যুটিং করতে আসেন অনেকে। বাইরে থেকে মানুষও আসেন। ক্ষেতের ক্ষতি হলেও আমরা কাউকে ফেরাই না। বেশি মানুষ এখানে এলে হয়ত ভবিষ্যতে এখানকার ক্ষেতের আরও উন্নতি হবে। আশায় চিকচিক করে জ্বলতে থাকে দুটো চোখ।
কাঁচা রাস্তার দুপাশে গ্রামের বসতবাড়ি। আর ক্ষেতের আশেপাশেও জিনিসপত্রের দোকানের সংখ্যাও খুবই কম। তাই খাবারদাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াই ভালো। অনেকেই পিকনিক করতে গিয়ে থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিক ফেলে আসেন। সেই নিয়ে আফসোস করলেও আশাহত হন না ক্ষীরাইয়ের চাষীরা। তাঁরা আশা করে আছেন বাইরের মানুষরাই আগামীতে আনন্দ আর উন্নতির হাত ধরে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবেন ক্ষীরাইয়ের ফুলক্ষেতে।
Post a Comment