সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল, ডাক্তার স্বামীজির গানের গলাও অপূর্ব, শুনে দেখুন


Odd বাংলা ডেস্ক: কয়েকদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট খুব ভাইরাল হয়েছে। আর তা হল স্বামী কৃপাকরানন্দের জীবনের ইতিহাস। বন্ধুর উক্তিতে লেখা যতবার পড়ছি ততবারই অবাক হয়ে যাচ্ছি। 
বন্ধুর কলমে, ‘১৯৮৯ এ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে পঞ্চম, ১৯৯১ এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে সপ্তম, জয়েন্ট এ মেডিকেল রাঙ্ক ১৭, এরপরে ভর্তি হোলো কলকাতা এন আর এস মেডিকেল কলেজে। ১৯৯১ ব‍্যাচ ফার্স্ট ইয়ারের শেষ দিকে আমার রুমমেট হয়ে আসে দেবতোষ। স্টুডেন্ট হোস্টেলের পান্ডববর্জিত সাউথ গ্রাউন্ড ফ্লোর। ওর বাবা ছিলেন রাইটার্সের উচ্চপদস্থ অফিসার, মা সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে দেবতোষ পৈতৃক সূত্রেই ছিলো বনেদি, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলো ও। কিন্তু দেবতোষের চলনে বলনে বিত্তপ্রদর্শন বা অহং এর লেশমাত্র ছিল না।
সন্ধারতিতে গাইছেন স্বামী কৃপাকরানন্দ
পারিবারিক মূল‍্যবোধ ও নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষা ওর মধ‍্যে এক পরিপূর্ণ মানুষের ভিত গড়ে দিয়েছিল। আমাদের ব‍্যাচের নিঃসন্দেহে সেরা প্রতিভা দেবতোষ। কবিতা লেখা, নাটক তৈরী, অভিনয়, ব‍্যাডমিন্টন – সবার আগে দেবতোষ। একেক সকালে ঘুম ভেঙে দেখতাম , বড় ক‍্যানভাসে আঁকা অপূর্ব দৃশ‍্যপট, সারারাত ছবি এঁকে ঘুমিয়ে পড়েছে দেবতোষ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রংতুলি, প‍্যাস্টেল।
আবার, তুলনামূলক অল্পসময় পড়াশোনা করেই অসাধারণ রেজাল্ট করতো প্রতিটি পরীক্ষায়। সঙ্গীত ছিল ওর প‍্যাশন, বলা ভালো দেবী সরস্বতীর মানসপুত্র ছিলো ও, সঙ্গীত এর এমন কোনো রাগ নেই যা ওর অজানা, তেমনি ঈশ্বর প্রদত্ত গলা, আর ওর চেহারা ছবি দেখে মনে হয় স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র। কি অসাধারণ কথাবার্তা, আমাদের সবাই ওর গুণে মুগ্ধ ছিলাম, কোনো গল্প শুরু হলে আমরা সবাই চাইতাম দেবতোষ যেন আরেকটু থাকে।’
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন স্বামীজি
এরপরে অসম্ভব প্রতিভাধর দেবোতোষ এমবিবিএস-এ অসাধারণ রেজাল্ট করে মেডিক‍্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পরেই ও হোস্টেল ও কলেজ ছেড়ে চলে যায় দিল্লীর এইমস-এ ‘MD’ করতে। হার্ট স্পেশালিস্ট MD হয়ে দেবতোষ পাড়ি দেন মার্কিন মুলুকে হার্টের উপর গবেষণা করতে। দীর্ঘ কয়েকবছর হার্টের ওপর গবেষণা করার পরে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। দীর্ঘদিন তাঁর কোনও খোঁজ খবর ছিল না। কোথায় গিয়ে নিখোঁজ হলেন দেবোতোষ। সেই মার্কিন মুলুকে যেখানে সারা বিশ্ব চিনেছিল স্বামী বিবেকানন্দকে।

আর ঠিক এই কারণেই হয়তো তাঁকে কেউ স্বামীজি বলছেন আবার হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব প্রতিভাধরকে কেউ র‍্যাঞ্চোর সঙ্গে তুলনা করেছেন যিনি পরে ব্যস্ত ছিলেন একদম গোপনে নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায়। তেমনই দেবোতোষ।
বন্ধুর কলমে, ‘অনেক বছর পরে খবর পাওয়া যায় যে, দেবোতোষ সন্ন‍্যাস নিয়েছে। ২০০৮ – ০৯ নাগাদ কামারপুকুরে জয়ন্ত মহারাজের কাছে শুনি, দেবোতোষ মহারাজ বেলুড় মঠের আরোগ‍্য ভবনের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে এসেছেন।’ পরের দিনই তিনি যান বেলুড় মঠে। দ্বিতীয়বারের প্রথম সাক্ষাতে সম্ভিত হয়ে যান সেই বন্ধু। তিনি লিখেছেন , ‘এ কাকে দেখছি! মনে হচ্ছিল স্বয়ং বিবেকানন্দ আমার সামনে। মুন্ডিতমস্তক,গেরুয়া বসন, চারিদিকে যেন জ্যোতি বেরোচ্ছে, নিজের অজান্তেই সহপাঠী বন্ধুকে নিজের অজান্তেই পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যেতেই একইরকম উষ্ণতা নিয়ে জড়িয়ে ধরে আমার বন্ধু দেবতোষ, না , ভুল বললাম … আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ।’ শেষে লিখেছেন , ‘বিখ্যাত ডাক্তার থেকে শুরু করে খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অথবা কোনো নামি অভিনেতা যা ইচ্ছা হ’তে পারতো দেবতোষ…যা ইচ্ছা। কিন্তু সব ছেড়ে ও বেছে নিল অসীমের পথ…ত্যাগ, সেবা।’
তবে ঈশ্বরের আশির্বাদ না থকলে সত্যিই এরূপ সর্বগুণ সম্পন্ন হওয়া যায় না। কন্ঠে যেন স্বয়ং মা সরস্বতী বিরাজমান। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.