মৃত্যুর শেষ তিনদিনে কী ঘটেছিল স্বামীজির সঙ্গে

Odd বাংলা ডেস্ক: স্বামীজি জীবনের শেষ কয়েকটি মাস বেলুড়মঠে কাটিয়েছিলেন। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষকে শিক্ষা দান করেছেন এবং সেবা করে গিয়েছেন। মানুষের প্রতি তার ছিল অসীম ভালোবাসা। মানুষের দুঃখে তিনি সবসময় তাদের পাশে থাকতে চাইতেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার মর্ত্যের লীলা শেষ হয়ে আসছে। তিনি সে জন্য প্রস্তুত হলেন।

শিষ্যদের তিনি সে কথা জানিয়ে দিলেন। অবশ্য স্বামীজি স্বামী অভয়ানন্দ কে তার মৃত্যুর ৫ বছর পূর্বে তার মৃত্যুর বার্তা দিয়েছিলেন। হঠাৎ করে স্বামীজি একদিন তাকে বলে ওঠেন আমি আর মাত্র ৫-৬ বছর বাঁচবো বুঝলে। অভয়ানন্দ এরকম কথাবার্তা শুনে বেশ বিরক্ত হলেন। স্বামীজি উত্তর দিয়ে বললেন তুমি বুঝবে না হে! তুমি বুঝবে না । আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে তাকে আর আমার শরীরের মধ্যে ধরে রাখা যাচ্ছে না। খালি ছেড়ে পালাতে চাইছে। স্বামীজি পরিব্রাজক থাকা অবস্থায় কোন কোন দিন খাবার জুটত আবার কোন কোন দিন অভুক্ত হয়ে কাটাতে হতো। ঠিকমতো খাবার খেতে না পাওয়ার ফলে এবং দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে স্বামীজীর শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়।

অথচ শেষ কয়েক মাস তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং তাকে আনন্দময় দেখে শিষ্যরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে স্বামীজীর বিদায় আসন্ন বরং তাদের খুব বিশ্বাস ছিল যে স্বামীজি আরো বেশ কয়েক বছর তাদের মধ্যে থাকবেন। তার মহাসমাধির থেকে তিনদিন আগে তিনি স্বামী প্রেমা নন্দের সাথে মঠের প্রাঙ্গণে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। ঠিক জায়গা দেখিয়ে প্রেমানন্দজিকে তিনি বললেন আমার মৃত্যুর পর আমার সৎকার্য এখানে করবেন। আজ সেই নির্দিষ্ট জায়গাতে স্বামীজি সমাধিমন্দির দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্বামীজি মৃত্যুর দুইদিন আগে তিনি ভগিনী নিবেদিতা কে নিমন্ত্রণ করলেন। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেলুড়মঠে আসলেন নিবেদিতা। সেদিন আবার স্বামীজীর একাদশী।

উপোস তিনি খাবেন না ,কিন্তু ভগিনী নিবেদিতাকে নিমন্ত্রণ করেছেন। বেজায় অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলে ভগিনী নিবেদিতা। ফলে স্বামীজীর নিমন্ত্রণ এর উত্তর হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারেন না। নিবেদিতাকে খাওয়ালেন ভাত, আলু সিদ্ধ, দুধ, কাঁঠাল। কিন্তু খাওয়ার মন নেই নিবেদিতার তিনি বুঝতেই পারছেন না কি করতে চাইছেন স্বামীজি। প্রথমে খেতে ইতঃস্তত বোধ করলেও শেষে তিনি খাওয়া শুরু করলেন খাওয়ার সময় নানান ধরনের কথা বলতে শুরু করলেন স্বামীজি। খাওয়া শেষ হলে তিনি নিবেদিতার হাত-পা জল দিয়ে ধুয়ে দিলেন। নিবেদিতা এবারও অস্বস্তিতে। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না বিবেকানন্দ কেন করছেন এবং কি করছেন।

স্বামীজীর হাত যখন নিবেদিতা পা যত্নসহকারে ধুয়ে দিচ্ছিল তখন আর থাকতে পারেননি নিবেদিতা তিনি প্রতিবাদ করে বলে উঠলেন একি করলেন আপনি! এই কাজটা তো আমার করা উচিত আপনাকে। বিবেকানন্দের উত্তর তুমিতো যীশুর কথা পড়েছ। তাহলে তুমি নিশ্চয়ই জানো তিনি শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। নিবেদিতা বলে উঠলেন সে তো তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে। বিবেকানন্দের সহাস্য উত্তর u silly girl. ভগিনী নিবেদিতা গুরুর কথা কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সেই দিন আসলো হাজার ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠাজুলাই। স্বামীজি সকালের দিকে মন্দিরে গেলেন। এবং সব জানালা দরজা বন্ধ করে টানা তিন ঘণ্টা ধ্যন করলেন। মৃত্যুর দিন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।

ধ্যানের শেষে তিনি সুমধুর কন্ঠে মাতৃ সংগীত গাইতে শুরু করলেন। এরপর নিচে নেমে মন্দিরের প্রাঙ্গণে একটু ঘুরে বেড়ালেন। দুপুরের আহার গ্রহণের পর প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে স্বামীজি ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সংস্কৃত ব্যাকরণ ক্লাস নিলেন। এরপরে তাকে একটু ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এরপর তিনি স্বামী প্রেমানন্দজির সাথে কিছুটা পথ হেঁটে এলেন।


হাঁটতে হাঁটতে স্বামীজী তাকে মঠের বেদ বিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথা বলছেন। বেরিয়ে ফিরে স্বামীজি অল্পক্ষণের জন্য সাধুদের সাথে কথা বললেন। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো স্বামীজি ধীরে ধীরে আরো গম্ভীর এবং আত্মমগ্ন হতে শুরু করলেন। সন্ধ্যায় প্রার্থনার ঘন্টা পড়লে স্বামীজির নিজের কক্ষে গেলেন এবং গঙ্গা মুখী হয়ে ধ্যানে মগ্ন হলেন।
এর এক ঘন্টা পর তিনি জনৈক শিষ্যকে ডেকে বাতাস করতে নির্দেশ দিলেন। শীর্ষ বাতাস করার পরে তার সেবা করতে লাগলেন। তিনি মনে করলেন স্বামীজি ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু হঠাৎই লক্ষ্য করলেন স্বামীজীর হাতটা একটু কেঁপে উঠল। ব্যাপারটা তার ভাল লাগল না তিনি তাড়াতাড়ি মঠের একজন সাধুকে ডেকে পাঠালেন।

মহারাজ এসে পরীক্ষা করে দেখলেন স্বামীজীর দেহে প্রাণ এর লক্ষন নেই। রাত ন’টার কয়েক মিনিট পরে স্বামীজীর মহাসমাধি হলো স্বামীজির মৃত্যু কোন সাধারন মৃত্যু ছিল না। উনার আত্মা সহস্রা চক্র দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। সাধারণত সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সময় আত্মা মূলাধার চক্র থেকে বেরিয়ে যায় অর্থাৎ মূলাধার চক্র থেকে সহস্রা চক্র পর্যন্ত নিয়ে যায় এবং তখন হয় মহা সমাধি ।এরকম ধরনের জ্ঞানী পুরুষেরা নিজের মৃত্যু সম্পর্কে আগে থেকে বলতে পারে।

এক কথায় বলতে গেলে এরা নিজের ইচ্ছাতে আত্মত্যাগ করতে পারেন। আর স্বামীজীর এইরকম মহা সমাধি হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে স্বামীজি কেন এত তাড়াতাড়ি দেহ ত্যাগ করলেন। এই ব্যাপারে শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে মহাপুরুষেরা এই ধরাধামে আসে বিশেষ কাজ নিয়ে। এবং সেই কাজ সম্পন্ন হলে তারা আবার শরীর ত্যাগ করে চলে যান।


এবং এরকম জ্ঞানী পুরুষদের চিন্তা-ধারা কেমন ছিল সেটা বিশ্লেষণ বা বোঝার ক্ষমতা আমাদের মত সাধারন মানুষের নেই। স্বামীজী সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাহার ইহজীবন শেষ হলো বটে কিন্তু তার সকল কর্মধারা আজও বয়ে চলেছে। সারা দেশবাসীকে তিনি জাগরণের মন্ত্র দিয়েছিলেন। ওঠো জাগো লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না ।স্বদেশবাসী তার ডাক শুনেছিলেন প্রবল কর্ম উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে স্বদেশ জাগরণ ঘটলো। নারী-পুরুষ সকলের নির্বিশেষে নিঃস্বার্থভাবে দরিদ্র মানুষের কল্যাণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে ভারতে মুক্তি আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.