৪২,০০০ বছর আগের মমিতে পাওয়া গেল রক্তের সন্ধান
Odd বাংলা ডেস্ক: ২০১৮ সালের আগস্টে উত্তর রাশিয়ার ইয়াকুটিয়াতে বাটাগিকা জ্বালামুখে একটি বাচ্চা পুরুষ ঘোড়া শাবকের সুসংরক্ষিত দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
ক্ষুদ্র জীবাশ্মযুক্ত নমুনাটি দীর্ঘদিনের বিলুপ্ত লেন্সকায়া ঘোড়া শাবক বলে মনে করা হচ্ছে, যেগুলো প্রস্তর যুগের শেষের দিকে রাশিয়ার সবচেয়ে ঠান্ডা অঞ্চল ইয়াকুটিয়াতে চরে বেড়াত। মারা যাওয়ার সময় ঘোড়া শাবকটি মাত্র এক বা দুই সপ্তাহ বয়সী ছিল, এবং এটি এমন এক আশ্চর্যজনক অবস্থানে ছিল যে এর চুলও সুসংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
ইয়াকুটস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদার ম্যামথ মিউজিয়ামের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, ঘোড়া শাবকটির অভ্যন্তরীন ভাগ ও অবিশ্বাস্য রকমভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এর কারন হল, শাবকটি খুব সম্ভবত নরম মাটিতে আটকে পড়ে মৃত্যুবরন করে এবং পরবর্তীতে ঐ মাটি ঠান্ডায় সম্পূর্নভাবে জমাট বেঁধে যায়। বিজ্ঞানীরা ঐ মৃত শাবকটির হৃৎপিণ্ড থেকে তরল রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা তারা এখন “বিশ্বের প্রাচীনতম রক্ত” বলে দাবী করছেন। ম্যামথ মিউজিয়ামের প্রধান ডঃ সেমিওন গ্রিগোরিয়েভ সাইবেরিয়ান টাইমসকে জানান, “ময়নাতদন্তে দেখা গেছে এর অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ সুসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। এর হৃৎপিণ্ড থেকে তরল রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পেশী কলার স্বাভাবিক লাল রঙ ও বজায় ছিল”। তিনি আরো বলেন, “আমরা এখন দাবী করতে পারি, এটিই হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাপ্ত বরফ যুগের সবচেয়ে সুসংরক্ষিত প্রাণী”।
এখন গবেষকরা এই প্রজাতির ক্লোন করার জন্য ঘোড়া শাবকটি থেকে সজীব কোষ সংগ্রহ করার আশা প্রকাশ করছেন। তারা আরো আশা করছেন যে, এই গবেষনার হাত ধরেই তারা পশম যুক্ত ম্যামথ ক্লোন করার লক্ষ্যে সফলতা লাভ করবেন।
ইয়াকুটস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সোয়াম বায়োটেক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, তারা ক্লোন করে বিলুপ্ত প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনার জন্যে শাবকটি থেকে কোষ সংগ্রহ করার “সাফল্যের ব্যাপারে সুনিশ্চিত”। তবে কোষ সমূহ রক্তের নমুনা থেকে সংগ্রহ করা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
পশুটিকে ক্লোন করতে হলে বিজ্ঞানীদের প্রাচীন ডিএনএ থেকে কার্যকর কোষগুলি সংগ্রহ করে তা উৎপাদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি আজ পর্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা স্বীকার করেছেন যে, তারা এখন পর্যন্ত ২০ টিরও বেশি প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সফলকাম হবার ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, তারা যে জীবিত প্রজাতির ঘোড়াটি ব্যবহার করবেন, তা এরই মধ্যে বাছাই করে ফেলেছেন।
যদিও বা তারা ঘোড়াটির ডিএনএ আংশিকভাবে পুনর্নির্মাণে সক্ষম হন, একটি বিলুপ্ত প্রাণীর জিনের পূর্নাংগ বিন্যাস প্রায় অসম্ভব। সুতরাং জীবন্ত ঘনিষ্ঠ প্রজাতির কোন প্রানীর মধ্যে বিলুপ্ত প্রানীর আংশিক জিনগুলিকে সন্নিবেশ করাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। একটি পশম যুক্ত ম্যামথের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত হবে এশিয়ার হাতি। আর লেন্সকায়া ঘোড়াটির জন্য তারা বাছাই করেছেন অন্যতম প্রাচীনতম এবং কঠোরতম মঙ্গোলিয়ান ঘোড়ার উত্তরসুরী কোরিয়ান ঘোড়া।
সুতরাং একটি দীর্ঘদিন ধরে বিলুপ্ত প্রাণীর সফল পুনরুত্থান সম্ভবত আমাদের প্রত্যাশিত সময়ের আগেই ঘটতে পারে। তবে, একটি বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনা শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যাপারই নয়, এটি একটি নৈতিক ব্যাপার ও বটে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা এমন একটা জায়গায় থেমে যেতে চাই না, যেখানে বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন তারা পারবেন কিনা পারবেন না তার চেয়ে তাদের কাজটি আদৌ করা উচিৎ হবে কিনা এই দ্বন্দ্বে আটকে পড়া।
Post a Comment