মহাভারতে কে শ্রেষ্ঠ?অর্জুন না কর্ণ?



Odd বাংলা ডেস্ক: সেদিন অর্জুন বধ করেছেন কর্ণকে।পান্ডব শিবিরে বইছে খুশির হাওয়া।তাঁদের অন্যতম প্রধান শত্রু আজ নিহত।সেই রাত্রিতে পান্ডব শিবিরে একটি বিশেষ কক্ষে শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের একান্তে আলাপচারিতা।অর্জুন সেই মুহূর্তে আনন্দে মাতোয়ারা।উল্লাসে মত্ত অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন সখা ত্রিভুবনে আজ আমার সমকক্ষ কেউই নেই।কর্ণ সবসময় নিজেকে আমার সমান তীরন্দাজ মনে করত।কিন্তু আমার সমকক্ষ হওয়া দূরে থাক ও তো আমার পায়ের ধুলোরও যোগ্য নয়।তুমি তো কর্ণের বীরত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলে।কিন্তু মুখোমুখি যুদ্ধে ফল কি হল?আমার সামনে কর্ণের প্রতিরোধ খড়কুটোর মতোই উড়ে গেল।স্মিত হাসলেন শ্রীকৃষ্ণ।অর্জুন বলে চললেন কর্ণ কথায় কথায় তার বীরত্বের বড়াই করত।কিন্তু আজ সূতপুত্রের সব দর্প আমি চূর্ণ করে দিয়েছি।শ্রীকৃষ্ণ মৌন।অর্জুন বিস্মিত হলেন। জিজ্ঞাসুভাবে বললেন কি ব্যাপার সখা।তুমি আজ নিশ্চুপ কেন?তুমি কি আজ আমার বীরত্বের পরিচয় পাওনি?ভেবে দেখো লড়াইয়ের সময় আমার এক বাণে কর্ণের রথ দশ পা পিছিয়ে যাচ্ছিল,দশ পা আর সেখানে কর্ণের এক বাণে আমার রথ মাত্র দুই পা পিছনে যাচ্ছিল।এখানেই তো বোঝা যায় যে অর্জুনই শ্রেষ্ঠ।'না' দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কর্ণকে তুমি হারিয়েছ এর মানে এই নয় যে কর্ণ একজন শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ছিল না।ভ্রূ কুঁচকে গেল অর্জুনের,কি বলতে চাও তুমি কেশব?দেখো পার্থ পিতামহ ভীষ্ম তোমার সামনে যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলেন না?তার মানে কি তুমি পিতামহ ভীষ্মের চেয়েও বড় ধনুর্ধর হয়ে গেলে?না প্রভু পিতামহ ভীষ্মের কথা আলাদা।হাসলেন শ্রীকৃষ্ণ হে পার্থ তুমি আমার প্রিয় বন্ধু।পরম সুহৃদ।এই পৃথিবীতে আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমি কে?তোমার কাছে তো আমি কিছুই লুকাইনি।এমনকি নিজের দিব্য রূপও দেখিয়েছি তোমাকে।করজোড়ে আনতমুখে বললেন অর্জুন হ্যাঁ প্রভু আমি জানি তুমি কে।তুমি স্বয়ং নারায়ণ।জগৎ প্রতিপালক।তাহলে ভেবে দেখো অর্জুন তোমার রথের ওপর যেখানে স্বয়ং আমি বসে আছি ত্রিলোকের ভার নিয়ে সেই রথকে কি কেউ বিন্দুমাত্রও পিছনে হঠাতে পারে?এবারে তুমি নির্ণয় করো পার্থ কার বাণে অধিক শক্তি ছিল?খানিকটা ভাবনায় পড়লেন অর্জুন।এভাবে তো তিনি ভেবে দেখেননি।বলে চললেন শ্রীকৃষ্ণ তাছাড়া তুমি কর্ণকে হারাওনি অর্জুন।কর্ণকে হারিয়েছে তার কর্মফল।
মানে?একটু অবাক হলেন অর্জুন।
মনে করে দেখ অর্জুন ব্রাহ্মণ পরিচয় দিয়ে পরশুরামের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিখতে গিয়েছিলেন কর্ণ।কিন্তু একদিন কর্ণের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় পরশুরামের কাছে ।তখনই পরশুরাম তাকে শাপ দেন যুদ্ধক্ষেত্রে মহাবিপদকালে কর্ণ সব অস্ত্রের নাম ও সংকেত ভুলে যাবে।তাছাড়া ভুলক্রমে এক ব্রাহ্মণের গরু মেরে ফেলাতে তিনিও শাপ দিয়েছিলেন মৃত্যুকালে তার রথের চাকা মাটিতে বসে যাবে।তুমি তো নিমিত্তমাত্র অর্জুন।কর্ণ তার নিজের দোষেই আজ হত।কিন্তু তার মহত্বকে, তার বীরত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।সে শুধু মহাবীরই ছিল না,দানবীরও ছিল।সূর্যদেবতার দেওয়া অক্ষয় কবচ কুণ্ডল সে নির্দ্বিধায় ইন্দ্রদেবকে দান করে দেয়।তুমি জানো না পার্থ কর্ণ কৌরবপক্ষের সেনাপতি হওয়ার পর আমি তার শিবিরে গিয়েছিলাম কর্ণকে পাণ্ডবপক্ষে আসার নিমন্ত্রণ দিতে,ধর্মপক্ষে আসার সুযোগ দিতে।কিন্তু কর্ণ বলে যতই দুর্যোধন অধর্মের পথে থাকুক,কিন্তু বিপদের দিনে সে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।অতএব সেই মিত্রতার ঋণ শোধ করাই হবে তার প্রথম ধর্ম।কর্ণ এও বলে এই যুদ্ধে জয় পাণ্ডবদেরই হবে কিন্তু তাই বলে সে দুর্যোধনকে ধোঁকা দিতে পারবে না।তাই সে প্রাণ দিয়ে দেবে তবু কৌরবপক্ষ ছাড়বে না।আর কর্ণ তাই করল প্রাণ দিয়ে যেমন দুর্যোধনের মিত্রতার ঋণ শোধও করলো তেমন ধর্মের বিজয়ের পথও প্রশস্ত করে দিল।হে পার্থ যদি কোনোদিন কর্ণের জীবনের পূর্ণ কথা জানার সুযোগ পাও তাহলে তুমি মাটিতে শুয়ে ওকে প্রণাম করবে।
ভুল বুঝতে পারলেন অর্জুন।নিঃশব্দে কক্ষত্যাগ করলেন তিনি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.