শ্মশানে হাজার হাজার দেহ পুড়ছে! কবরে এত মৃতদেহ এল কোথা থেকে?!


Odd বাংলা ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল চীনে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার পর ভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে চীনে। তিন মাসের যুদ্ধে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে বলে দাবি শি জিনপিং এর দেশের। সত্যি কি করোনায লাগাম পরাতে পেরেছে চীনে? মারণ ভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে কি উহান? চীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় যতই জোর গলায় দাবি করুক মৃত্যুমিছিল রোখা গেছে, আদৌ হয়েছে কি সেটা? মারণ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি খাতায় দেখানো হয়েছে ৩ হাজার৩০৫। নতুন মৃত্যু সাকুল্যে মাত্র পাঁচ জন! নতুন আক্রান্ত ৭৯ জন। যাদের প্রায় সবাই বিদেশফেরত বলে দাবি চীনের।
তাই যদি হবে তাহলে শহরের শ্মশানগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার সৎকার হচ্ছে কাদের? চুপি চুপি গিয়ে শবাধার নিয়ে আসছেন কারা?  কবরে শেষকৃত্যের জন্য জমায়েত হচ্ছে কাদের? এত মানুষের মৃত্যুর খবর কেন আড়াল করছে চীন? অশনিসঙ্কেতের যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা, আসন্ন ঝড়ের যে ইঙ্গিত দিয়েছিল 'ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল' সেটাই সত্যি হতে চলেছে না তো?
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর। প্রথম খবর রটে এক অজানা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। খবরটা প্রথম প্রকাশ পায় চীনের এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। তথ্যসূত্র দিয়েছিলেন উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের সেই 'হিরো ডাক্তার' লি ওয়েনলিয়াঙ। ঠিক তার পরের দিন, ৩১ ডিসেম্বর উহানের সি-ফুড মার্কেটের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় সংক্রামক রোগে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোটা উহান শহর থেকে ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। চীন ব্যাপারটা শুরুতেই লুকানোর চেষ্টা করলেও জানা যায় ওই সংক্রমণ হয়েছে এক মারণ ভাইরাসের হানায়, নাম নোভেল করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী ভাইরাসের আগমন সেই ডিসেম্বরেই হয়েছিল না তার আগে, সেই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বিস্তর। তবে সত্যিটা হল সেই ডিসেম্বর থেকেই বিশ্বে মহামারী কোভিড-১৯। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত প্রায় ৮ লাখ মানুষ, সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৭৭ জনের।
সংক্রমণ নেই, লকডাউন তুলেছে উহান, শ্মশানে পুড়ছে কারা?
করোনার মহামারী সুকৌশলে আড়াল করেছে বা এখনও করছে চীন, এই অভিযোগ গোটা বিশ্বেরই। রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর যে সংখ্যা দেখিয়েছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার, মৃত্যু হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি। লকডাউন তোলার চতুর্থ দিন থেকেই শহরের অন্তত সাতটি শ্মশানে দেখা গেছে ভিড়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে দেহ সৎকারের কাজ। আরএফএ-র রিপোর্ট বলছে এক একদিনে শহরের সমস্ত শ্মশান থেকে অন্তত পাঁচ হাজার শবাধার তুলে দেওয়া হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়দের হাতে। উহানের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আরএফএ-র রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই নিজেদের পরিসংখ্যান জানিয়েছে। অনেকেরই দাবি, কম করেও সাড়ে তিন হাজার দেহ পোড়ানো হয়েছে শ্মশানগুলিতে। লকডাউন ওঠার আগে ও পরের হিসাব মেলালে যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজারের বেশি। তার মানে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে কি লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে চীনে? প্রমাণভিত্তিক তথ্য হাজির করতে না পারলেও, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
২ কোটির ওপর ফোন নম্বর গায়েব, আট লক্ষ ল্যান্ডলাইন বন্ধ হয়ে গেছে
গত ১৯ মার্চ বেজিং জানিয়েছিল, গত তিন মাসে দু'কোটির বেশি মোবাইল নম্বর বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। প্রায় আট লক্ষ ৪০ হাজার ল্যান্ডলাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চীনের টেলিকম দাবি করেছে, লকডাউনের জেরে অনেক কম্পানিই ব্যবসা বন্ধ করেছে, তাই এইসব মোবাইল নম্বর বাজেয়াপ্ত করতে হয়েছে। সরকারি সূত্র দাবি করেছে, অনেক অভিবাসী শ্রমিক মহামারির কারণে উহান ছেড়ে চলে গেছেন। তাই সেইসব মোবাইল বা ল্যান্ডলাইন নম্বর বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আরএফএ ও চীনের স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, হতেই পারে এই তথ্য সত্যি, তবে আংশিক। চীনে সংক্রামিতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮১ হাজারের মতো। দাবি করা হচ্ছে, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার সময়ই মৃত্যু হয়েছে অনেকের। সেই খবর বাইরে আসেনি। তা ছাড়া উহানের হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে যে পরিমাণ ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল তাতে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। সেই সংখ্যাও সামনে আনেনি সরকারি সূত্র। চুপি চুপি সেইসব দেহ সৎকার করা হয়েছে অথবা কবর দেওয়া হয়েছে। এমনও হয়েছে, এক একটি পরিবার মহামারিতে পুরো শেষ হয়ে গেছে। সেই সব পরিবারের সমস্ত মোবাইল নম্বর ও ল্যান্ডলাইন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সূত্র বলছে, এক মাসে উহানে ২৮ হাজার শেষকৃত্য হতে দেখা গেছে, তাহলে সেই সংখ্যা সরকারি খাতায় কোথায়?



করোনা-ঝড় থামেনি, অশনিসঙ্কেত দিয়েছিল 'ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল'
চীনে ভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও থামেনি। বিপুল জনসংখ্যার দেশে ফের এই রোগ মহামারি হবে কিনা সেটাও অজানা। মানুষের দেহে নিজেদের সুরক্ষা কবচ গড়ে তোলা সার্স-কোভি-২ ভাইরাল স্ট্রেন ফের তাদের মারণ খেল দেখাবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল 'ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল' । সংক্রমণ-পরবর্তী পর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আগাম সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও এপিডেমোলজিস্ট অ্যান্টনি ফ্ল্যাহল্ট বলেছেন, যে কোনও বড় ঝড় ওঠার আগে প্রকৃতি যেমন শান্ত হয়ে যায়, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। চীনে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল গত বছরের মাঝমাঝি। মানুষ মরতে শুরু করেছিল তখনই। পুরো ব্যাপারটাই সুকৌশলে চাপা দিয়েছিল চীন। প্রথম মৃত্যু দেখানো হয় ডিসেম্বরে। অথচ বিভিন্ন সূত্র বলেছিল ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায় তারও অনেক আগে, উনিশ সালের মাঝামাঝি থেকে। সেই খবর ধামাচাপা দিয়েছিল চীন। যতদিনে সংক্রমণের খবর সামনে আসে, ততদিনে কিন্তু ভাইরাস আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তার বড় ঝাপটা আসে জানুয়ারি থেকে। একধাক্কায় শত শম মানুষ মরতে শুরু করে। চীন থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। কী বিপদ ঘটছে সেটা বোঝার আগেই মড়ক শুরু হয়ে যায়। অজানা এই শত্রুকে রোখার সময়ও পায় না মানুষ। এটাই হল সেই বিপদের ইঙ্গিত।
অ্যান্টনির কথায়, 'আমরা উদ্বেগে রয়েছি, এখন যে ঝড় চলছে সেটা আরও বড় বিপর্যয়ের সঙ্কেত দিচ্ছে না তো! সংক্রমণ একটা পর্যায়ে থেমে গেলেও এর পরবর্তী প্রভাব কিন্তু মোটেও সুখের হবে না। তার জন্য দায়ী থাকবে মানুষের অসচেতনতা ও রোগ লুকিয়ে যাওয়ার মানসিকতা।' রোগ এখনও লুকোচ্ছে চীন, এত মানুষের মৃত্যুই সেটা জানান দিচ্ছে। চীনে এই মুহূর্তে সংক্রমণ কমার যে খবর সামনে আসছে, ফের সেটা বড় আকার নেবে কি-না সেটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.