করোনা তো সবে শুরু, এরপরে আসছে সব কঠিন মহামারি, আশঙ্কা পরিবেশবিদদের!


Odd বাংলা ডেস্ক: শস্য-শ্যামলা প্রকৃতি এবং মারণ সব মহামারির মধ্যে একটা মারাত্মক যোগসূত্র রয়েছে। বইয়ের পাতায় সেকথা পড়লেও বাস্তব মনে রাখে কজন। প্রতিনিয়ত মানুষ নিজের স্বার্থে অবহেলা করেছে এই যোগসূত্রকে। আর এই অগ্রাহ্যের ফল যে কী মারাত্মক এবার তা টের পাবে মানবজাতি, অন্তত এমনটাই দাবি পরিবেশবিদদের। আর সেই কারণেই করোনাভাইরাসই কিন্তু শেষ মহামারি নয়। এর পর ভবিষ্যতে মনুষ্য জাতি প্রত্যক্ষ করবে কিছু ভয়ঙ্কর মহামারি!  

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রবিদ তথা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকসের ক্যাম্পেইন ফর নেচারের একজন সদস্য ডঃ এনরিক সালা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টতে দেওয়া সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, 'আমরা যদি প্রাকৃতিক জগতকে ধ্বংস করার এই পদ্ধতি, বৃক্ষচ্ছেদনের পদ্ধতি এবং বন্যপ্রাণীদের খাওয়ার এবং ওষুধ তৈরির জন্য আটক করে রাখা অব্যাহত রাখি, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, এ জাতীয় আরও অনেক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে পাওয়া শেষ রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮১,৭৬১ এবং করোনায় বলি হয়েছেন ১৬,৫৫৮ জন। অন্যদিকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০২,৪২৯ জন। তবে এই পরিসংখ্যান কিন্তু মিনিটে মিনিটে মিনিটে বদলে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তাতে, ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরে একটি বাজারে সামুদ্রিক প্রাণী এবং জ্যান্ত পশুর মাংস বিক্রির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (যদিও এই বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি)। 


বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল 'নেচার'-এ চিনের গবেষকরা জানিয়েছেন, প্যোঙ্গোলিন নামে স্তন্যপায়ী প্রাণীটি COVID-19-এর জন্য দায়ি। নির্বিচারে প্রাণী হত্যা এবং প্রয়োজনে জ্যান্ত প্রাণী হত্যা করে তার মাংখ খাওয়া চিনাদের বহুদিনের রেওয়াজ। তবে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর চিন প্রশাসন বন্য প্রাণীর চাষ এবং তা খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। 

প্রসঙ্গত, এর আগে ইবোলা নিয়ে গবেষণা করার সময়ে থেকেই গ্রন্থকার ডেভিড কোয়াম্মেন মহামারি হলে কী কী ঝুঁকি বেড়ে যায় তা নিয়ে মানুষকে সতর্ক করে আসছেন। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া সাক্ষাতকারে, তিনি জানিয়েছেন 'আমাদের বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যেখানে বহু প্রজাতির বন্য প্রাণী, গাছপালা, ছত্রাক এবং ব্যাকটিরিয়ায় পরিপূর্ণ। জৈবিক বৈচিত্র্যের মধ্যে অনন্য কিছু ভাইরাসও রয়েছে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, 'যখন আমরা গ্রাম গড়ে তোলার জন্য মাঠের পর মাঠ বনাঞ্চল কেটে সাফ করে ফেলি, বন্য পশু-প্রাণীকে খাবার জন্য বন্দি করি, তখনই আমরা ভাইরাসকে নিজেদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ করে দিই। মনে করুন আপনি যদি কোনও পুরানো শস্যাগার ভেঙে দেন তখন ধুলো উড়ে যায়। একইভাবে আপনি যখন বনাঞ্চল ধ্বংস করেন তখন ভাইরাসগুলি এইভাবেই উড়ে যায় এবং তা মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে।'


আর এর ফলেই বাড়তে থাকা তাপমাত্রা রোগ-বালাই ছড়ানোর একটা অনুকূল পরিবেশ লাভ করে। আর সেই কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা আজ বিশেষভাবে জরুরী হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৭ বিলিয়ন হতে চলেছে। যার ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়বে খাদ্যের চাহিদা। আর তার জন্য যদি বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে ফের এমন মারণাত্মক মহামারি আসতে বেশি সময় লাগবে না।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.