এশিয়া মহাদেশের মধ্যে কলকাতাই প্রথম শহর, যেখানে ইলেকট্রিক ট্রাম চলা শুরু করে


Odd বাংলা ডেস্ক: শহর কলকাতার আইকন হিসাবে যে যে জিনিসগুলিকে ধরা হয়, তার মধ্যে ট্রাম অন্যতম। শহরে ট্রাম পরিষেবা শুরু হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। তখন শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ঘোড়া চালিত ট্রাম চলাচল করত। যদিও যাত্রী পরিবহনের জন্যই নির্মিত হয়েছিল এই ট্রাম। কিন্তু যাত্রীদের পাশাপাশি মালপত্রও পরিবহন করা হত ট্রামের সাহায্যে। আর এই পরিষেবা ডকের মাধ্যমে পরিচালিত হত। এর সাতাশ বছর পরে কলকাতায় বৈদ্যুতিক ট্রাম চলতে শুরু করল। সালটা ছিল ১৯০২। সেইসময়ে বাংলায় বিশেষত কলকাতায় একটা ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। সেইসময় নাগরিগ অবমাননা এবং বিক্ষোভ এক চরম আকার ধারণ করেছিল। সেইসময়ে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ব্রিটিশবিরোধী ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য পুলিশ বাহিনীর একটি তীব্র আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন। এরপরই তিনি বিদ্যুতচালিত ট্রাম চালুর জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। এই পরিষেবাটি এসপ্ল্যানেড এবং খিদিরপুরের মধ্যে চালু হয়েছিল। 

সেইসময় ট্রাম গাড়িগুলি ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা হত। আর কলকাতাই হল এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম শহর যারা বৈদ্যুতিক ট্রাম পরিষেবা প্রথম চালু করেছিল। কলকাতা ট্রামওয়েজ হল এশিয়ার প্রাচীনতম অপারেটিং ইলেকট্রিক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম। শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু হওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময়। একসময় যে পরিবহনটি মানুষের কাছে ছিল একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় পরিবহন, আজ তা কেবল টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে দু'বার প্রতিবন্ধকতা আসা সত্ত্বেও ট্রাম কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। 

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ট্রামের রুটের মানচিত্র অবিভক্ত ভারতে প্রসারিত ছিল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্রামলাইন কলকাতার পরিবহন ব্যবস্থার প্রাণ ছিল। কলকাতা শহরে বিক্ষোভের সময় পাবলিক বাস পরিষেবা চালু হওয়ার পরেও ট্রামই কিন্ত মানুষের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিবহনের মাধ্যম ছিল। বেশিপভার ট্রামলাইন সেইসময় প্রসারিত করা হয়েছিল। কলকাতার ট্রাম পরিষেবা ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত মসৃণ ছিল। স্বাধীনতা-পূর্বে শহর কলকাতা-হাওড়ার মধ্যে প্রায় ৩০০টি ট্রাম চলাচল করত।  

আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে ১৯৯৩ সালে হাওড়া ব্রিজের বাস-গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্দেশে ট্রামের ট্র্যাকগুলি সরানো হয়েছিল। বর্তমানে নিত্য পরিবহনের জন্য প্রায় একশোটির মতো ট্রাম চলাচল করে। সব সমীকরণ বদলে গিয়েছিল যখন কলকাতায় মেট্রো রেল পরিষেবা শুরু করা হল এবং ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করল। শতাব্দী প্রাচীন কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত ট্রাম একটু একটু করে জনপ্রিয়তা ম্লান হতে শুরু করল। যার ফলে একসময়ের অনেক নিয়মিত ট্রাম রুটই আজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটি এমন একটি পরিবহন যা কলকাতার বিদ্রোহী রূপ থেকে শান্তিপূর্ণ রূপ সবকিছুই প্রত্যক্ষ্য করেছে। নগরায়ণের চাপে কলকাতার ঐতিহ্য ম্লান হলেও তা আজীবন থেকে যাবে ইতিহাসের পাতায়, মানুষের মনে। 


তবে আজকের দিনে কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত এই পরিবহন ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ ট্রাম হল দুষণমুক্ত পরিবহনের একটি মাধ্যম। রাজ্য সরকারের তরফে এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বটে। ধর্মতলা সিটিসি কমপাউন্ডের কাছে গড়ে উঠেছে স্মরণিকা। কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ এই ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস ধরা পড়েছে এই মিউজিয়ামে। একেবারে ট্রামের আদলে গড়ে ওঠা একটা কামড়ার মধ্যে রয়েছে এই মিউজিয়াম। আর একটি কামড়ায় রয়েছে কপি শপ। মিউজিয়ামের টিকিট মূল্য ১০ টাকা। দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.