কোয়ারেন্টাইনে থেকেই ৭০ বছর আগে রক্ষা পেয়েছিল পড়শি দেশ ভুটান


Odd বাংলা ডেস্ক: করোনার মতো মারণ ছোঁয়াচে রোগ যাতে না ছড়ায়, তাই কোয়ারেন্টাইন এখন বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক আলোচিত শব্দ। ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি জনজীবনে টেনে এনেছে এই শব্দ। অথচ ৭০ বছর আগে এই পদ্ধতিতেই মহামারির ছোবল থেকে বেঁচেছিল বাংলার গায়ে লেপটে থাকা ড্রাগনভূমি ভুটান। ১৯৪৯ সালের দুনিয়া এই ঘটনা জানতে পারেনি তেমন। কিন্তু মেডিকেল হিস্ট্রি অফ ভুটান বইতে লেখা রয়েছে মাস আইসোলেশন বা গণ পৃথকীকরণ করে মহামারির সময় বিশেষ চিকিৎসা পরিষেবার ইতিহাসটি।  
১৯৪৯ সাল মানে ভুটানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই বছরেই দার্জিলিং শহরে সদ্য স্বাধীনতা লাভ করা ভারত সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি বা মৈত্রী চুক্তি হয় তখনকার নিরিখে অজানা দেশ ভুটানের। দেশটির সর্বময় শাসক রাজা জিগমে ওয়াংচুক ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ছিলেন চুক্তির উদ্যোক্তা। সেই শুরু আধুনিক ভুটানের যাত্রা। ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের চুক্তি বছরেই ভুটানের সিঙ্গেয়ার গ্রামে দেখা দিয়েছিল প্রাণঘাতী এক ছোঁয়াচে রোগ। মনে করা হয়, গুটি বসন্ত ছড়াতে শুরু করেছিল। রোগ নিরাময়ে নূন্যতম আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা বলতে কিছুই নেই। উপায় না দেখে দ্বিতীয় রাজা জিগমে ওয়াংচুক একটি আস্ত গ্রামকেই কোয়ারেন্টাইন করে দিয়েছিলেন। ১৯৪৯ এর এই ঘটনা আজকের কোয়ারেন্টাইন শব্দের অতীত ছায়া বলেই মনে করছেন কিছু বিশেষজ্ঞ ।



 রাজা জিগমে ওয়াংচুকের কড়া নির্দেশে সেই গ্রামে বাইরের কারোর পক্ষে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা়। কোয়ারেন্টাইনে থাকা গ্রামবাসীদের জন্য খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসা হত। আরও উল্লেখযোগ্য, দুই বার্তাবাহক নিয়ম করে এই কোয়ারেন্টাইন গ্রাম সম্পর্কে রাজার কাছে নিয়মিত তথ্য দিতেন। নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্ব রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রাজা প্রতি মাসে পাঠাতেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী।গ্রামের বাইরে রেখে আসা হতো। পরে রোগাক্রান্তরা সেসব নিয়ে যেতেন। এই পদ্ধতিতেই ভুটানে মহামারির প্রকোপ থেকে রক্ষা করেছিলেন রাজা জিগমে ওয়াংচুক। 

পরবর্তী ষাটের দশকে বিভিন্ন সময়ে ভুটানের কিছু এলাকায় রোগ প্রতিষেধক টিকা দান কর্মসূচি পালিত হতে শুরু করে। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি সুবাদে সীমান্ত এলাকার জলপাইগুড়ি থেকে কিছু সাহায্য এবং মেডিকেল কর্মীরা যেতেন ভুটানে। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে পরে কয়েকজনকে কলকাতায় পড়তে পাঠানো হয়েছিল। তারাই রহস্যময় দেশটির প্রথম আধুনিক চিকিৎসক হন। এই গত ৭০ বছরে বেশ কয়েকবার মহামারি রুখতে কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভুটান। আর এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে দেশটির অভ্যন্তরীণ গণস্বাস্থ্য কর্মসূচির অন্তর্গত জীবাণুনাশক বিলি ও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নিয়ম নজর কাড়ছে দুনিয়ার। 

বিশ্ব করোনা হামলা থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া। বহু মানুষের মৃত্যু , লক্ষাধিক আক্রান্ত। গোটা দুনিয়ায় এখন কোয়ারেন্টাইনে।করোনার গর্ভগৃহ চিন। এই দেশের লাগোয়া ১৪টি দেশের সীমান্ত। স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন নিয়ম মানায় সোমবার পর্যন্ত একমাত্র ভুটানেই করোনা সংক্রমণ তেমন প্রবল নয়। অথচ বাকি ১৩টি দেশে করোনাভাইরাস প্রবল আতঙ্কের কারণ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.