করোনাভাইরাস ছাড়াও যেসব রোগ-ব্যাধি সারা বিশ্বে মহামারির আকার ধারণ করেছিল


Odd বাংলা ডেস্ক: যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রোগ মহামারির আকার ধারণ করেছিল। বর্তমানে অবশ্য এই ধরণের অসুখের অস্তিত্ব আর নেই আমাদের সমাজ থেকে এই অসুখগুলি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বটে, তবে এখনও কিন্তু সেইসব ইতিহাস মানুষের মনে থেকে গিয়েছে। 

১) সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা সার্স (সাল ২০০২-২০০৪)- ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে চিনের ফোসন শহর থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল এই রোগের। ২০০৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোগ। যার ফলস্বরূপ প্রায় ৮০০০ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং ৭৭৪ জন এতে প্রাণও হারিয়েছিল। ভাইরাল এই অসুস্থতা যেহেতু একেবারে নতুন এবং অজানা ছিল, সেইজন্যই এটি দেশজুড়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে মেডিকেল ব্যবস্থার বিস্তার করায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। 

২) বুবোনিক প্লেগ (সাল ১৩৪৬-১৩৫৩)- বুবোনিক প্লেগ ব্ল্যাক ডেথ নামেও পরিচিত। মূলত ইঁদুর এবং মাছির মাধ্যমে ছড়ায় এই অসুখ। এর ফলে সারা শরীর জুড়ে রক্তের ক্ষত তৈরি হয়। ত্বকের রঙ কালো হয়ে যায় এবং যৌনাঙ্গেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর পরে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে মানুষ। এই রোগে সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইওরোপ জুড়ে ৭৫-২০০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। 

৩) এশিয়ান ফ্লু (সাল ১৯৫৬-১৯৫৮)- এই ভাইরাস এইচ২এন২ সাবটাইপের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ নামে পরিচিত। এটি প্রথমে চিন উৎপত্তি হয়েছিল, তারপর একে একে সিঙ্গাপুর, হংকং, এবং মার্কিনন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। দ্রুত ভ্যাকসিন দান এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা মহামারির বিস্তার রুখতে সাহায্য করেছিল। 

৪) দ্য ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) (সাল ১৯১৮-১৯২০)- ইনফ্লুয়েঞ্জা  মানবদেহে সব ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য একাই একশো। সেবার এর দ্বারা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন (মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ) মানুষ সংক্রামিত হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ২০-৫০ মিলিয়ন মানুষ। অদ্ভুতভাবে স্বাস্থ্যবান তরুণরা এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে দুর্বল মানুষরা সুস্থ ছিলেন!

৫) জিকা ভাইরাস (সাল ২০১৫-২০১৬)- ব্রাজিল থেকে উদ্ভুত জিকা ভাইরাস মশার মাধ্য ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে। এর লক্ষণ ছিল গায়ে ফুসকুড়ি, ব্যথা, জ্বর। এটি ছোটদের শরীরে মাইক্রোসেফিলি সৃষ্টি করেছিল যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক কারণ এর ফলে মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৫ সালে ব্রাজিলে ২৪০০ শিশু মাইক্রোসেফিলিতে আক্রান্ত ছিল। ২৯ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। 

৬) তৃতীয় কলেরা মহামারি (১৮৫২-১৮৬০)- শতাব্দী প্রাচীন এই রোগ একসময়ে বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু এটি যে দূষিত জল দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বুঝতে প্রায় যুগ যুগ সময় লেগে গিয়েছিল। তৃতীয় মহামারিটি উৎপত্তি হয়েছিল ভারতে। তারপর তা গঙ্গা নদীর মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়ে এশিয়া, ইওরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এর ফলে ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। 

৭) ইবোলা ভাইরাস (২০১৩ থেকে আজ পর্যন্ত)- পশ্চিম আফ্রিকার গিনিতে ইবোলা ভাইরাসের ২০১৩ সালে উৎপত্তি হয়েছিল। এরপর তা ধীরে ধীরে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার ছিল ৬০ শতাংশ। এমনকি ২০১৬ সালেও ২৮,৬৪৬ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং মৃত্যু হয়েছিল ১১,৩২৩ মানুষ। বর্তমানে, ইবোলা কঙ্গো ও উগান্ডা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকেও ছত্রভঙ্গ করছে এবং ২২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.