কোনও পরিবহন ব্যবস্থা নেই, চেন্নাই থেকে পায়ে হেঁটেই বিহারের গ্রামে ফিরছে শ্রমিকরা


Odd বাংলা ডেস্ক: কাজ ও মজুরি না থাকায় ভারতের বড়ো শহরগুলো থেকে শ্রমজীবী মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করে শহর ছাড়ার চেষ্টা করছে। গ্রামের বাড়ি ফিরতে শত শত মাইল পথ হাঁটছেন শ্রমিকরা। ভারতে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় তিন সপ্তাহের নজিরবিহীন লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর সে দেশের ভিন্ন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা অনেকেই রুটিরুজি হারিয়ে নিজের গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। লকডাউনে তাদের কাজকর্ম থেমে গেছে, এর মধ্যে ট্রেন ও বাস আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অনেকেই শত শত মাইল পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিতে শুরু করেছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে লকডাউন। গণপরিবহন বন্ধ সরকারি পরিসংখ্যানে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি শ্রমজীবী মানুষ গ্রাম থেকে নির্মাণশিল্পে ও কারখানার কাজের জন্য ভারতের বড়ো শহরগুলোতে আসে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। 

বাবলু শ্রেয়াল দৈনিক ৫ শত রুপি মজুরিতে মধ্যপ্রদেশের একটি শহরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিল। কাজ বন্ধ ও লকডাউনের পর ঘরে থাকতে হচ্ছে তাকে। একই বস্তিতে তার মতো আরো ৭০ জন শ্রমিক বসবাস করছে। ২০ দিন ধরে কোনো আয় নেই বাবলুর। বাবলু বলেন, এখানে না খেয়ে মরার চেয়ে হেঁটে বাড়ি যাওয়া ভালো। এরকম আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য আড়াই কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত সরকার। কম্যুনিটি কিচেন স্থাপন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রবিবার রাতে চেন্নাই শহরের রেল স্টেশনে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শ্রমজীবী মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দিল্লি থেকে অনেকেই রওয়ানা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানের দিকে, আবার গুজরাট থেকেও কেউ কেউ টানা দুই দিন বা তিন দিন একনাগাড়ে হেঁটে ফিরে আসছেন রাজস্থানে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অনেক মহাসড়কে এখন গাট্টি-বোচকা, ব্যাগ-সুটকেস মাথায় দল ধরে ধরে বহু মানুষকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। 





কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার এই শ্রমিকদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তারা কেউই সরকারি সাহায্যের ভরসায় অপেক্ষা করতে পারেননি। দুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার লকডাউন ঘোষণার ভাষণে বলেছিলেন, “দেশবাসীর এখন আগামী কয়েকদিন একটাই কাজ নিজেদের ঘরের ভেতর আটকে থাকা।” কিন্তু যারা রুটিরুজির ধান্দায় নিজের ঘর ছেড়ে বহু দূরে ছোটোখাটো কাজ করছিলেন তারাই এতে সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় পড়েছেন কারণ তাদের ঘরে ফেরার ট্রেন, বাস সবই বন্ধ। রাজস্থানের ঢোলপুরের বাসিন্দা কিষেণলাল দিল্লির একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। দোকান বন্ধ থাকায় তার মাইনেও জুটছে না, কাজেই তিনি কয়েকশো মাইল দূরের ঢোলপুরের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। কিষেণলাল বিবিসিকে বলছিলেন, “রাস্তায় কোনো ট্রাক বা গাড়ি কিছুটা রাস্তা বসিয়ে নিলে ভালো, নয়তো হেঁটেই গোটা রাস্তা মেরে দেব।”এই যাত্রায় তার সঙ্গী রাকেশ জানান, “এখানে বসে থাকলে কেউ তো আর টাকা দেবে না দেখি গ্রামে গিয়ে কিছু কাজ পাই কি-না। অন্তত ক্ষেতে গম তো কাটতে পারব।” রাজস্থানের সুরথগড়ের একটি কোল্ডস্টোরেজে কাজ করতেন বিহারের চম্পারণের জনা পঞ্চাশেক কর্মী। কাজ হারিয়ে এই গোটা দলটি আবার প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে তাদের গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। যদিও দুই দিনে তারা পৌঁছেছেন সবে আগ্রা পর্যন্ত। প্রচণ্ড গরমে, ক্ষুধা আর পিপাসায় এর মধ্যেই তাদের দশা রীতিমতো কাহিল। ওদিকে দিল্লি থেকে ২০০-৩০০ মাইলের মধ্যে যাদের গ্রাম, তারা রাস্তায় নেমে পড়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবছেনই না। বিবিসি, সিএনএন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.