১৫ বছরে বয়সেই মাসিক বন্ধ, বিরল এক রোগে আক্রান্ত এই কিশোরী!


Odd বাংলা ডেস্ক: অ্যানাবেলের বয়স ১৫, তার এই বয়সেই ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। দুই বছর আগে প্রথমবার যখন অ্যানাবেলের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেল, তখন কিন্তু তিনি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেন নি। কিন্তু এর পর তার ‘হট ফ্লাশ’ অর্থাৎ হঠাৎ করে গরম লাগতে থাকার অনুভূতি হতে লাগল, এবং এসব লক্ষণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকল। 

অ্যানাবেল বলেন, ‘আমি আমার বিজ্ঞানের ক্লাস করছিলাম, হঠাৎ অনুভব করলাম আমার মুখটা লাল হয়ে যাচ্ছে। আমার শিক্ষক তখন বললেন, ‘এই হট ফ্লাশ আমারও হয় কারণ আমার এখন মেনোপজ (ঋতু বন্ধ) হচ্ছে।’ তার এই কথাটাতেই আমার মনে খটকা লাগল। তাহলে কি আমারও এমন কিছু হচ্ছে?’ এই সন্দেহ থেকেই তিনি ইন্টারনেট ঘেঁটে এ সম্পর্কে আরো তথ্য জানার চেষ্টা করলেন। তাতে তিনি যা জানলেন তাতে মনে হতে লাগল হয়তো সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটাই তার ক্ষেত্রে ঘটেছে। পরে ডাক্তাররা বললেন, তার স্বাভাবিক বয়েসের অনেক আগেই মেনোপজ হয়ে গেছে। 

এ খবর শুনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন তার মা। অ্যানাবেল বলেছেন, ‘তখন আমার মনে হল আমি যদি চিৎকার করে কাঁদতে পারতাম। আমি আমার অনুভূতি সম্পর্কে অনেক কিছু লিখলাম, এবং ছবি আঁকার মধ্যে দিয়ে আমার মনের অনুভুতি প্রকাশের চেষ্টা করলাম।’ অ্যানাবেল যে আর কখনো গর্ভধারণ করতে পারবেন না, বা নিজের সন্তান-সন্ততি নিয়ে পরিবার গড়তে পারবেন না – এ কথা মেনে নিতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল তার মায়ের। মেনোপজ কী? মেনোপজ হচ্ছে একজন নারীর জীবনের সেই পর্ব যখন তার পিরিয়ড বা মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। 

পিরিয়ড একেবারে বন্ধ হয়ে যাবার কয়েক মাস বা বছর আগে থেকেই তা অনিয়মিত হতে শুরু করে। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে আছে হঠাৎ করে গরম লাগা, মনোসংযোগ না থাকা, মাথাব্যথা, দুশ্চিন্তা, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া, এবং ঘুমের ব্যাঘাত। সাধারণত মেয়েদের ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে মেনোপজ হয়। নারীদের মেনোপজ হলে দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, এবং সে জন্য হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে, হাড় ভাঙা, হৃদরোগ, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অ্যানাবেলের মত যুক্তরাজ্যের একজন সাধারণ কিশোরীর জীবনে এত বড় পরিবর্তন মোকাবিলা করা সহজ ছিল না। তিনি চান নি যে তার বন্ধুরা তার এই সমস্যা নিয়ে মন খারাপ করুক। 

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০ বছরের কম বয়স্ক নারীদের প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে মাত্র একজনের এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই এর কারণ থাকে অজানা এবং ডাক্তারের পক্ষেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না যে কেন এমন ঘটল। অ্যানাবেলের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে । তার দেহে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন কমে গেছে। এই হরমোন থেকেই মেয়েদের দেহে বিভিন্ন ‘নারীসুলভ’ শারীরিক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় – যেমন তাদের নিতম্ব চওড়া হতে থাকে এবং স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। এই ইস্ট্রোজেনের অভাব পূরণ করার জন্য অ্যানাবেল এখন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) নিচ্ছেন। তাকে প্রতিদিন একটি করে বড়ি খেতে হয়। 

অ্যানাবেল বলছেন, ‘কোন কারণে একদিন বড়ি না খেলেই আমার ‘হট ফ্লাশ’ হতে থাকে।’ অনেকের ভাগ্যে এর চেয়েও খারাপ ঘটনা ঘটেছে। তিনি এখন সংকল্প করেছেন যে তিনি কিছুতেই তার স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত হতে দেবেন না। অ্যানাবেলের প্রতিজ্ঞা হলো, ‘আমি আমার মনের দু:খ নিয়ে ঘরে বসে থাকতে চাই না। কারণ অন্য অনেক মেয়ের জীবনে এই বয়েসেই আমার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আমি বরং ভাবতে চাই যে আমার ভাগ্য ভাল যে আমার জীবনে এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটেনি।’
Blogger দ্বারা পরিচালিত.