ওলাইচণ্ডী: মহামারির এই দেবীর পুজো করেন হিন্দু-মুসলমান সকলেই, মহেঞ্জোদাড়োতেও মিলেছিল মূর্তি


Odd বাংলা ডেস্ক: বিখ্যাত ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেছিলেন, শহরকে কেউ হত্যা করে না। শহর নিজেই আত্মহননে ধ্বংস হয়ে যায় : নগরীগুলো কীভাবে গড়ে ওঠে, কেনই-বা ধ্বংস হয়ে যায়? পৃথিবীর প্রথম নগরীগুলোর নাম কি? সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো নগরী ছেড়ে মানুষ কেন চলে গিয়েছিল? রোম, অ্যাজটেক, ইনকা ধ্বংস হয়েছিল কেন?

আড়াই হাজার বছর আগের পৃথিবীর প্রথম কসমোপলিটন শহর আলেক্সান্দ্রিয়াতে কী ঘটেছিল? বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ১০০০ বছরের জন্য রুদ্ধ হয়ে গেলো কেন? জার্মানীর গটিনজেনে জ্ঞানচর্চার গতি থেমে গিয়েছিল কেন? রাজনৈতিক অস্থিরতা কী ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য নষ্ট করে? এসবের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আর ঠিক একই ভাবে ইতিহাসের গহনে রয়েছেন আর এক দেবী যাঁর নাম ওলাইচণ্ডী। ওলাইচণ্ডী হলেন একজন হিন্দু লৌকিক দেবী। ইনি ওলাদেবী, ওলাবিবি বা বিবিমা নামেও পরিচিত। ইনি কলেরার দেবী এবং অসুর পত্নী।



বঙ্গ (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য) অঞ্চলের অধিবাসীরা ওলাইচণ্ডীর পূজা করে। উক্ত অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীর কাছেই এই দেবী সম্মানীয়া। সাধারণত বাংলায় তাঁর ছয় বোন বনদেবী/বনবিবি (কলেরার দেবী), আজগাইবিবি, ঝোলাইবিবি ও আসানবিবির সঙ্গে তাঁর পূজা হয়। কোনো কোনো আধুনিক গবেষকের মতে ‘সাতবিবি’ নামে পরিচিত এই সাত দেবী আসলে হিন্দু সপ্তমাতৃকার (ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণী ও অন্যান্য) রূপান্তর। তবে সপ্তমাতৃকা ও সাতবিবির মধ্যে প্রায় কোনো সাদৃশ্য নেই বললেই চলে। ভারতে সাত দেবীর পূজা যে সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে, তার প্রমাণ অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের অন্তর্গত সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদাড়ো শহরের টেরাকোটা সিলমোহরে দেখা যায়। এই সিলমোহরে সাতজন নারীকে একসঙ্গে দণ্ডায়মান অবস্থায় দেখা যায়। ওলাইচণ্ডী বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে তাঁর পূজা প্রচলিত।



পুরোহিত বা মুসলমান ফকির এই দেবীর পূজা করেন। হিন্দুমতে পূজায় লৌকিক চন্ডীমন্ত্র বা আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়না। পূজায় বিশেষ কোনো মন্ত্র নেই। নারীরা এবং হাড়ি ডোম শ্রেণীর মানুষও এই পুজোর পৌরোহিত্য করতে পারেন। বিশেষত শনি ও মঙ্গলবারে দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। নদীয়া জেলার ডোম জাতিরা দেবীর পুজায় পশুবলি দিয়ে থাকে। ওলাইচণ্ডীর নৈবেদ্য স্থান অনুযায়ী নানারকম হয়ে থাকে তবে এতে সন্দেশ, পান সুপারি, বাতাসা, আতজাপচাল, পাটালি এগুলো দেওয়া হয়।

লোকায়ত বিধান



দেবীর বিশেষপল্লীগত পূজা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে কলেরা প্রসঙ্গ না থেকে প্রথাগত ও পারম্পরিক ভাবে পল্লীতে শনিবার বা মঙ্গলবার একত্র হয়ে পূজার আয়োজন করা হয়। মাঙ্গন করা - পল্লীর প্রধান গলায় বদির মালা অর্থাৎ খড়ের হার পরে দাঁতে তৃণধারণ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পূজার জন্য অর্থ চাল ডাল ফলমূল ভিক্ষা করে। ছলন / সলন - এই পূজায় দেবীর ক্ষুদ্রাকৃতি মূর্তি বানিয়ে পূজা স্থানে রেখে দেওয়া হয়।


মন্দির

কলকাতার বেলগাছিয়া অঞ্চলে, টালিগঞ্জের বাবুরাম ঘোষ স্ট্রিট, হাওড়ার কাসুন্দিয়া অঞ্চলে, বীরভূম বোলপুর নীলকুঠির পাশে, মেদিনীপুরের গড়বেতার রাজকোটের দুর্গে, চব্বিশ পরগনার জয়নগরে বিবিমা নামে খ্যাত, কলকাতার সুরেন্দ্র ব্যানার্জী স্ট্রিটে শীতলা মন্দিরে, বাঞ্চারাম অক্রূর লেনের বাঁকারায় অর্থাৎ ধর্ম ঠাকুরের মন্দিরে |
Blogger দ্বারা পরিচালিত.