বিবাহ ক্ষেত্রে বাধা দূর করার উপায়


Odd বাংলা ডেস্ক: কথায় বলে মানুষের জন্ম - মৃত্যু এবং বিবাহের উপর মানুষের কোনো হাত নেই। মানব জীবনের উক্ত তিনটি সংঘাতনি সম্পূর্ণ ভাগ্যের অধীন যদিও আধুনিক পৃথিবীর মানুষ , পুথিগত বিদ্যার অহংকারে এবং বস্তুগত ভোগ বিলাসের মাত্যতায় আজ হয়তো সম্পূর্ণ ভাবে একথা বিশ্বাস করে না। জন্ম মৃত্যু ক্ষেত্রে না হোক , অন্তত বিবাহের ব্যাপারে মানুষ যেনো এখন অনেকটাই পুরুষ আকারে বিশ্বাস করে। তারা মনেকরে ব্যেক্তিগত শিক্ষাদিখ্যা বা সামাজিক প্রাতিষ্ঠা লেভার মাধ্যমেই স্বীয় বিবাহ কার্য , ত্বরাণিতা বা নিয়ন্তিত করা যায়।
কিন্তু বাস্তবে, মানুষের এই ধরণের অভিমানী ভাবনার মধ্যে দিয়ে জীবন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাই প্রকাশ পায়। বহু মানুষ আছে, রূপে-গুণে যারা শ্রেষ্ঠ, জীবনেও তারা প্রতিষ্ঠিত, খ্যাতিমান - কিন্তু বিবাহ তাদের ভাগ্যে নেই। সারা জীবনই তারা কুমার বা কুমারী থেকে গেছে। ইংরাজিতে যাকে বলা হয় Eligible Bachelor অথবা Confirmed Bachelor । এছাড়াও বিবাহ ক্ষেত্রে অপর একটি বিষয়ো লক্ষ করা যায়, তা হলো বিবাহে বাধা বা বিবাহ দেরি হওয়া। বহু মানুষ আছে তারা বিবাহযোগ্য, আকর্ষণীয়, ব্যক্তিত্বের অধিকারী কিন্তু এই সব গুন থাকা সত্বেও দেখা যায় সঠিক সময়ে তাদের বিবাহ হচ্ছে না। পুরুষের ক্ষেত্রে এই ঘটনা হয়তো মানুষের চোখে তেমন ঠেকে না কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে যদি সঠিক সময়ে বিবাহ না হয় তবে তাদের জীবন হয়ে উঠতে পারে তিক্ত বিষের মতো অসহনীয়। যৌবনের রূপ - লাবণ্য অনেক সময় ঝরে যেতে পারে এই বিবাহ বিলম্বের কারণে। আনন্দে থাকা নারী পরিণত হয় সাক্ষাৎ বিষাদে।


সুতরাং নারী ও পুরুষের বিবাহ যোগ যেহেতু ভাগ্য দ্বারা পরিচালিত, তাই ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিবাহে দেরি বা বাধার কারণ গুলো বহুকাল ধরেই খতিয়ে দেখেছে এবং বিবাহে বাধা দূর করার নির্দেশ গুলি ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রে অতি সুস্পষ্ট। এই  ব্লগে আমি বিবাহে বাধা দূর করার নিয়ম ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো।

জ্যোতিষ শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে নারী ও পুরুষের বিবাহে বিলম্ব হাওয়া বা না হাওয়ার প্রধান কারণ রূপে শনি গ্রাহকে ধরা হয়। তাই জ্যোতিষ শাস্ত্র প্রথমেই বিবাহ বিলম্বের কারক গ্রহ শনির অবস্থান এবং পরিস্থিতিকে বিশ্লেষন করে মানুষের শীঘ্র বিবাহ সুচিত করার উপায় নির্দেশ করে। বিবাহ ক্ষেত্রে প্রথমে মানুষের জন্ম ছক বিচার করে কোন গ্রহ বিবাহ কারক তা নির্ণয় করতে হয়। তারপর দেখতে হয় ওই গ্রহের উপরে অন্য কোন কোন শুভ বা অশুভ গ্রহের প্রভাব কতখানি। জাতকের বিবাহ যোগের উপর যদি অশুভ গ্রহের প্রভাব থাকে তাহলে সেই প্রভাব মুক্তির সম্ভাবনা গুলোকে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এই ভাবেই নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া বা বিধান অনুসরণ করলেই জাতক বা জাতিকার বিবাহ বাধা অপসারিত হয়।

এখান এই বিবাহে বাধা কেটে গিয়ে শীঘ্র বিবাহের সম্ভাবনার কিছু উপায় বা  টোটকা বলা হলো -
১) মেষ রাশির লোকেদের বিবাহবার্তা চলা কালীন লাল অথবা গোলাপী বস্ত্র পরিধান করা উচিত। তাতে যার সাথে বিবাহের কথা চলছেন সেই ব্যক্তি আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে সম্পূর্ণ মাত্রায়।
২) বৃষ রাশির জাতক বা জাতিকাদের বিবাহের কথা চালানোর সময় হালকা রঙের বস্ত্র পরিধান বাঞ্ছনীয়। বস্ত্র উজ্জ্বল ও সম্পূর্ণ কালো এবং নতুন হতে হবে।
৩) বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের প্রাথমিক অবস্থায় মিথুন রাশির ব্যক্তিদের সবুজ রঙের পোষাক পরা ভালো। এই রাশির লোকেরা নতুন বস্ত্র পরিধান না করলেও চলবে।
৪) বিবাহ সম্পর্ক স্থাপনের সময় কর্কট রাশির জাতক বা জাতিকাদের সাদা বস্ত্র ব্যবহার করাই ভালো। কিন্তু উগ্র ও চটকদার বস্ত্র না পরাই ভালো।


৫) সিংহ রাশির জাতক-জাতিকাদের পক্ষে বিবাহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে হাল্কা গোলাপী বা হাল্কা সবুজ বস্ত্রই উপযোগী।
৬) বিবাহবার্তা চলাকালীন কন্যা রাশির জাতক বা জাতিকাদের সবুজ - সাদা বা সৌম্য রঙের কোনো পোষাক পরিধান করা উচিত।
৭) যখন বিবাহ সম্পর্কিত প্রস্তাব এলে তুলা রাশির জাতক বা জাতিকাদের নতুন বস্ত্র পরিধান করা উচিৎ। গোলাপী বা সাদা বা হলুদ রঙের বস্ত্র এদের পক্ষ্যে প্রায়াজনিয়।
৮) বিবাহের পাকা কথা হয়েগেলে বৃশ্চিক রাশির ব্যক্তিদের লাল রঙের বস্ত্র পরিধান করা উচিত।
৯) ধনু রাশির জাতক বা জাতিকাদের বিবাহে কথা চলাকালীন হলুদ রঙের বস্ত্র পরিধান করা উচিত।
১০) বিবাহ সম্পর্খে স্থাপন হবার প্রথম পর্যায়ে মকর রাশির জাতক বা জাতিকার পক্ষে আকাশী বা হাল্কা নীল রঙের পোষাক শুভ।
১১) বৈবাহিক সম্পর্কে স্থাপনের জন্যে কুম্ভ রাশির জাতক - জাতিকাদের বেগুনী বা গাঢ় নীল রঙের পোষাক পরা বিধেয়।
১২) মীন রাশির ব্যক্তিদের পক্ষ্যে শুভ রং হলুদ।
সুতরাং বিবাহ সম্বন্ধীয় প্রারম্ভিক কথাবার্তা চলাকালীন অথবা পাত্র -পাত্রীর প্রাথমিক দেখা সাক্ষাৎকালীন জাতক বা জাতিকাদের রাশির অনুসারে উপরোল্লিখিত রঙের পোষাক পরা উচিত। এর ফলে পাত্র - পাত্রী যেমন উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে তেমন পরস্পরের  বৈবাহিক বাধা দূর হয়ে শীঘ্র বিবাহের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে। এই সাথে বিবাহ বিষয়ক কথা - বার্তার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে। এই স্থান গুলির কারণে আলাপ আলোচনা নিশ্চিত ফলের সূচনা করে। এই কারণে জাতকের জন্ম-কুন্ডলীর সপ্তম ভাবের প্রকৃতি এবং তার অধিপতি কোন গ্রহ তার চরিত্র বিচার করে নিতে হবে। সকলের জন্ম কুন্ডলীর সপ্তম ভাব বিবাহের ভাব হিসাবেই ধরা হয়। এবারে লগ্ন সাপেক্ষে সপ্তম ভাব নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
 মেষ লগ্ন : মেষ লগ্নের জাতক বা জাতিকাদের যেহেতু সপ্তম ভাব তুলা রাশি সেই কারণে এই লগ্নের জাতক বা জাতিকাদের বৈবাহিক বার্তা বিনিময়ের জন্যে কোনো পর্যটন কেন্দ্র বা মনোরঞ্জক স্থান চয়ন করা উচিত। কোনো আত্মীয় গৃহের পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন ঘর এই কাজের জন্য উপযোগী বলে ধরা হবে।



বৃষ লগ্ন : বৃষ লগ্নের সপ্তম বা বিবাহ ভাবে বৃশ্চিক রাশি অবস্থানের জন্যে এই লগ্নের জাতক বা জাতিকাদের বিবাহের আলোচনা সম্পন্ন করার জন্য কোনো হোটেল, গেস্ট হাউস বা ওই জাতীয় কোনো বাড়ি বেছে নিতে হবে।

মিথুন লগ্ন : মিথুন লগ্নের সপ্তম ভাবে যেহেতু ধনু রাশি অবস্থিত, সেই কারণে এই রাশির ক্ষেত্রে বৈবাহিক ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোনো মন্দির বা ধর্মস্থান সর্বোত্তম বলে ধরা হয়।

কর্কট লগ্ন : কর্কট লগ্নের বিবাহ ভাবে মকর রাশি থাকার দরুন এই রাশির জাতক বা জাতিকার পক্ষে বৈবাহিক সম্পর্ক নিশ্চিত করার জন্যে কোনো পুরাতন ভবন আলোচনার জন্যে চয়ন করা বাঞ্ছনীয়। প্রসঙ্গত, আলোচনা সন্ধ্যা সময় হওয়া এদের পক্ষে শুভ।

সিংহ লগ্ন : সিংহ লগ্নের ব্যক্তিদের বিবাহ ভাবে যেহেতু কুম্ভ রাশি রয়েছে, সেই কারণে এই লগ্নের ব্যক্তিদের বিবাহ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনার ক্ষেত্রে কোনো প্রসিদ্ধ বা প্রাচীন স্থান চয়ন করা শুভ।

কন্যা লগ্ন : সপ্তম ভাবে যেহেতু মীন রাশি সেই জন্য বিবাহ বিষয়ক বার্তা বিনিময়ের ক্ষেত্র কন্যা লগ্নের জাতক - জাতিকাদের কোনো মন্দির বা ধর্মস্থান নির্বাচনই উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

তুলা লগ্ন : তুলা লগ্নের জাতক বা জাতিকারা সপ্তম বা বিবাহ ভাব যেহেতু মেষ রাশিতে অবস্থিত, বিবাহ বিষয়ক প্রাথমিক আলাপে জন্য এদের পক্ষে কোনো নিকটাত্মীয়ের গৃহ চয়নই উপযোগী। এছাড়া এরা কোনো হোটেলে , গেষ্ট হাউস অথবা ধর্মশালায় ইত্যাদিতে জায়গাতে বসেও আলোচনা করতে পারেন।
বৃশ্চিক লগ্ন : বৃশ্চিক লগ্নের সপ্তম ভাবে বৃষ রাশি। সেইজন্যে এই লগ্নের জাতক বা জাতিকারা প্রথমের বিবাহ বার্তা সংঘটনের জন্য কোনো পার্ক, মনোরম স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র চয়ন করা সৌভাগ্যপ্রদ।

ধনু লগ্ন : ধনু লগ্নের জাতক বা জাতিকাদের বিবাহ ভাবে মিথুন রাশির অবস্থানের কারণে বিবাহ প্রসঙ্গ আলোচনার জন্যে এদের কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশিষ্ট স্থানে , বাগানে বা সবুজে ঘেরা পরিবেশ চয়ন করা বাঞ্চনীয়।

মকর লগ্ন : মকর লগ্নের সপ্তম ভাবে কর্কট রাশির বলে মকর লগ্নজাত ব্যক্তিদের পক্ষে বিবাহের আলোচনার উপযুক্ত স্থান হলো কোনো নদী বা সরোবরের উন্মুক্ত তট বা ওই ধরণের কোনো জলাধার যুক্ত স্থান।

কুম্ভ লগ্ন : বৈবাহিক আলোচনার জন্য কুম্ভ লগ্নের ব্যক্তিদের - যেহেতু তাদের বিবাহ ভাবে সিংহ রাশির অবস্থান তাই কোনো প্রসিদ্ধ বা প্রতিষ্ঠিত স্থান বেছে নেয়া আবশ্যক।

মীন লগ্ন : মীন লগ্নের সপ্তম বা বিবাহ ভাবে যেহেতু কন্যা রাশি অবস্থান সেই কারণে এই লগ্নের জাতক বা জাতিকাদের বিবাহ বিষয়ক প্রাথমিক আলোচনার কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যযুক্ত স্থানে অবস্থিত কোনো আত্মীয়ের গৃহে করাই আবশ্যক।

এই প্রসঙ্গে জানানো যাক যে, যেসব কন্যার বিবাহে বিলম্ব লক্ষ্য করা যায়, তাদের বিবাহের কথাবার্তা চলাকালীন তারা যদি খোলা চুলে থাকা এবং কপালে লাল চন্দনের টিপ লাগিয়ে বসে তবে বিবাহ তাদের ত্বরান্বিত হয়।

জাতকের জন্ম ছকে সপ্তম বা বিবাহ ভাবের অধিপতি যে সময় গোচরে অন্তর্গত বা বক্রী থাকে সেই সময়ে বিবাহ বিষয়ক আলোচনা না করাই শ্রেয়, কারণ এ সময়ে বিবাহ সম্বন্ধিয় ক্ষেত্র গুলো শক্তি হীন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে গোচরে বিবাহ ভাবের গ্রহস্বামী যখন শক্তিশালী হয় তখনই বিবাহ কার্যের সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়।

যদি শনি গ্রহের কারণে বিবাহ ভাব দুর্বল হয়ে পরে অথবা জন্ম ছকের বিবাহ ভাবের উপর শনি গ্রহের দৃষ্টি থাকে তাহলে শীঘ্র বিবাহ সম্পন্ন করার নিমিত্তে বিবাহযোগ্যা কন্যার পর্যায়ক্রমে সাতটি শনিবার তেলে মুখ দর্শন করে দানকর্ম করা উচিত । এতে কন্যার বিবাহের বাধা দূর হয়।

সুতরাং মানুষের বিবাহে বাধা দূর করার এই হলো কয়েকটি সহজ সরল উপায়। বিশ্বাসপূর্বক উপায় গুলি অবলম্বন করলে নিশ্চিত সকলের বিবাহে বাধা দূর হবে এবং শুভ বিবাহের জন্যে জাতক বা জাতিকার জীবন হয়ে উঠবে সুখী এবং সমৃদ্ধশীল।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.