'উড়তে মানা আকাশে তোর...'! পাখি হয়েও কেন আকাশে উড়তে পারে না এরা, জানুন এর নেপথ্যের কাহিনি


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: পাখি নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা এক প্রাণী, যে কিনা অনায়াসে হারিয়ে যেতে পারে দিগন্তে। কিন্তু এই পক্ষীকূলে এমন অনেক পাখি রয়েছে, যারা নামে পাখি হলেও আকাশে উড়তে পারে না। 

উড়তে মানা আকাশে তোর...
এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, পাখিদের দেহের হাড় বেশ ফাঁপা এবং বায়ু দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। আর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এরা আকাশে উড়তে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যত্র ভ্রমণের জন্য, হিংস্র পশুর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে, খাবার সন্ধানে অন্যত্র উড়ে যাওয়ার জন্য পাখির উড়তে পারার বিষয়টি খুবই সহায়ক। ওজনে হালকা হওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে দূর দূরান্তে ভ্রমণ করার চেয়ে উড়ে যাওয়ায়  খুবই সুবিধা হয় পাখিদের। কিন্তু জানেন কি, দেখতে সুন্দর লাগলেও এর পিছনে থাকে পাখিদের কঠোর পরিশ্রম। কারণ এর জন্য পাখিদের প্রচুর পরিমাণ শক্তি খরচ করতে হয়। যেসব পাখিরা উড়তে পারে, তাদের দেহের আকার ক্ষুদ্র হয়ে থাকে। কিন্তু যেসব পাখিরা উড়তে পারে না, তারা এই শক্তি দেহে জমিয়ে রাখে ডাঙায় বেঁচে থাকার কাজে খরচ করার জন্য। 

কীভাবে আবির্ভূত হল এমন পাখি যাঁরা উড়তে পারে না-
পাখির উড়তে পারা অনেকগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে। তবে এই উড়তে না পারা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। ধরুন কোনও একটি পাখি এমন অঞ্চলে বসবাস করে, সেখানে তাদের কোনও পশুর আক্রমণের মুখোমুখি পড়তে হয় না বা খাদ্যের অভাবও সেউই অর্থে নেই। তাই এইভাবেই ডানার চেয়ে পায়ে হাঁটাই বেশি শ্রেয় বলে মনে করতে শুরু করল কোনও পাখির প্রজাতি। এইভাবে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে কোনও এক পাখির শরীরে গজাতে শুরু করল ভারি পালক। ডানা আরও সরু  ও পাতলা হয়ে উঠল। এইভাবেই বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে ডানার ব্যবহার লোপ পেল, ফলে পাকাপাকিভাবে ওড়া বন্ধ হয়ে গেল সেইসব পাখির। 

এই পৃথিবীর বুকে প্রায় ষাট প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা উড়তে পারে না। আজ আপনাদের বলব তেমনই কিছু পাখির কথা-
পেঙ্গুইন
১) পেঙ্গুইন- আন্টার্কটিকার শীতল পরিবেশে বসবাস করে পেঙ্গুইন। এরা ডানার সাহায্যে সাঁতার কাটতে পারে, দুই পায়ে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ায় যেখানে-সেখানে। প্রায় আঠারো প্রজাতির পেঙ্গুইন রয়েছে যাদের কেউই উড়তে পারে না। এরা লম্বায় গড়ে ৪ ফুটের কাছাকাছি হয়। এরা সাধারণত মাছ এবং স্কুইড জাতীয় প্রাণীর খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। 
ক্যাসোওয়ারি
২) ক্যাসোওয়ারি- পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলে এই পাখির বাস। এরা কিন্তু খুবই দস্যি প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের গলার স্বর খুবই কর্কশ প্রকৃতির হয়। এদের চিৎকারে অন্যান্য পাখিরা পালিয়ে যায়। এদের ধারালো নখ এদের কাছে প্রাণরক্ষা এবং শিকারের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে। নখ দিয়ে আঘাত করে এরা শিকার গ্রগণ করে। গাছের লতা-পাতা থেকে শুরু করে পোকামাকড়ও খেয়ে বাঁচে। 
উটপাখি
৩) উটপাখি- আফ্রিকা এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একাধিক এলাকায় উটপাখি দেখতে পাওয়া যায়। পাখি হয়ে উড়তে না পারলেও উটপাখি কিন্তু পক্ষিকূলের রাজার মতোই হাবভাব। উটপাখিদের দৈহিক আকার একটি বিশাল আকারের হয়ে থাকে। দেহের মতো এদের ডিমও বিশালাকার হয়ে থাকে। উড়তে না পারলেও এরা কিন্তু রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়োয়।  এদের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
কিউই
৪) কিউই- ফলের পাশাপাশি কিউই একটি পাখিরও নাম। দেখতে ভারি মিষ্টি ও গোলগাল এই পাখি নিউজিল্যাণ্ড-এ দেখতে পাওয়া যায়। শরীরে ছোট কিন্তু দেহের অনুপাতে বড় ডিম পাড়ে এই কিউই পাখি।নিউজ্যান্ডের পর্যটকদের কাছে কিউই পাখি খুবই আকর্ষণীয় একটি প্রাণী। 
ওয়েকা
৫) ওয়েকা- নিউজিল্যাণ্ডে কিউই ছাড়াও আরও একটি প্রজাতির পাখির দেকা মেলে, যারা উড়তে পারে না, আর তা হল ওয়েকা। নিউজিল্যাণ্ড ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ওয়েকা পাখির গলার আওয়াজও খুবই কর্কশ। জোরালো ডাক। উড়তে না পারলেও সাঁতার কাটায় বিশেষ পারদর্শী হয় ওয়েকা।  
Blogger দ্বারা পরিচালিত.