১২টি ভারতীয় খাবার, যেগুলি মোটেই ভারতীয় নয়


Odd বাংলা ডেস্ক: ভারত এক বিপুল জনসংখ্যার দেশ। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একসাথে বসবাস করেন এবং প্রত্যেকেরই খাওয়া-দাওয়ার ধরণ আলাদা হয়। তবে খাবারের মধ্যে যতই বৈচিত্র থাকুক না কেন ৯০% ভারতীয়ই খাওয়ার ব্যাপারে একেবারে পাগল। আমরা খাবার ভীষণ ভালোবাসি। তাই তো সবসময়ই চেষ্টা করি পছন্দের জিনিসগুলো খাওয়ার। এছাড়াও ট্রাই করে দেখি নিত্য নতুন ডিশ বানিয়ে তা খাওয়ার বা কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভিন্ন স্বাদের খাবার চেখে দেখার। সারা ভারতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের রান্নার পদ রয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন ভারতে এমন কিছু জনপ্রিয় খাবার রয়েছে যেগুলি ভারতে আবিষ্কার হয়নি, কিন্তু সমস্ত ভারতবাসীরই এগুলি প্রিয় । আসুন দেখে নেওয়া যাক এরকমই কয়েকটি খাবার যেগুলির উৎপত্তি হয়েছে বিদেশে।

১. সিঙারা

সিঙারা ভারতের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার, প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতীয় এটা পছন্দ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটি ভারতে প্রথম তৈরি হয়নি। সিঙারার প্রথম প্রচলন হয় ত্রয়োদশ অথবা চতুর্দশ শতকে মধ্য এশীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা।

২. বিরিয়ানি

বিরিয়ানি দক্ষিণ এশীয় ডিশ হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু কিছু শেফের বিশ্বাস ছিল যে এটার পারস্যে উৎপত্তি হয়েছিল। এছাড়াও, এটি দাবি করা হয় যে বাবর এখানে আসার আগে ভারতে এই খাবার চালু করা হয়েছিল।

৩. গুলাব জামুন বা পান্তুয়া

উইকিপিডিয়ায় উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, গুলাব জামুন প্রথম মধ্যযুগীয় ভারতে প্রস্তুত হয়, মধ্যএশীয় তুরস্কের আক্রমণকারীরা ভারতে এসে প্যান কেক থেকে এটি আবিষ্কার করে। এক তত্ত্ব দাবি করে যে, মুগল সম্রাট শাহ জাহানের ব্যক্তিগত রাঁধুনি এটি হঠাৎ করে আবিষ্কার করে ফেলেন। এটির নাম ফার্সি শব্দ থেকে আসে যা গল মানে ফুল এবং আব মানে জল। গোলাপ ফুল সুগন্ধি মিশ্রিত সিরাপ এটি। এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক রান্না বিশেষজ্ঞ মাইকেল ক্রন্দল অনুসারে, লুকমৎ আল-কাদি এবং গুলাব জামুন দুটো খাবারই একটি ফার্সী খাবার থেকে উদ্ভূত।

৪. চা

সব চা মূলত চীনে উৎপাদিত হয়। কিন্তু ১৬০০ সালের শেষের দিকে ভারতেও চা চাষ করা হয়েছিল কারণ এই ব্যবসায় শুধুমাত্র চীনের একাধিপত্ব থাকার একটা আশঙ্কা ছিল। চা ভারতীয়দের মধ্যে অনেক বিখ্যাত।

৫. ডাল ভাত

ডাল ভাত প্রথম নেপালে উৎপত্তি হয়। ডাল ভাত বেশিরভাগ ভারতীয়র প্রধান খাদ্য। অনেক ভারতীয়রই সারাদিনে ডাল ভাত না খেলে যেন খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না।

৬. চিকেন টিক্কা মশালা

চিকেন টীক্কা মশালার উৎপত্তি নিয়ে অনেকের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই দাবি করেন তারাই এটার আবিষ্কারক, এর মধ্যে রয়েছে ভারতের পাঞ্জাব এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো। আপনি জানলে অবাক হবেন যে এটি ব্রিটেনের অন্যতম প্রিয় ডিশ। শুধু তাই নয় ২০০১ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার এক মন্ত্রী এটাকে ‘A true British National Dish’ আখ্যা দেন।

৭. শাওয়ারমা

নন-ভেজ প্রেমী মানুষদের অন্যতম প্রিয় খাবার, যা সাধারণত রাস্তার ধারেই পাওয়া যায়। এটির প্রথম উৎপত্তি হয় উনবিংশ শতাব্দীতে ওটোম্যান বুরসায় (বর্তমানে বুরসা, তুর্কি)। এটাতে দেওয়া হয় শশা, টমেটো, পেঁয়াজ, অল্প পাতিলেবু এবং মাংসের টুকরো। অনেক বড় রেস্টুরেন্টেও এটি পাওয়া যায়।

৮. রাজমা

লাল রঙের কিডনির মতো বিনস প্রধানত প্রস্তুত করা হয় মেক্সিকোতে। এটি দিয়ে মশলাদার গ্রেভি বানিয়ে ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। এটি মূলত উত্তর ভারত এবং নেপালে সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

৯. নান

মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় নান উৎপন্ন হয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব থেকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলে যে এটি ফার্সি ও মুগলদের দ্বারা প্রথম তৈরি হয়েছিল। এটি প্রায় ২৫০০ বছর আগে প্রথম তৈরি করা হয়।

১০. সুক্তো

করলা এবং অন্যান্য সবজি দিয়ে সুক্তো প্রস্তুত করা হয় যা মূলত ভারতীয়, কিন্তু পুরনো দিনের পর্তুগিজদের দ্বারা প্রথম এটি প্রস্তুত করা হয়। বিখ্যাত ভারতীয় সংবাদপত্র ও মিডিয়া, ইন্ডিয়া টাইমস অনুযায়ী এটিতে ধীরে ধীরে নানারকম সবজি ও ভারতীয় মশলা যোগ করা হয় এবং পরবর্তীতে এটিতে দুধ ও মিষ্টি যোগ করে এর স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে যায়।

১১. জিলিপি

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, জিলিপির প্রথম উৎপত্তি হয় দক্ষিণ এশিয়ায়। হবসন-জবসন এর মতে হিন্দিতে জিলাবি শব্দটি আরবিক শব্দ জালাবিয়া বা পার্সিয়ান শব্দ জুলবিয়া থেকে এসেছে যেগুলি একই খাবার পদ। এটি ভারতে প্রথম নিয়ে আসে, পার্সিয়ান ভাষায় কথা বলা তুর্কির ব্যবসায়ীরা।

১২. ফিল্টার কফি

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ষোড়শ শতকে কর্ণাটকের বাবা বুদান নামের এক পবিত্র সুফি ব্যক্তি মক্কায় তীর্থে গিয়ে সেখান থেকে এই ধরণের কফি নিয়ে আসেন। তিনি বাড়ি ফিরে সেটি দিয়ে এই ধরণের কফি বানান প্রথম এবং তিনি তার বাড়ির পাশের পাহাড়ে কফির চাষও শুরু করেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.