অসহায় বন্যপ্রাণীর একমাত্র সহায় এই 'মা', নিজের বুকের দুধ খাইয়ে লালন করেন এদের


Odd বাংলা ডেস্ক: ছোট্ট কাঠবিড়ালীটা জন্মের পরই হারিয়ে ফেলেছে মাকে। বাঁচবে কীভাবে? খাবেই বা কি? গাছে গাছে ছুটে বেড়ানো তো পরের কথা। একজন মা কাঠবিড়ালীর ছোট্ট ছানাটাকে বুকে আগলে নেন। ছোট্ট ছানার মুখে তুলে দেন নিজের বুক। ওই বুকের দুধে প্রাণ পায় কাঠবিড়ালী ছানা। ছোট্ট ছানাটার জীবন দেওয়া মা টা কোনো কাঠবিড়ালী নয়, একজন মানুষ। বিদ্যুতের আলো ঝকঝক করা এলাকার মানুষেরা এসব কথা শুনলে চমকে ওঠবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম অরণ্য আমাজনের বাসিন্দা অ্যাওয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটাই জীবন।

অসহায় বা মরতে বসা কাঠবিড়ালী ছানাটা কিংবা বানর ছানাটাকে নিজের বুকে আগলে নেন কোনো নারী। আর নিজের সন্তানের মতই পালন করে বড় করে তোলেন। নিজ সন্তান বলতে একেবারে আক্ষরিক অর্থে তাই। নিজের বুকের দুধ দিতেও কোনো কৃপণতা নেই অ্যাওয়া মায়েদের। ব্রাজিলের পূর্বাঞ্চলে আমাজনের গহীন এলাকায় অ্যাওয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাস। নিজেরা বিলুপ্ত হতে হতে একেবারে শেষ পর্যায়ে আছে। সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে সংখ্যায় তাঁরা এখন মাত্র তিনশো জন। হয়তো এ কারণেই সহজে কোনো প্রাণীর চলে যাওয়াটা ভালো লাগে না অ্যাওয়াদের। ডেইলি মেইলকে দুর্দান্ত কিছু ছবি আর তথ্য দিয়েছেন আলোকচিত্রী ডমিনিকো পুগলিস। সম্প্রতি তিনি ঘুরে এসেছেন অ্যাওয়াদের গ্রাম। 

পুগলিসের তোলা ছবিতেই দেখা যায় এক কিশোরী মা যত্ন নিয়ে কাঠবিড়ালী ছানার মুখে তুলে দিয়েছে নিজের বুক। আর খুব আগ্রহ নিয়ে ‘মা’ এর দুধ খাচ্ছে কাঠবিড়ালী ছানা। পুগলিস জানালেন, অ্যাওয়া পরিবারের শিশুরা প্রাণীদের সঙ্গেই বেড়ে উঠে। অ্যাওয়া বাবা ও মা প্রাণীদের রীতিমত দত্তক নেয়। নিজেদের শিশুদের সঙ্গেই পুষে বড় করে। আর এসব প্রাণীও ‘বাবা ও মা’ এর কাজটা করে দেয়। কেমন কাজ? পুগলিস জানালেন, এই যে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দেওয়া, গাছ থেকে ফল পেড়ে দেওয়া, ঘুমিয়ে গেলে একটু পাহারা দেওয়া। শিকার করে আনা কাঠবিড়ালী, বানর, শূকর বা যেকোনো প্রাণী অ্যাওয়া লোকজন খেয়ে সাবাড় করে ফেলবে। কিন্তু দত্তক নেওয়া প্রাণীটাকে কখনো মারবেন না তাঁরা। যতই পোষা হোক, ‘সন্তান’ প্রাণী অনেক সময় বনে ফিরে যেতে চায়। এমনকি চলে যায়। তখন অবশ্য বাধা দেয় না ‘বাবা ও মা।‘ বনে ফিরে গেলেও প্রাণীটিকে চিনে রাখে অ্যাওয়া পরিবারের সদস্যরা। শিকারে ধরা পড়লেও ওই প্রাণীটিকে শিকার করে না। পুলগিস বলেন, ‘অ্যাওয়ারা কে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকে তা বলা যাবেনা, তাঁরা প্রকৃতিরই অংশ।‘ পুলগিস নদীপথে গহীন অরণ্যে প্রবেশ করেন। নৌকার শব্দ পেয়ে অ্যাওয়া পরিবারের মানুষ তীরে এসে ভীড় জমায়। পুলগিসকে তাঁরা অভ্যর্থনা জানায় ঠিকই কিন্তু পুলগিসের সঙ্গে তাঁর পরিবার দেখতে না পেরে খুব বিরক্ত হয়। পুলগিস জানান, তাঁকে অ্যাওয়া মানুষেরা পরামর্শ দেয় সব সময় পরিবারের সঙ্গে থাকার। পুলগিস বলেন, ‘তাঁদের কিছু বোঝাতে পারি না আমি। কেননা বাইরের পৃথিবীটা সম্পর্কে তাঁরা আসলে কিছুই জানে না।’ কয়েকশত বছর আগে লাখ লাখ অ্যাওয়া বাস করত এসব এলাকায়। 

ইউরোপীয়রা উপনিবেশ স্থাপন করতে এসে নির্বিচারে এসব মানুষকে হত্যা করেছে। আর এ সময়ে অ্যাওয়ারা মারা যাচ্ছে জল বসন্ত, হাম ও বিভিন্ন ফ্লুতে। উপনিবেশ আমলে অ্যাওয়াদের দাস বানিয়ে রাবার আর আখ চাষে কাজ করিয়েছে ইউরোপীয়রা। কয়েকজন অ্যাওয়া বাইরের জগত সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে। এদেরই একজন পুলগিসকে বলেন, ‘বনের ভেতর ঢুকলে কেবল পুড়িয়ে দেওয়া গাছপালার গন্ধ আর ধোঁয়া দেখতে পাই। আগুনের তাপ আমাদের জনজীবনেও এসে লাগছে। আর এজন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। এ আগুনে আমরা বাঁচতে পারবো না। পুরো বনে অনেক ফল,অনেক সম্পদ। কিন্তু সব ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা কী শিকার করব? আমরা মধু সংগ্রহ করব কীভাবে?’ অ্যাওয়ারা কাপড় চোপড়ের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নয়। পুলগিস বলেন, ‘ওদের কে টিশার্ট দিলে ওরা খুব পছন্দ করে। কিন্তু আমি জানি না ওরা আসলে কাপড়টির ব্যাপারে কী ভাবতে পারে, কাপড়টি কোথা থেকে এল, কারণ তাঁরা কারখানার কথা চিন্তাও করতে পারবে না। আমার মনে হয় তাঁরা ভাববে এটা কোনো গাছ থেকে নেওয়া। কেননা প্রতিদিনই তো তারা বন থেকে নিজেদের শপিংটা সেরে নেয়!’ পুলগিসের দেওয়া সারি সারি ছবির মধ্যে আরো একটি ছবি নজর কাড়ে। লাল একটি গেঞ্জি পড়া (হয়তো পুলগিসেরই দেওয়া) এক ‘মা’ পরম মমতায় তাকিয়ে আছেন নাম না জানা বিলুপ্ত প্রায় একটি প্রাণীর ছানার দিকে। অ্যাওয়া মা বাঁচলে ওই প্রাণীটিও বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.