বাজারে করোনাভাইরাসের টিকা আসতে আর কতদিন?
Odd বাংলা ডেস্ক: অতি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে পাল্লা দিয়ে ছুটছে বিশ্বের ৩৫টি ওষুধ কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তবে বিশ্বে প্রতিদিনই ভাইরাস আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে এই টিকার জন্য।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা দেওয়া হয়। এমআরএনএ-১২৭৩ নামের এই টিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মডার্না থেরাপিউটিকস দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য এরপরও এই টিকার পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ হয়ে বাজারে আসতে সময় লাগবে প্রায় এক বছর।
দ্বিতীয় ধাপে ৪৫ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। এই স্বেচ্ছাসেবীদের কারো সার্স ভাইরাসে আক্রান্তের রেকর্ড থাকা চলবে না। এর কারণ হচ্ছে, সার্স -কোভ-২ ভাইরাস থেকেই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। এই দলটির ওপর টিকার তিনটি ডোজ প্রয়োগ করা হবে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এই টিকার ডোজ কতটুকু শক্তিশালী করবে তা দেখাই এর উদ্দেশ্য। পরীক্ষায় যদি কোনো তীব্র প্বার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা যায় তাহলে এর পরের ধাপে শতাধিক স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার তৃতীয় পরীক্ষা চালানো হবে।
প্রথম ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব হেলথে (এনআইএইচ) টিকার শতাধিক অ্যাম্পুল পাঠিয়েছিল মডার্না।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এনআইএইচের একাধিক সেন্টারে টিকার গবেষণা কাজ চলছে। পরের ধাপে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি অ্যাম্পুল পাঠানো হবে।মডার্নার প্রেসিডেন্ট ড.স্টিভেন হগ বলেন, যদি পরীক্ষায় টিকাটি কেবল নিরাপদই নয়, বরং সফল প্রমাণিত হয় তাহলে এই ব্যাপক চাহিদা পূরণে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে তার প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বে এবারই প্রথম রেকর্ড পরিমাণ কম সময়ের মধ্যে কোনো টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এবার প্রথার বাইরে যেয়ে ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা উন্নয়নে। প্রচলিত টিকা উন্নয়ন ব্যবস্থায় অসংখ্য ভাইরাস তৈরিতে বিপুল সময় প্রয়োজন বিধায় এমআরএনএ-১২৭৩ টিকাটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়নি। বরং ভাইরাসের জেনেটিক কোডের একটি অংশ কপি করে সেটি এই টিকায় সন্নিবেশিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ড.স্টিভেন হগ জানান, এনআইএইচের ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনেফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউসি তিন মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা মানবদেহে পরীক্ষামুলক প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে মাত্র ৬৩ দিনের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করা গেছে। তাই আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর পরীক্ষামূলক ধাপগুলো শেষ হবে।
অবশ্য করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের দেহে এই টিকা প্রয়োগ করতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে। সবগুলো পরীক্ষামূলক ধাপ পেরুতে হয়তো ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ড. অ্যান্থনি ফাউসি। তবে গবেষকরা এখন টিকার উন্নয়নে প্রত্যেকটি সপ্তাহ, দিন আর মিনিট গুনছেন।
ড.স্টিভেন হগ বলেন, ‘একেবারে প্রথম থেকেই এটি ছিল প্রতিযোগিতা, ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা। অতীত থেকে আমরা যদি কোনো শিক্ষা নিয়ে থাকি, তাহলে সেটি হচ্ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যতটুকু সুবিধা আমরা পাব তার পুরোটা আদায় করে নেওয়া।’
Post a Comment