লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে আটকে আছে প্রায় ৬১ ট্রাক, কীভাবে ফিরবেন তাঁরা?



Odd বাংলা ডেস্ক: ভারত থেকে আমদানি পণ্য পাটবীজ নিয়ে বাংলাদেশে আসা ৬১ জন ট্রাক ও এগুলোর চালককে গত সাত দিনেও (৪ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত) ফেরত নেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এখন সেই ট্রাকচালকদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বাংলাদেশি পাটবীজ আমদানিকারক, স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা। ১৪ দিন ওপারে আটকে থাকার পর উভয় দেশের সরকারি নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গত ৪ এপ্রিল শনিবার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা ৬১ ট্রাক পাটবীজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু পাটবীজগুলো খালাস করার পর থেকে চালক ও ট্রাকগুলো নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেনি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ট্রাক ও চালকদের নিচ্ছে না বলে জানান কোচবিহার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার। মোবাইল ফোনে উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকার অজুহাতের কথা বলে গাড়ি ও চালকদের নিতে দেরি হচ্ছে বলা হয়। কিন্তু ওই ৬১ ট্রাকচালক নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফেরত যেতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে ট্রাক ও চালকদের বাংলাদেশ থেকে দেশে এনে কোয়ারেন্টিনে রাখা যেতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য অনুরোধ সব পক্ষকেই করছি। বিষয়টি মানবিকভাবেই দেখা হোক।’ বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ ব্যবস্থায় গত ৪ এপ্রিল (শনিবার) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬১ ট্রাক আমদানি করা ভারতীয় পাটবীজ বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ওই ট্রাকগুলো থেকে পাটবীজ পণ্য খালাস করা হয়। এরপর ওই ভারতীয় ট্রাকগুলো এবং ট্রাকচালকরা পরদিন ভারতে ফেরত যেতে চাইলে বুড়িমারী জিরোপয়েন্টে আটকে দেয় বিএসএফসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দফায় দফায় দুই দেশের সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা আলোচনা করেও বিষয়টি সুরহা করতে পারেননি। এখন বুড়িগ্রাম স্থলবন্দর ইয়ার্ডের ভেতরে ট্রাকগুলো ও চালকদের রাখা হয়েছে।


করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হঠাৎ গত ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। এই কারণে কৃষিজাত পণ্যসহ পাটবীজ পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো ওপারে ভারতের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় আটকে ছিল এতোদিন, যা গত শনিবার (৪ এপ্রিল) উভয় দেশের সরকারি আদেশে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, পাবনার হাজী বীজ ভান্ডার, নিউ হাজী বীজ ভান্ডার, নীলফামারীর বিশ্বাস অ্যান্ড ব্রাদার্স, রায় সীড কোম্পানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঁখি সীড ভান্ডার, মীম বীজ ভান্ডার, ঢাকার জামাল সীড কোম্পানি, জেএফ এগ্রো লিমিটেড, কোয়ালিটি সীড কোং, রাসেল সীড কোং, বিকাশ এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব বীজ আমদানি করে। ঢাকার সিদ্দিক বাজার এলাকার মেসার্স রফিক এন্টারপ্রাইজ পাটবীজ আমদানিকারক আলমগীর মিয়া বলেন, ‘পাটবীজ রফতানি করে ডলার আয় করেছে ভারত সরকার। এখন গাড়ি ও চালকদের কেন ফেরত নিতে দেরি করছে? এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক নিয়মের মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে উভয় দেশের দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে বলে আমরা আশা করি। নইলে এই চালকদের খাওয়ানোর যে খরচ হচ্ছে, সব মিলিয়ে এই পাটবীজের দাম অনেক পড়ছে। পাটচাষি ও ব্যবসায়ীদের এই ভর্তুকি দিতে হবে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান চাই আমরা।’ বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী তাহাজুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘উভয় দেশের সরকারি বিধিমালা মেনেই পাটবীজগুলো আমদানি হয়েছিল। তাহলে ভারত কেন এখন গাড়ি ও চালকদের নিতে গড়িমসি করছে? বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমিত পেলে যে কোনও মুহূর্তে ট্রাকচালক ও গাড়িগুলো ফেরত পাঠানো হবে। বর্তমানে গাড়ি ও চালকদের স্থলবন্দর ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ইয়ার্ডের ভেতরেই তাদের স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা খাবার দিচ্ছেন। চালকরা নিজেরা রান্না করে খাচ্ছেন। বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ডিডি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘মানবিক কারণে এবং বর্তমান পরিস্থিতির কারণে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরেই ভারতীয় ট্রাক ও চালকদের রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মোতাহার হোসেন স্যার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ও সরেজমিনে এসেছিলেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন মানবিক কারণে চালকদের খাবার দিচ্ছেন। আশা করছি, দ্রুতই গাড়ি ও চালকদের ফেরত পাঠানো হবে।’ জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করছি শিগগিরই ভারতীয় ট্রাক ও চালকদের ফেরত নেবে বলে কোচবিহার জেলা শাসক (ডিএম) মোবাইলে জানিয়েছেন।’
Blogger দ্বারা পরিচালিত.