পশ্চিমবঙ্গ থেকেই মুজিবের আরেক খুনি গ্রেফতার, হিন্দু পরিচয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল বলে সন্দেহ



Odd বাংলা ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ঘাতক সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গে আটক বৃদ্ধের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রে খবর। সত্তরোর্ধ বয়সী এ বৃদ্ধই কি প্রকৃত ঘাতক রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন, তা নিশ্চিত করা বিষয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে  ডিএনএ পরীক্ষা করার পর তা হলফ করে বলা যাবে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধই শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন কি না, তা নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। সত্তরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধকে রোববার মধ্যরাতে উত্তর ২৪ পরগনার বেরি গোপালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের।’

এই সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৪৮ ঘণ্টা যৌথ জেরায় ধৃতকে মুজিব-ঘাতক বলেই মনে হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। কিন্তু তারপরও পরিচয় নিশ্চিত হতে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোসলেহ উদ্দিনের নিকটাত্মীয়দের ডিএনএ'র সঙ্গে বৃদ্ধের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পরিচয় নিশ্চিত না হলে ওই বৃদ্ধকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে কারণেই হস্তান্তরের গোটা বিষয়টি বেসরকারি বোঝাপড়ার স্তরে করা হয়েছে।’ গোয়েন্দাদের দাবি, পরিচয় নিশ্চিত না-হলে ওই বৃদ্ধকে যাতে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেই কারণেই হন্তান্তরের গোটা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের মধ্যে ছড়াছড়ি হলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ বা ভারত- দুই দেশের কোন দেশই স্বীকার বা অস্বীকার করছে না। মাজেদকে জেরার পরেই চার দশক ধরে গা ঢাকা দেওয়া মোসলেহ উদ্দিনের খোঁজ পায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এর পরেই শুরু হয় বাঙালির চোখে ঘৃণ্য এই খুনিকে বাগে আনার মাস্টারপ্ল্যান। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) খুনি মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার মতো মোসলেহ উদ্দিনও পশ্চিমবঙ্গে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে দাবি জানায় বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যার প্রেক্ষিতে তৎপরতা শুরু করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ টিম।

বাংলাদেশ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ জেলার ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়ায় লুকিয়ে ছিলেন কথিত মোসলেহ উদ্দিন। তার ছদ্মনাম সমীর দত্ত, পেশায় ইউনানি চিকিৎসক। তিনি চিকিৎসা বিষয়ে একটা বইও লিখেছেন। সেটি গত বছরের শেষদিকে প্রকাশ হয়েছে। বইয়ে নিজের নাম লিখেছেন দীপক চক্রবর্তী নামে। ওই ব্যক্তি সর্বশেষ উত্তর চব্বিশ পরগনায় ছোট্ট একটি ঘরে থাকতেন। বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, তার কেউ না থাকায় তাকে এই বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়। তবে ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত মাঝে মধ্যে তিনি ১০/১৫ দিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যেতেন। তিনি ফোন ব্যবহার করতেন না। তার কোন চিঠিও আসত না। প্রায় ১০ বছর এখানে বসবাস করেছেন। ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন। কলকাতার পুলিশ এখন সমীর দত্তের সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র খতিয়ে দেখছে, আসলেই তিনিই বাংলাদেশের খুনি মোসলেহ উদ্দিন কিনা?

সূত্রে আরও জানা গেছে, খুনি মোসলেহ উদ্দিনের গুলিতেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। এর মাত্র তিন মাস পরে ওই বছরই ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে সেনাদের যে দলটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং তিন মন্ত্রী মোহাম্মদ মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে গুলি করার পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে, তাতেও ছিল এই বর্বর ঘাতকের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট ২০০৯-এর নবেম্বরে মোসলেহ উদ্দিনসহ ১২ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখে। কিন্তু অতীতে কয়েকবার গোয়েন্দাদের জাল কেটে পালায় ধুরন্ধর এই ঘাতক মোসলেহ উদ্দিন।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া বন্ধে লকডাউনের মধ্যে সম্ভাব্য মোসলেহ উদ্দিনের খবর পায় বাংলাদেশি গোয়েন্দারা। এরপর দিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বলে নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা তথ্য সূত্র। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি উপশহর থেকে এই বৃদ্ধকে ধরে একটি গোপন জায়গায় জেরা শুরু করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ডেকে নেয়া হয় বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও। তার পরেই পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে সন্দেহভাজন এই মোসলেমউদ্দিনকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে। এখন ভারতের গোয়েন্দাদের হাতে আটক হওয়া যেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, প্রকৃত পক্ষেই সেই ব্যক্তিটিই খুনি মোসলেহ উদ্দিন খান কিনা তা ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রের দাবি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.