করোনা : নতুন বিশ্বে কে হারবে কে জিতবে?



Odd বাংলা ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের কালে ইতালির মানুষ আমাদের একটি প্রশ্ন ভাবতে শিখিয়েছে,- ‘সবকিছু কি সত্যি একদিন ঠিক হয়ে যাবে?’ তবে দূরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি বিবেচনা করলে করোনা-উত্তর পৃথিবীর জন্য এ প্রশ্নের উত্তর এখন অপরিণত বলেই মনে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো করোনা পরবর্তী বিশ্ব নিয়ে একটি পূর্বাভাস দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, ‘এ সময়টা আমাদের অনেক কিছু শেখাবে। অনেক দৃঢ় বিশ্বাসে ফাঁটল ধরবে এবং প্রত্যয় নড়বড়ে হয়ে যাবে। আমরা অনেক কিছু যা আগে অসম্ভব বলে ভাবতাম সেগুলো ঘটছে। পরদিন আমরা যখন জিতব, তখন আর আগের দিনটি ফিরে আসবে না, আমরা নৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হব। আমরা পরিণতিগুলো চিত্রিত করব, সব পরিণতি।’ ম্যাঁক্রো স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ম্যাঁক্রো গ্রুপের এক দল এমপি ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটের কাজও শুরু করেছেন। জার্মানিতে সাবেক সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা সিগমার গ্যাব্রিয়েল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বায়নের বিষয়ে সোজাসাপটা হবে। হংকংয়ে এক গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছে, ‘স্বাভাবিক অবস্থা আর ফিরে আসতে পারে না, কারণ প্রথমে স্বাভাবিকেই সমস্যা ছিল।’ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী ব্যবস্থার উপযোগী করে তুলতে শাসকদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে। আর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় শক্তিধরদের মধ্যে সম্পর্ক কখনোই ততটা অকার্যকর হয়নি। কোভিড-১৯ নাটকীয়ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, হয় আমরা একত্র হব অথবা আমরা পরাজিত হব।’ 

 তবে যতই পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার কথা বলা হোক না কেন, বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের আলোচনার সূত্রপাত সহযোগিতা নিয়ে নয়, বরং চীন বা আমেরিকায় করোনা–উত্তর কে নেতা হিসেবে আসবেন, তা নিয়ে। গার্ডিয়ানের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভাইরাস বিস্তারে অপরাধী না হয়ে বিশ্বের ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে চীন। বিজয়ীর দৌড়ে এটি তাদের কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। নতুন প্রজন্মের তরুণ চীনা কূটনীতিকরা তাদের দেশের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেমে পড়েছেন। অবশ্য তাদের এ আত্মপ্রচারকে ‘নির্লজ্জ’ বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। সাবেক ফরাসি রাষ্ট্রদূত মিশেল ডুকলস বলেছেন, ‘চীন তার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রচারের জন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়কে নির্লজ্জভাবে পুঁজি করছে।’ হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক তাত্ত্বিক স্টিফেন ওয়াল্ট মনে করছেন, চীন বিজয়ী হতে পারে। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে শক্তি ও প্রভাবকে পরিবর্তিত করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর সেরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং চীন তার প্রাথমিক ভুলগুলো শুধরে ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সংশয়যুক্ত এবং সম্ভবত তা পশ্চিমা ব্র্যান্ডের শক্তি দুর্বল করেছে।’ এই মুহূর্তে পরাজিতের তালিকায় নাম রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। দেনা–পাওনা নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের মধ্যে কুৎসিত লড়াই আরও বিস্তৃত হয়েছে। ডাচ আর জার্মানদের সন্দেহ, প্রত্যাখ্যাত ইউরোবন্ড তত্ত্বকে পুনারায় ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য করোনায় লোম্বার্ডির সংকটকে কাজে লাগাচ্ছে ইতালি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে এই ইস্যুটির ওপর জোর দেওয়ায় এই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ইইউ যদি ব্যর্থ হয় তবে এটি ভেঙে পড়তে পারে। পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তোনিও কস্তা ডাচ প্রধানমন্ত্রী ওপকে হোকেস্ট্রার ‘কুৎসি়ৎ’ মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। আবার স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যারাঞ্জা গঞ্জালেস সাফ বলেছেন, ‘পুরো জাহাজ যখন ডুবছে, তখন ফার্স্ট ক্লাস কেবিন তোমাকে সুরক্ষা দেবে না।’ অর্থাৎ নেদারল্যান্ডস বা জার্মানি করোনা মোকাবিলায় যতই ভালো করুন না কেন, ইউরোপের মধ্যে থেকে সেও বাঁচতে পাবরে না। এই মুহূর্তে ইউরোপের একমাত্র সান্ত্বনা হতে পারে আটলান্টিকের ওপারে প্রতিদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সন্ধ্যাকালীন সংবাদ সম্মেলনের বিশৃঙ্খলা দেখা। এটি মনে করিয়ে দেবে যৌক্তিক মানুষ যে কোনো কিছুর পরিকল্পনা করতে পারে-কেবল ব্যক্তিক্রম অযৌক্তিক প্রেসিডেন্ট।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.