জানেন মহাভারতেও ছিলেন লক্ষণ, রামায়ণ থেকে কুরুক্ষেত্রে গেলেন কী করে?



Odd বাংলা ডেস্ক: কে বলে লক্ষ্ণণ শুধু মহাভারতের চরিত্র? অনেকেই জানেন না যে মহাভারতেও ছিলেন লক্ষ্ণণ তবে এই লক্ষ্ণণ সেই লক্ষ্ণণ নন, অর্থাৎ মহাভারতের লক্ষ্ণণ আসলে রামের ভ্রাতা নয়। সে ছিল একজন কৌরব। এই লক্ষ্ণণ ছিল হস্তিনাপুরের রাজপুত্র, দুর্যোধন এবং তাঁর স্ত্রী ভানুমতীর ছেলে। দুর্যোধন-ভানুমতীর ছিল যমজ সন্তান। ছেলের নাম রেখেছিলেন তাঁরা লক্ষ্ণণ এবং মেয়ের নাম রেখেছিলেন লক্ষ্ণণা। মেয়ে লক্ষ্ণণার বিয়ে হয়েছিল কৃষ্ণের ছেলে শাম্ব-র সঙ্গে। দুর্যোধনের স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে মহাভারতে খুব বেশি বর্ণনা নেই। তবে মহাভারতের এই লক্ষ্ণণকে নিয়ে তেলেগু লোককথায় একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। গল্পটি বেশ মজার। কৃষ্ণের বড়ভাই বলরামের মেয়ে বৎসলার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল অর্জুনের ছেলে অভিমন্যুর। পাণ্ডবেরা বনবাসে যাওয়ার আগে থাকতেই এই বিয়ে ঠিক ছিল। কিন্তু পাণ্ডবেরা রাজ্য-ধনসম্পত্তি হারিয়ে যখন বনে বনে ঘুরছেন তখন এই বিয়ে নিয়ে বেঁকে বসলেন বলরামের স্ত্রী রেবতী। অভিমন্যু রাজপুত্র হলেও তখন তো তার রাজপাট কিছুই নেই। শেষমেশ এক বনবাসী পরিবারের হাতে মেয়েকে তুলে দেবেন বলরাম? বলরামের মেয়ে তো মথুরার রাজকুমারি না কি, প্রশ্ন তুললেন রেবতী। 


 স্ত্রীর এই কথাবার্তা শুনে বলরামও শেষ পর্যন্ত মেনেই নিলেন। কিন্তু কার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যায় তবে মেয়ের? তখন তড়িঘড়ি রাজপুত্র লক্ষ্ণণের সঙ্গে রাজকুমারি বৎসলার বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় দুর্যোধনের কাছে। এই প্রস্তাব দুর্যোধন সানন্দে গ্রহণ করেন বলাই বাহুল্য। বিয়ের সব তোড়জোড় যখন প্রায় শেষ তখনই কথাটা কানে যায় অভিমন্যুর। রাগে কাঁপতে কাঁপতে সে যায় ছোটমামা কৃষ্ণের কাছে। সে কৃষ্ণকে অনুরোধ করে ‘বড়মামা’ বলরামকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে লক্ষ্ণণের সঙ্গে বৎসলার বিয়ে ভেঙে দিতে। কিন্তু কৃষ্ণ তাকে জানান যে এ ব্যাপারে তাঁর কিছু করার নেই। সাহায্য যদি কেউ করতে পারে সে হল ঘটোৎকচ, ভীম ও হিড়িম্বার সন্তান এবং অভিমন্যুর তুতোভাই। কৃষ্ণের পরামর্শমতো অভিমন্যু যায় ঘটোৎকচের কাছে। সে তো ভাইয়ের সব কথা শুনে তেলেবেগুন। সাহায্য করার জন্য একপায়ে খাড়া। 

 বিয়ের দিন ঘটোৎকচ বৎসলার রূপ ধরে ঢুকে পড়ে বলরামের রাজ-অন্তঃপুরে। তার পর সুযোগ বুঝে বিয়ে করতে আসা দুর্যোধনপুত্র লক্ষ্ণণের সামনে স্বরূপ ধরে। লোককাহিনি অনুযায়ী, ঘটোৎকচ লক্ষ্ণণকে এমন ভয় দেখায় যে শেষমেশ জ্ঞান হারায় লক্ষ্ণণ এবং জীবনে আর কখনও বিয়ে করবে না বলে প্রতিজ্ঞাও করে। লক্ষ্ণণকে কাবু করার পরে ঘটোৎকচ আর সময় নষ্ট না করে বৎসলাকে কাঁধে তুলে সোজা পৌঁছে যায় বার্নাবত, যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিল অভিমন্যু। অতঃপর বৎসলা-অভিমন্যুর বিয়ে হয়। এই খবর যখন দুর্যোধনের কানে পৌঁছয় তখন রাগে ফেটে পড়েন তিনি। হয়তো কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হওয়ার পিছনে দুর্যোধনের এই পুরনো রাগও খানিকটা ইন্ধন জুগিয়েছিল। দুর্যোধনপুত্র লক্ষ্ণণ এই ব্যাপারে কতটা রাগ মনে পুষে রেখেছিল তা অবশ্য বলা যায় না। তবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সে মুখোমুখি হয়েছিল অভিমন্যুর। বিয়ের আসর থেকে বউকে নিয়ে চম্পট দেওয়া সেই ব্যক্তিকে সামনে পেয়ে হয়তো রে রে করে বেশ জোশের সঙ্গে যুদ্ধও করেছিল সে কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অভিমন্যুর হাতেই পরাস্ত হয় লক্ষ্ণণ। নাগাশিরাস্ত্র প্রয়োগ করে লক্ষ্ণণকে বধ করে অভিমন্যু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিবসে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.