চাণক্য নীতিতে কী নারীদের ক্রীতদাসী করে রাখার কথা বলা আছে?


Odd বাংলা ডেস্ক: প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান বিষয়ে প্রসঙ্গ উঠলে খানিকটা ধন্ধে পড়ে যেতে হয়। স্কুল জীবনে ভারতের ইতিহাস পড়তে গিয়ে জানতে হয়েছিল, প্রাচীন কালে এদেশে নারীর স্থান ছিল খুবই উচ্চে। গার্গী, লোপামুদ্রা, অপালা, বিশ্ববারা প্রমুখ বিদূষীর উদাহরণ তুলে সেই কথা প্রমাণ করেও দেন বই-লেখকরা। কিন্তু ইতিহাসের ছাত্ররা অনার্স স্তরে গিয়েই জানতে পারেন, সেকালে মোটেই নারীরা সম্মানজনক কোনও অবস্থানে ছিলেন না। কয়েকজন বিদূষীর অবস্থান দেখিয়ে সমাজের সামগ্রিক অবস্থাটা বোঝা কখনওই সম্ভব নয়। সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণা পরতে পরতে উন্মোচন করে প্রাচীন ভারতে নারীর ক্রমাগত অবদমনের ইতিবৃত্তকে, তুলে ধরে নারীর আস্টেস্পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা শৃঙ্খলকে। প্রাচীন ভারতে নারীর এই অবনমন ও অবদমনকে সবথেকে বেশি মাত্রায় তুলে ধরে ‘চাণক্য নীতি’-র মতো জনপ্রিয় টেক্সট। এই নীতিমালা কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য বিরচিত হোক বা না-হোক, এই টেক্সট যে আবহমান ভারতীয় মননের এক জটিল প্রতিচ্ছবি, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ‘চাণক্য নীতি’-তে মেয়েদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা আজকের দিনে পড়তে বসলে মাথা খারপ হতে বাধ্য।
‘চাণক্য নীতি’ অনুসারে—
•  আগুন, জল, নারী, বোকা লোক, সাপ এবং রাজপরিবারকে এড়িয়ে চলাই ভাল। (মুশকিল এখানেই। এই তালিকায় ‘নারী’ অন্তর্ভুক্ত হল কীভাবে?)
• ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্থ এবং নারী— দুই বিষয়কেই পরিহার বা পরিত্যাগ করা যেতে পারে। (টাকা আর নারী, চাণক্যের দৃষ্টিতে দুই-ই সমান।)
• এই নীতির একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, যে নারী তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়াই উপবাস করেন, তিনি তাঁরা স্বামীর আয়ুকে ধ্বংস করেন। (স্বামীর সাপেক্ষ অস্তিত্ব হিসাবেই নারীর অবস্থান।)  
• চাণক্য নীতি জানাচ্ছে— পিতল পরিষ্কার করে ছাই, তামাকে পরিষ্কার করে তেঁতুল, নারীকে পরিষ্কার করে ঋতুস্রাব, নদীর জলকে পরিষ্কার করে তার গতি।(মোটেই মেয়েদের পক্ষে সম্মানজনক নয় এমন ‘সেক্সিস্ট’ উক্তি।)
• আরও বলা হচ্ছে, ব্যবহার না করলে জ্ঞান নষ্ট হয়, অজ্ঞানতায় পুরুষ নষ্ট হয়, সেনাপতির অভাবে বাহিনী নষ্ট হয় এবং স্বামীর অভাবে নারী নষ্ট হয়। (আবার মেয়েদের স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার।)
• নারীর পরামর্শ গ্রহণ না করতে, নারীর সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ‘চাণক্য নীতি’।
• নারী নাকি বিশ্বস্ত হতেই পারে না।
• নারীর প্রকৃতিতেই নাকি সাতটি ‘দোষ’ বর্তমান— অসত্যভাষণ, নির্বুদ্ধিতা, হঠকারিতা, ছলনা, অর্থলিপ্সা, অপরিচ্ছন্নতা এবং নিষ্ঠুরতা। (এই মন্তব্যের পরে আর কী বাকি থাকে?)
• ‘চাণক্য নীতি’-র উপদেশ— নারীদের চার দেওয়ালের মধ্যেই রাখুন। বাইরে কদাচ নয়।
এই নীতিমালার এহেন পুরুষতান্ত্রিক চেহারার কারণ একটাই। সেটা সেকালের যুগধর্ম। এখানে কোনও ‘ডেরোগেশন’ খোঁজা ভুল হবে। সেই কালই এমনভাবে দেখতে শিখিয়েছিল নারীকে। এই দর্শনের পিছেন কাজ কেরছিল সেকালের অর্থনীতি, উৎপাদন সম্পর্ক, রাষ্ট্রকাঠামো ইত্যাদিও। ‘চাণক্য নীতি’ সেই অধিকাঠামোরই প্রতিফলন।  
Blogger দ্বারা পরিচালিত.