ক্যারম-দাবা খেলা, ফোন রিচার্জ আর ভরপেট খাবার দিয়ে ৩ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের পাশে কেরল সরকার


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: সারা দেশব্যাপী লকডাউন জারি হওয়ার ঠিক পরে অর্থাৎ ২৯ মার্চ কয়েকশো অভিবাসী শ্রমিক কোট্টায়ামের রাস্তায় সমবেত হয়েছিলেন। সেইসময়ে তাঁদের একটাই আর্জি ছিল তাঁরা বাড়ি ফিরতে চান। এই পরিস্থিতি কেরল প্রশাসনকে একটা বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের তাঁদের জন্য তৈরি করা শিবিরে ফিরে আসতে রাজি করান। 

কিন্তু দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে আচরণে এক কৌশলগত পরিবর্তন এনেছিল কেরলের সিপিএম-এর নেতৃত্বে পিনারাই বিজয়ন সরকার। কেরলের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সত্যজিৎ রাজন জানিয়েছেন, তাঁদের অসন্তুষ্টির অন্যতম কারণ ছিল খাবার- কুডুম্বশ্রী কমিউনিটি কিচেন যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছিল, তাতে একেবারেই সন্তুষ্ট ছিলেন না শ্রমিকরা। তাই তা বদলে অন্য চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের উত্তরভারতের ডাল, চাপাটি, আচার এবং চাল সরবরাহ করা হল, যাতে তারা কাঁচামালগুলি দিয়ে নিজেদের মতো করে রান্না করে নিতে পারেন। তেমনই কিছু কিছু জায়গায় একটু ভিন্ন স্বাদের রান্না করা খাবারও পরিবেশন করা হয়েছে, যেমন ঝাড়খণ্ড থেকে আগত শ্রমিকদের শিবিরে ছাতুর খিচুরি পরিবেশন করা হয়েছে। 

শুধু তাই নয় পিনারাই বিজয়ন সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের অন্যান্য প্রয়োজনের দিকেও যথেষ্ট নজর দিয়েছেন। নিয়ম মেনে সব শ্রমিককে স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং ওষুধ তো সরবরাহ করা হয়েছিলই, তাছাড়াও সরকার মনে করেছিল এই কঠিন পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণে শ্রমিকদের মোবাইল রিচার্জ করতে পরিষেবা প্রদানকারী নেটওয়ার্কদের একটা তহবিল প্রদান করছে সরকার। প্রতিটি শ্রমিক প্রতিমাসে ১০০-২০০ টাকার মোবাইল রিচার্জ করতে পারেন সরকারের সহায়তায়। এইসময়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে মোবাইল ফোনগুলি এখন তাঁদের প্রাণ। 

আর এইসব কৌশল যে ভালই কাজে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কারণ মুম্বই, সুরাট, দিল্লি, আহমেদাবাদ-সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যে অভিবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল সেরকম ছবি ২৯ মার্চের পর কেরলে আর দেখা যায়নি। 

মানবিকতাই সম্বল
সারা দেশের মধ্যে কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তৈরি ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কেরলে এই মুহূর্তে আটকে ৩ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক। তাঁদের জন্য রাজ্যে রয়েছে ১৮,৯১২টি ত্রাণ শিবির। 

শিবিরগুলিতে রিফ্রেশমেন্ট হিসাবে চা এবং বিস্কুট ছাড়াও সারাদিনে তিনবার খাবার দেওয়া হয়। পাশাপাশি শ্রমিকদের সময় কাটানোর জন্য তাঁদের দাবার বোর্ড, ক্যারম বোর্ডও দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আটকে থাকা শ্রমিকদের অভিবাসী শ্রমিক হিসাবে না বলে, 'অতিথি শ্রমিক' হিসাবেই সম্বোধন করছে কেরল সরকার। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.