‘মহাভারত’ কি সত্য ঘটনা? কী বলছে আজকের গবেষণা?
Odd বাংলা ডেস্ক: মহাকাব্যের ঐতিহাসিকতা নিয়ে বিতর্ক কোনও নতুন বিষয় নয়। ইউরোপে মহাকবি হোমারের লেখা ‘ইলিয়াড’, ‘ওডেসি’ নিয়ে য়েমন ইতিহাসবিদ-প্রত্নতাত্ত্বিকরা যুগে যুগে মাথা ঘামিয়েছেন, তেমনই আমাদের দেশের ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’ নিয়েও কম গবেষণা হয়নি। বহু কাল ধরে চর্চা বহমান রয়েছে ‘মহাভারত’-এর ঐতিহাসিকতা নিয়ে। সত্যিই কি ঘটেছিল কুকক্ষেত্র যুদ্ধ? কৃষ্ণ নামে সত্যিই কি কেউ রাজত্ব করতেন দ্বারকায়? কৌরব আর পাণ্ডবদের কথা কি পুরোটাই বানানো? নাকি সত্যই এই দুই কুল পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে ধ্বংস করে ফেলেছিল নিজেদের? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশেষজ্ঞরা কখনও প্রবেশ করেছেন ইতিহাসের আঙিনায়, কখনও প্রমাণ খুঁজেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানে, কখনও বা ভাষাতত্ত্বের সড়ক বয়ে অগ্রসর হয়েছেন।
কী বলছে এই সব প্রমাণ? নীচে তার মধ্যে থেকে কয়েকটি উল্লিখিত হল।
• মহাভারতকার বেদব্যাস স্বয়ং তাঁর রচনাকে ‘ইতিহাস’ বলেছেন। এখানে ‘ইতিহাস’-এর অর্থ— ‘এইসব ঘটেছিল’। যদি মাহাভারত কপোলকল্পনা হত, বেদব্যাস একে ‘মহাকাব্য’ বা ‘কথা’ বলে উল্লেখ করতেন।
• মহাভারতের আদিপর্বের ৬২তম অধ্যায়ে ভারত-রাজবংশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লিখিত হয়েছে। মনু থেকে ৫০ পুরুষ সেখানে উল্লিখিত। যদি মহাভারত কল্প-কথাই হতো, তা হলে এতো বিস্তারিত উল্লেখের কী প্রয়োজন ছিল?
• প্রত্নত্ত্বের সাক্ষ্যও মহাভারতের ঐতিহাসিকতাকে সমর্থন করছে। গুজরাতের সমুদ্রতলে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাচীন দ্বারকা নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে। পৌরাণিক বর্ণনার সঙ্গে সেই ধ্বংসাবশেষের মিল যথেষ্ট।
• মৌষল পর্বে দ্বারকা নগরীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে। প্রাচীন দ্বারকা আজ সমুদ্রে নিমজ্জিত।
• এমন ৩৫টিরও বেশি ভরাতীয় নগরীর কথা মহাভারতে রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে আরও বেশ কিছু জনপদেক সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
• মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে লিখিত রয়েছে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর অব্যবহিত পূর্বে কৃষ্ণ হস্তিনাপুরে গমন করেন কার্তিক মাসের সেই তিথিতে, যে দিন চন্দ্র রোহিনী নক্ষত্রে অবস্থান করছিলেন। পথে কৃষ্ণ বৃকস্থল নামে একটি জায়গায় বিশ্রাম নিতে থামেন। চন্দ্র তখন ভরণী নক্ষত্রে বিরাজ করছেন। যেদিন দুর্যোধনের পতন ঘটে, সেদিন চন্দ্র পূষা নক্ষত্রে অবস্তান করছেন। জ্যোতির্বদরা মহাভারতেরআনুমানিক কালের সঙ্গে এই সব উল্লিখিত তিথির সাযুজ্য পেয়েছেন।
• পুরাণগুলিতে মৌর্য্য, গুপ্ত এবং ইন্দো-গ্রিক রাজবংশগুলির স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এই রাজবংশগুলির ঐতিহাসিকতা মেনে নেওয়া হয় এই কারণেই যে, পুরাণের পাশাপাশি সমকালীন গ্রিক ঐতিহাসিকরা এই সর্থন করেছেন। গ্রিক আগমনের আগেকার রাজবংশগুলি সেই যুক্তিতে কি ‘অনৈতিহাসিক’? এই রাজবংশগুলিই মহাভারতে উল্লিখিত হয়েছে বার বার।
Post a Comment