সামাজিক গল্প: যোগবিয়োগ


সুব্রত পাঠক: অধীর, অ-ধী-র-
আমায় ডাকছো গোবিন্দদা?
হ্যাঁ হ্যাঁ তোকে নয় তো আবার কাকে ডাকছি? আমার পুজোর কাজ শুরু করেছিস? এখন তো ঘোর অমাবস্যা চলছে লেগেছে সেই দুপুর দুটোয়। 
কী ব্যাপার বল তো গোবিন্দদা-
আজ তোমাকে খুব খুশী খুশী দেখাচ্ছে ? মাথায় মাথায় বেশ চপ চপে সরষের তেল, মুখে পান, আর তাছাড়া আমার খেয়ালে এই প্রথম তোমাকে উদয়পুর কালিমন্দিরে পুজো দিতে আসতে দেখলাম। কিছু পেলে টেলে নাকি? আরে বোকা পুজো নয় মনস্কামনার পাঁঠা বলি দেব। তার সঙ্গে মায়ের জন্য বাতাসা, লাড্ডু, প্যাড়া এসবও এনেছি। 
ও তুমি কী এনেছো সেটা আমার প্রশ্ন নয়। আমার প্রশ্ন হল কী এমন পেলে যে এত পুজো দিতে এসেছ। তখন গোবিন্দ বলে দেখ অধীর এমন কিছু পায়নি। শুধু আন্নাকে পেয়েছি? 
আন্না? প্রশ্ন করে অধীর। উত্তরে গোবিন্দ বলে আরে তোর নতুন বৌদিরে বোকা। তারপর নিজে নিজেই হেসে বলে কী করব রে অধীর আমার বিছানায় পড়তে আর ১০ বছর বাকি । ষাট প্রায় শেষ হয়ে এল। তাই তার আগে কাজটা সেড়ে ফেললাম। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো লক্ষী লক্ষীই ছিল। 
অধীর প্রশ্ন করে মানে তুমি লক্ষী বৌদির কথা বলছো? উত্তরে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে গোবিন্দ আবার বলে চলে, হ্যাঁরে, ও চলে যাবার পর গ্রামের কোনও লোক আমার কোনও খোঁজখবর নিতনা।  এ দুনিয়াতে কেউ কারও নয়। তাই আমি সেদিনই ঠিক করেছিলাম বিয়ে আমাকে করতেই হবে। তাই সেদিনই আমি রাতে চুপি চুপি এসে মা কালীর কাছে মানত করেছিলাম যে আমার যদি বিয়ে হয়ে যায়, তাহলে জোড়া পাঁঠা দেব। সেই মনস্কামনা পূর্ণ হতেই আমি জোড়া পাঁঠা দিতে চলে এলাম আর কি। 


তা তুই তোর বৌদিক দেখতে চাইলিনা তো অধীর? অধীর একটু আমতা আমতা করে বলে না থাক। গোবিন্দ বলে না থাকবে কেন? বড় বৌদিতো মায়ের মতো, আই।    তাকিয়ে দেখ ওই যে সজনে গাছটা আছে ওটাতে হেলান দিয়ে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে? ওটাই তো তোর বৌদিরে। 
অধীর দেখে একটি প্রায় অষ্টাদশী মেয়ে, গায়ের রং শ্যামলা বরনের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গোবিন্দ আবার জিজ্ঞাসা করে ওঠে তা কেমন দেখলি অধীর? অধীর উত্তর দেয়। খুব ভালো হয়েছে গোবিন্দদা।
সবই মায়ের ইচ্ছে অধীর, বলে ওঠে গোবিন্দ। তা কোথায় বিয়ে করলে গোবিন্দদা ?
উত্তরে সে বলে মহদিপুর। অধীর বলে ম-হ-দি-পু-র, মানে যেখানে তোমার অনেক জমি আছে? গোবিন্দ বলে হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস।
 অধীর প্রশ্ন করে। তা কী কী যৌতুক পেলে গোবিন্দদা? উত্তরে গোবিন্দ বলে আমি আবার  কি নেব এই বয়সে। উল্টে তোর বৌদিকে দিয়েছি।  আমার ৩ বিঘা জমি লিখে দিয়েছি তোর বৌদিকে। 
এর কোথা থেকে কী যেন একটা হয়ে গেল। অধীর তো  প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। অগ্রহায়ন মাসের শেষের দিকে একদিন ঘুম থেকে উঠে অধীর শোনে গোবিন্দদা মারা গিয়েছে। সেকি! গোবিন্দদা সত্যিই মারা গিয়েছেন, বিশ্বাস করতে পারেনি অধীর। এই তো নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু হয়েছিল তাঁর।  সবাই বলছে বয়সের কারণেই স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু গ্রামেরই কানাফুসো শোনা গেল অন্য কথা। গোবিন্দদার সঙ্গে নাকি আন্না বৌদির বিচ্ছেদ হয়েছিল। আর সেই দুঃখেই গোবিন্দদা মানুষটা চলে গেলেন। তবে অনেকেরই ভিন্ন মত। বিচ্ছেদের কারণে নয় আসলে বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে তো তার ৩ বিঘা জমিটাও চলে গিয়েছিল, সেই দুঃখেই হার্ট অ্যাটাক করে গোবিন্দদা।

[এই গল্পের স্বত্ব oddbangla.com -এর। কপিরাইট ( Copyright Disclaimer Under Section 107 of the Copyright Act 1976) নিয়ম মোতাবেক বিনা অনুমতিতে এর ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ]

পরিবেশক: oddbangla.com 
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করন: Uro Digi Art
Blogger দ্বারা পরিচালিত.