এই জিনিসগুলি কখনও দান বা ধার করবেন না


Odd বাংলা ডেস্ক: ‘সনাতন ধর্ম’, যাকে আমরা হিন্দু জীবনধারা বলেই জানি, কতগুলো নৈতিক বিধিকে প্রযুক্ত রাখে। এই নৈতিক বিধিগুলো কখনও আহৃত হয়েছে ‘গীতা’ থেকে, কখনও বা ‘রামায়ণ’ বা ‘মহাবারত’-এর মতো মহাকাব্য থেকেও। কখনও বা এই বিধির উপরে যুক্ত হয়েছে স্মৃতিশাস্ত্রের নির্দেশ। কখনও বা লোকাচারকেই গ্রহণ করেছে সনাতন ধর্ম তার নৈতিক কোড হিসেবে। ‘বেদ’-এর কাল থকে সংগৃহিত হয়েছে এই নৈতিক বিধি। কোনও একটি মাত্র গ্রন্থে এদের পাওয়া যাবে না। এরা বেঁচে রয়েছে ভারতীয় জীবনধারার স্মৃতিরেখায়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মৌখিক পরম্পরায় হস্তান্তরিত হয়ে।
সনাতন ধর্মে ‘দান’ এক মহা পুণ্যকর্ম। বৈদিক পরম্পরা দানকে নিভৃতি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্পাদন করতে নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে এ-ও জানায়, নিজের অধিকারের শ্রেষ্ঠতম বস্তুটিকে দান করাই বিধেয়। কিন্তু এত সত্ত্বেও কয়েকটি বিশেষ বস্তুকে দান করতে নিষেধ করে সনাতন বিধান। বৈদিক পরম্পরা এক্ষেত্রে একটি শ্লোককে উদ্ধার করে— ‘লেখনী পুস্তিকা নারী পরহস্তম না দিয়তে’। কলম, বই এবং স্ত্রী পরহস্তে না প্রদানের এই বিধানের সঙ্গে পরে আরও দু’টি বিষয় যুক্ত হয়ছে লোকাচার থেকে। সব মিলিয়ে মোট ৫টি বস্তুকে দান অথবা ধার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় সনাতম জীবনধারা।
• লেখনী বা কলম—  কলম আমরা প্রায়শই ধার দিই। উপহারও তো দিই আকছার। ধার দেওয়া কলম প্রায়শই ফেরত আসে না। বৈদিক যুগে কলমকে অস্ত্র স্বরূপ জ্ঞান করা হতো। মনে রাখতে হবে, ‘রামায়ণ’-এ রাবণ-এর খড়্গের নাম ‘চন্দ্রহাস’, আবার কলমের প্রতিশব্দও ‘চন্দ্রহাস’। সেদিক থেকে দেখেলে কলম আমাদের কৃতকর্মের বাহন। নিজের কৃতকর্মের ভার অন্যের উপরে চাপানো অনৈতিক। আর যদি ‘অস্ত্র’ হিসেবে কলমকে দেখা যায়, তা হলেও তা অন্যের হাতে না দিতেই পরামর্শ দেয় বৈদিক পরম্পরা। তার মতে, কলম অর্জনের জিনিস। যে যার নিজের আয়ুধ অর্জন করে নি, এই ছিল সনাতন সমাজের নির্দেশ।
• পুস্তিকা বা বই— বই জ্ঞানের বাহন। বৈদিক যুগে পুস্তিকা ছিস হস্ত-লিখিত পুথি। বলাই বাহুল্য, তা সহজলভ্য ছিল না। একটি পুথি হারিয়ে গেলে তাকে আর পাওয়া যেত না। তাই হয়তো রচিত হয়েছিল এই বিধান। কিন্তু ক্রান্তদর্শী বৈদিক ঋষিরা এটা জানতেন, বই একবার হাতছাড়া হলে ফিরে আসতে চায় না। আর দানের ব্যাপারে মনে রাখতে হবে, অপাত্রে গ্রন্থদান কোনও কাজের কথা নয়। কাকে কী বই দান করছি, তা না জেনে সম্পাদন করা উচিত নয়। জ্ঞানও অর্জনের জিনিস। তাকে নিজেই অধিকার করতে হয়।
• স্ত্রী— এই বিধানে একটা লিঙ্গবৈষম্যের আভাস পাওয়া যায়। বৈদিক আমলে নারীকে ‘বস্তু’-র অতিরিক্ত কিছু মনে করা হত না, একথা সুকুমারী ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে রোমিলা তাপারের মতো ইতিহাসবিদ দেখিয়েছেন। এই বিধানের পিছনে  নারীর প্রতি পুরুষের অধিকার ব্যক্ত রয়েছে। স্ত্রীকে পরহস্তে দান করা কোনও কাজের কথা নয় কেন, তা আলাদা করে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না।
পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় আরও দুই বস্তু, ভারতীয় পরম্পরায় এ দু’টি আমরা দান করা থেকে বিরত থাকি।
• রুমাল— একান্ত ব্যক্তিগত এই সামগ্রীর সঙ্গে যুক্ত থাকে আমাদের বেশ কিছু বিষয়। রুমালের সঙ্গেই থাকে আমাদের পয়সা রাখার ব্যাগ বা অন্য ব্যক্তিগত সামগ্রী। অন্যকে নিজের ব্যবহৃত রুমাল বা নতুন রুমালও দান করতে নিষেধ করে পরম্পরা এই কারণেই যে, আমাদের দেহের ইতিবাচক ও নেতিবাচক শক্তিগুলি অন্যের হাতে গিয়ে পড়ে। তাতে আর যা-ই হোক, শুভ কিছু ঘটে না।
• ব্যবহৃত পোশাক— দানের মধ্যে শ্রদ্ধা থাকাটা বাঞ্ছনীয়, এমন বিধান দেয় বৈদিক পরম্পরা। ব্যবহৃত ও জীর্ণ পোশাক দানের ভিতরে কোনও শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয় না। তা ছাড়া ব্যবহৃত পোশাককে কাজে লাগিয়ে ক্ষতিকারক অভিচার করতে পারে কেউ, এই বিশ্বাসও এর পিছনে কাজ করে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.